
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবলের আদলে একসময় হতো চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টি, যেটিকে ক্লাব ক্রিকেটের বিশ্বকাপ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
বিশ্ব ক্রিকেটের ‘তিন মোড়লের’ দুটি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং তাদের সঙ্গে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টি আয়োজন করত। কিন্তু স্টেডিয়ামে দর্শকখরা, ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের অভাব ও পৃষ্ঠপোষকদের অনাগ্রহের কারণে ২০১৪ সালের পর তা আর হয়নি।
প্রায় এক যুগ পর আবারও ক্লাব ক্রিকেটের বিশ্ব আসর ফেরানোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ নামে নতুন রূপে ফিরতে পারে এই আসর। ক্রিকেট–বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের আরেক প্রভাবশালী বোর্ড ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গুল্ড।
তিনি বলেছেন, ‘এটা আমাদের পরিকল্পনাতেই আছে। নিঃসন্দেহে কোনো এক সময় সময়ে পুরুষ–নারী উভয়ের জন্য একটি বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ হবে। এটাই পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ।’
২০০৮ সালে আইপিএলের পথচলা শুরু। তখন থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটের হিসাব–নিকাশ বদলে যেতে থাকে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে শুরু হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।
২০০৯ সালে আলোর মুখ দেখে চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে যেমন শীর্ষ পাঁচ দেশের (ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্স) লিগ থেকে বেশি ক্লাব অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টিতে তেমন ভারতের আইপিএল থেকে ন্যূনতম তিনটি (সর্বোচ্চ চারটি) দল খেলার সুযোগ পেত।
কিন্তু এই টুর্নামেন্ট আইপিএলের মতো ততটা আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি। ফলে ছয় বছরে ছয়টি (২০০৯ থেকে ২০১৪) আসর হওয়ার পর এটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
২০০৯ সালে রিচার্ড গুল্ড ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সমারসেটের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সেই বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টির উদ্বোধনী আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তখনকার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন ডেকান চার্জার্সকে হারিয়ে চমক দেখায় গুল্ডের সমারসেট।
গুল্ডের এখন মনে হচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগ টি–টোয়েন্টি যে সময় থেকে হওয়া উচিত ছিল, এর অনেক আগে শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি, ‘ওই টুর্নামেন্ট সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। বাণিজ্যিকভাবে যে প্রত্যাশা ছিল, তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। তবে সেটি খুব ভালো আয়োজন ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রে এ মাসেই ৩২ দল নিয়ে বৃহৎ পরিসরে শুরু হচ্ছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। ২০২৮ সাল থেকে রাগবি ক্লাব বিশ্বকাপও চালু হবে। ফুটবল–রাগবির দেখানো পথ ধরে হতে পারে ক্লাব ক্রিকেটের বিশ্বকাপও। সেখানে হয়তো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দলকেও দেখা যাবে।
তবে বিশ্ব ক্রিকেট ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে উপযুক্ত সময় বের করা। এখন বছরের সব মাসেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অথবা ফ্র্যাঞ্জাইজি লিগ থাকে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে ভারতীয় মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অংশগ্রহণ। বর্তমানে আইপিএলের ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে ৮টি এবং মেয়েদের আইপিএলের (ডব্লুপিএল) ৫ ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে ৪টিরই অন্য দেশের লিগে দল আছে। তাই তাদের সম্মতি ছাড়া এই উদ্যোগ সফল হবে না।
গত বছর অবশ্য ছোট পরিসরে ক্লাব ক্রিকেটের একটি বৈশ্বিক আসর শুরু হয়েছে, যার নাম গ্লোবাল সুপার লিগ (জিএসএল)। পাঁচ দেশের পাঁচ দল নিয়ে সেই টুর্নামেন্টে বসেছিল গায়ানায়, চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্স।
আগামী ১০ থেকে ১৮ জুলাই জিএসএলের দ্বিতীয় আসরও গায়ানায় হওয়ার কথা। এবারও খেলবে রংপুর রাইডার্স।
টুর্নামেন্টের অন্য চার দল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি–টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন দুবাই ক্যাপিটালস, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হোবার্ট হারিকেন্স, নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশের বর্তমান শিরোপাজয়ী সেন্ট্রাল স্ট্যাগস এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) দল ও স্বাগতিক গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স।