বোল্ড হওয়ার আগে আজ মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন জাকের আলী। তবে সিরিজসেরার পুরস্কার জাকেরের হাতেই উঠেছে
বোল্ড হওয়ার আগে আজ মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন জাকের আলী। তবে সিরিজসেরার পুরস্কার জাকেরের হাতেই উঠেছে

টি–টোয়েন্টি সিরিজ

ধবলধোলাই নয়, উল্টো ধোলাই

পাকিস্তানকে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই করার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। এবার টি–টোয়েন্টিতেও সেই সুযোগ এসেছিল। কিন্তু হলো না।

ম্যাচটার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ ছিল দুটি কারণে।

প্রথমত, বাংলাদেশের সামনে পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ধবলধোলাই করার হাতছানি, তা–ও তিন ম্যাচের সিরিজে। টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ও এবারই তাদের বিপক্ষে প্রথম। সেটিকে ধবলধোলাইয়ে অনূদিত করা গেলে তো একেবারে সোনায় সোহাগা!

দ্বিতীয়ত, পুরো এশিয়ার ক্রিকেটই কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দর্শক হয়েছিল এ ম্যাচের। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সভা শেষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বাসে চড়ে এসিসির সদস্যরা মাঠে আসেন, এসিসির প্রধান মহসিন নাকভি আসেন ভিন্ন গাড়িতে। দর্শক হয়ে তাঁরা দেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের তুমুল জনপ্রিয়তা। এসিসির সদস্যদের সঙ্গে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে বাড়তি আকর্ষণ ছিলেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামের আমন্ত্রণে খেলা দেখতে আসা এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী ও বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক। আগের রাতে এসিসির নৈশভোজেও আমিনুলের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন তিনি।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্স থেকে বাংলাদেশ–পাকিস্তান শেষ টি–টোয়েন্টি উপভোগ করেছেন এসিসি ও পিসিবি প্রধান মহসিন নাকভি

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেরও (পিসিবি) প্রধান নাকভির মনে অবশ্যই পাকিস্তানের জয় দেখার আশা ছিল। এসিসির বাকি সদস্যরা বাংলাদেশ-পাকিস্তান তৃতীয় টি-টোয়েন্টি উপলক্ষে দেখে গেলেন এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই গ্যালারিভর্তি দর্শকের কলরব।

আর গ্যালারিভর্তি দর্শক দেখল সিরিজে প্রথমবারের মতো মিরপুরের উইকেটের ব্যাটিংবান্ধব হয়ে ওঠা এবং সেই উইকেটে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবের ম্যাচে বাংলাদেশের ৭৪ রানের হার। ধবলধোলাইয়ের আশা ভুলে তাই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো লিটন দাসের দলকে।

শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের হারটা যে রকম বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়ে এল, সিরিজ জয়ের আনন্দ কিছুটা ফিকেই হয়ে যাওয়ার কথা তাতে। ধবলধোলাইয়ের ম্যাচে উল্টো যেন ধোলাই হয়ে গেল নিজেরাই! প্রথম দুই ম্যাচে সিরিজ জিতে যাওয়াতেই কিনা কাল দলে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান—কেউই ছিলেন না দলে।

পাকিস্তানকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান (বাঁয়ে) ও সাইম আইয়ুব

সেটিই হয়ে গেল বুমেরাং! যাঁরা ছিলেন, বড় রান তাড়া করতে গিয়ে তাঁরাও ফিরলেন উইকেট বিলিয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার তানজিদ হাসানকে হারিয়ে শুরু। ২২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর অবশ্য পঞ্চম ওভারে ৩ বলের মধ্যে জাকের আলী আর মেহেদী হাসান বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি পেসার সালমান মির্জার ভেতরে ঢোকানো দুর্দান্ত ২ বলে।

২৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বলতে গেলে ওখানেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৮ নম্বরে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অপরাজিত ৩৫ রানের নিঃসঙ্গ লড়াই যথেষ্ট ছিল না ১৭৮ তাড়া করে জেতার জন্য। একপর্যায়ে তো মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের (৭০) না হলেও মিরপুরের উইকেটে সর্বনিম্ন রানের (৭৬) রেকর্ডটা বুঝি নতুন করেই লিখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সাইফউদ্দিনের অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংসের সুবাদে হারের ব্যবধান কিছুটা কমাতে পেরেছে বাংলাদেশ

৪১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও সেটি হয়নি দুই ছক্কা আর দুই চারে সাইফউদ্দিনের ৩৩ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের কারণেই। সাইফউদ্দিন দুটি ছক্কাই মেরেছেন তালাতের করা ১৬তম ওভারের প্রথম ২ বলে। ওই ওভারেরই চতুর্থ বলে শেষ ব্যাটসম্যান শরীফুল ইসলামের লং অন দিয়ে মারা ছক্কায় তিন অঙ্কে যায় ইনিংসটা। ১৬.৪ ওভারে ১০৪ রানে অলআউট বাংলাদেশের ২০ রানই আসে তালাতের ওই ওভারে।

পাকিস্তানের দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান আর সাইম আইয়ুব মিলে পাওয়ার প্লেতে ৫৭ রান তুলে অষ্টম ওভারের শেষ বলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে গড়েছেন ৮২ রানের জুটি। পরের ১২.১ ওভারে আরও ৬ উইকেট হারিয়ে আসে মাত্র ৯৬।

মিরপুর শেরেবাংলায় ১৫০ পেরোনো সব টি–টোয়েন্টি ম্যাচেই জিতেছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের ‘১৭৮/৭’ ইনিংসটাকে তবু রান উৎসব বলার কারণ, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া ২১টি টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে যে ছয়বার দেড় শ ছাড়ানো ইনিংস হয়েছে, তার মধ্যে পাকিস্তানের এই ১৭৮-ই সর্বোচ্চ।

দুই ওপেনার ফারহানের ৪১ বলে ৬৩ আর সাইমের ১৫ বলে ২১ রানের পর অন্য ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট ইনিংসেও ছিল ঝোড়ো হাওয়া।

তিনে নামা মোহাম্মদ হারিস (১৪ বলে ৫) আর ছয়ে নামা হোসেন তালাতেরই (৪ বলে ১) শুধু রানের চেয়ে বল বেশি। হারিস দুবার ‘জীবন’ও পেয়েছেন। ওপেনিংয়ের পর বড় জুটি আর না হলেও পাকিস্তানের রানের ঊর্ধ্বগতি তাই কখনোই থামেনি। ব্যাটসম্যানরা আউটও হয়েছেন মারতে গিয়ে।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাসকিন আহমেদের ৩৮ রানে ৩ উইকেট ছাড়া আলাদা করে বলতে হবে দুই বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফেরা নাসুম আহমেদের কথা। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের প্রথম ২টি উইকেটই নিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

পুরস্কার বিতরণীর সময় বৃষ্টি চলে এসেছে। তাই মাথার ওপর ছাতা ধরে ক্রীড়া উপদেষ্টা ও এসিসি সভাপতির কাছ থেকে ট্রফি নিতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে

রাতে ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামে প্রবল বৃষ্টি। ছাতা মাথায় পুরস্কার দিতে বেশ কসরতই করতে হয়েছে এসিসি প্রধান মহসিন নাকভিকে। তাতেও তাঁর খুশিই থাকার কথা। এসিসির সভা করতে এসে একটি হলেও জয় নিয়ে তো ফিরতে পারছেন পিসিবি প্রধান!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৮/৭ (ফারহান ৬৩, হাসান ৩৩, নেওয়াজ ২৭, আইয়ুব ২১; তাসকিন ৩/৩৮, নাসুম ২/২২, সাইফউদ্দিন ১/২৮, শরীফুল ১/৩৯)।

বাংলাদেশ: ১৬.৪ ওভারে ১০৪ (সাইফউদ্দিন ৩৫*, মিরাজ ১০, নাঈম ১০; মির্জা ৩/২০, নেওয়াজ ২/৪, ফাহিম ২/১৩)।

ফল: পাকিস্তান ৭৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাহিবজাদা ফারহান।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: জাকের আলী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ২–১ ব্যবধানে জয়ী।