৬ অক্টোবর বিসিবি নির্বাচন
৬ অক্টোবর বিসিবি নির্বাচন

বিসিবির নির্বাচন বয়কট করবে ১০–১২টি ক্লাব

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে আবারও নাটকীয় মোড়! নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে অন্তত ১০-১২টি ক্লাবের প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র। তাঁরা আগামীকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে আজ রাতে জরুরি সভায় বসছেন ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। তফসিল অনুযায়ী আগামীকালই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন, একই দিনে প্রকাশ করার কথা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এর আগে আজ বিকেলে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট থেকে উঠে আসা বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলর বা প্রতিনিধির নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি সৈয়দ হাসান যুবায়েরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

এতে ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে এই ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের ভোট প্রদান এবং প্রার্থী হওয়ার পথে বাধা তৈরি হলো। বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের দুটি ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি ও এক্সিওম ক্রিকেটার্স থেকে বিসিবির পরিচালক পদে নির্বাচন করার কথা ছিল বর্তমান বোর্ডের মিডিয়া কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান ও বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরুর।

সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সময় বিতর্কিত ১৮টি ক্লাব লিগ না খেলেই তৃতীয় বিভাগ বাছাই পার হয়েছিল। তিনটি ক্লাব পরে আবার তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নেমে যাওয়ায় এদের মধ্যে কাউন্সিলর হওয়ার মতো ক্লাব ছিল ১৫টি। কিন্তু গত ১৩ আগস্ট দুদকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রকাশ্য অনুসন্ধানেরও সুপারিশ করে তারা।

বর্তমান বোর্ডের মিডিয়া কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমানের ক্লাব ক্রিকেট একাডেমি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত

এ কারণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের দেওয়া খসড়া ভোটার তালিকায় এই ১৫টি ক্লাবকে রাখা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে আপিলের সুযোগ ছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শেষে পরদিন বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবকে রেখেই ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।

ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, অভিযোগ প্রমাণিত না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। অভিযোগ যেহেতু এখনো প্রমাণিত হয়নি, তাদের যেন নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনও সেটি বিবেচনা করেই তাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় রেখেছিল।

বিএনপির চারজন নেতার ছেলেকে সুযোগ দিতে গিয়ে কয়েকজন প্রকৃত ক্লাব সংগঠককে বাদ দিয়ে ৯ জনের প্যানেল করার চিন্তা করেন তামিম ইকবাল। ক্লাবগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এই সিদ্ধান্ত।

যদিও সূত্র জানিয়েছে, এই ১৫টি ক্লাবকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় রাখার পেছনে কাজ করেছে সরকারপন্থীদের সঙ্গে বিএনপিপন্থীদের বিশেষ সমঝোতা। তাতে ঠিক হয় ক্লাব ক্যাটাগরির ১২টি পরিচালক পদের তিনটি সরকারপন্থীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকি ৯টি পদ পাবেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালসহ বিএনপিপন্থীরা।

কিন্তু এই সমঝোতার কারণে ক্লাব সংগঠকদের প্যানেলে থাকার পথ সংকুচিত হয়ে যায়। বিএনপির চারজন নেতার ছেলেকে সুযোগ দিতে গিয়ে কয়েকজন প্রকৃত ক্লাব সংগঠককে বাদ দিয়ে ৯ জনের প্যানেল করার চিন্তা করেন তামিম ইকবাল। ক্লাবগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এই সিদ্ধান্ত। বাদ পড়া পরিচালকেরা তখন এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন, ক্ষুব্ধ ক্লাব কাউন্সিলরদের অবস্থান চলে যায় তামিমদের বিপক্ষে।

আজ নির্বাচনে ১৫টি ক্লাবের অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ

পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল রাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আবারও সভায় বসেন ক্লাব সংগঠকেরা। ক্রীড়া উপদেষ্টাকে তাঁরা জানিয়ে দেন, ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে তিনটি পদ ছাড়া সম্ভব নয়। ১২টি পদেই নির্বাচন করবেন তামিমপন্থীরা। ক্লাব ক্যাটাগরির কাউন্সিলরদের মধ্যে পরিচালক হয়ে বোর্ডে আসার কথা ছিল ক্রীড়া উপদেষ্টার পছন্দের তিন কাউন্সিলর সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, আমজাদ হোসেন ও মেজর ইমরোজ আহমেদের (অব.)।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্লাব সংগঠকদের অবস্থান বদলে ক্রীড়া উপদেষ্টাও জানিয়ে দেন, বিসিবির নির্বাচনে তিনি তাঁর মতো এগোবেন। এরপরই আজ নির্বাচনে ১৫টি ক্লাবের অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন ফারুক।