সুপার ওভারে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না দেখে বিস্মিত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও
সুপার ওভারে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না দেখে বিস্মিত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও

আকিলেরও প্রশ্ন—সুপার ওভারে রিশাদ কেন নয়

চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সোমবার গভীর রাতে ঢাকায় নেমে হোটেলে উঠতে উঠতে ভোর। মঙ্গলবার দুপুরেই মাঠে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ জয়ের নায়ক সেই আকিল হোসেনই। কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর ওরকম রুদ্ধশ্বাস একটা ম্যাচ, তবু ম্যাচ শেষে মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথা হাসিয়েছে উপস্থিত সবাইকেই। তার মধ্যেই আকিল প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা আর মিরপুরের উইকেট নিয়েও।

বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটা আজ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে। ৬ বলে ১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে বাংলাদেশ সাইফ হাসান আর সৌম্য সরকারের পর সবাইকে অবাক করে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নাজমুল হোসেনকে।

আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। ম্যাচে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিল রিশাদ। তাকে সুপার ওভারে পাঠায়নি! বাউন্ডারির ছোট পাশটায় সে মারতে পারত, দুটি ছক্কা তো ওদিক দিয়েই মেরেছিল।
আকিল হোসেন, স্পিনার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশ দলের এমন সিদ্ধান্ত বিস্মিত করেছে আকিলকেও, ‘আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। ম্যাচে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিল রিশাদ, ১৪ বলে ৩৬ করেছে। তাকে সুপার ওভারে পাঠায়নি! বাউন্ডারির ছোট পাশটায় সে মারতে পারত, দুটি ছক্কা তো ওদিক দিয়েই মেরেছিল। আমরা সবাই কিছুটা অবাক হয়েছি, কিন্তু এ সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষেই এসেছে। রিশাদ লম্বা, হাতে মার আছে, কিন্তু তারা তাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি!’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনার আকিল হোসেন

রিশাদকে কেন সুপার ওভারে পাঠানো হলো না, সেই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে গিয়েছে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সৌম্য সরকারের কাছেও। বেশ কয়েকবার ‘কোচ–অধিনায়কের’ সিদ্ধান্ত বলে তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই তিনি করেছেন।

তবে শেষ পর্যন্ত সৌম্য জানিয়েছেন, বাঁহাতি নাজমুলকে তিনে পাঠানোর কারণ নাকি সুপার ওভারে বোলার বাঁহাতি আকিল ছিলেন বলে, ‘এখানে বাঁহাতি স্পিনার বল করছিল। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান (নাজমুল) যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। এটাই তাদের (কোচ–অধিনায়ক) মনে হয়েছে যে বাঁহাতি গেলেই ভালো হবে দলের জন্য।’

সুপার ওভারের প্রথম দুই বলেই ওয়াইড আর নো দেন আকিল। ১ বল থেকেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৪ রান। এর মধ্যে একটি ফ্রি হিট পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য। সুপার ওভারে ৩ বল খেলে তিনি করেন মাত্র ৩ রান।

ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটা এসেছে সৌম্যর ব্যাট থেকে

নিজের এই ব্যর্থতার দায়ও স্বীকার করে নিয়েছেন এই ওপেনার, ‘বলতে পারেন আমি ব্যর্থ হয়েছি। বাঁহাতি স্পিনার ছিল, আমার নিজেরও আত্মবিশ্বাস ছিল একটা বাউন্ডারি এখান থেকে আদায় করতে পারব। এটাও ঠিক যে উইকেটটা ওরকম ছিল না, ছক্কা বা বাউন্ডারি মারার মতো। বলটাও অনেক পুরোনো হয়ে গিয়েছিল। ৫০ ওভারের পরের বল, মারলেও যাচ্ছিল না।’

ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সৌম্য দিয়েছেন ভবিষ্যতের বার্তাও, ‘আসলে বড় হিট করতে গেলে উইকেটের একটা সাহায্য লাগে। বল একটু আস্তে আসছিল এবং টার্নও ছিল অনেক বেশি। আগামী দিনে যদি কখনো এ রকম উইকেট থাকে, অবশ্যই ওরকমভাবে অনুশীলনও করতে হবে যে এই উইকেটে কীভাবে ছক্কা মারতে হবে।’

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম টিভিটা ঠিকঠাক আছে কি না, কারণ আমার মনে হচ্ছিল হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। আমি ভেবেছি টিভির রং চলে গেছে বা এমন কিছু। উইকেট পুরো কালো ছিল। ভেবেছি, নিশ্চয়ই টিভিতে কোনো সমস্যা হয়েছে! আমি একটু অবাকও হয়েছিলাম।
আকিল হোসেন, স্পিনার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মিরপুরের এই উইকেটে ছক্কা মারার সেই প্রস্তুতি কেন এবারই নেওয়া গেল না, সেই প্রশ্নে সৌম্য বলেছেন সময়স্বল্পতার কথা। তবে স্বাগতিক দলের এমন উইকেট নিয়ে কাল মজাই করে গেছেন আকিল। প্রথম ওয়ানডের সময় স্কোয়াডেই ছিলেন না তিনি। দেশে ওই ম্যাচটি আকিল দেখেছিলেন টিভিতে।

নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টাই করেছে বাংলাদেশ

আকিল সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেই হাসির রোল পড়ে গেল সংবাদ সম্মেলনকক্ষে, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম টিভিটা ঠিকঠাক আছে কি না, কারণ আমার মনে হচ্ছিল হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। আমি ভেবেছি টিভির রং চলে গেছে বা এমন কিছু। উইকেট পুরো কালো ছিল। ভেবেছি, নিশ্চয়ই টিভিতে কোনো সমস্যা হয়েছে! আমি একটু অবাকও হয়েছিলাম।’

কাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উইকেটের রং কিছুটা বদলেছে। কিন্তু আচরণ থেকেছে একই রকম স্পিন সহায়ক। ৫০ ওভারের পুরোটাই স্পিনারদের দিয়ে করিয়ে তাতে সফল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু তবু আকিল বলে গেছেন—ব্যাট আর বলের সমান লড়াই হলেই তিনি বেশি উপভোগ করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ভাবনায় তো যেকোনো কৌশলে শুধুই জয়, যদিও কাল কাজে লাগেনি কোনো কৌশলই।