ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব
ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব

সূর্যকুমার বললেন ‘ওরা ট্রফি নিয়ে পালিয়ে গেছে’

‘ট্রফি নিয়ে পালিয়ে গেল ওরা’—দুবাইয়ে গত পরশু রাতে এশিয়া কাপ ফাইনালের পর যে অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেটিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব।

ঘটনার শুরু এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের ৫ উইকেটে জয়ের পর। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসার পর ভারতীয় দল জানায়, তারা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে রাজি নয়। নাকভি পাকিস্তানের স্বরাস্ট্রমন্ত্রীও।

নিজেদের এই অবস্থান জানানোর পর প্রায় এক ঘণ্টা মাঠে অপেক্ষা করেও ট্রফি হাতে পায়নি সূর্যকুমারের দল।। কারণ, ভারতীয় দলের কথা শুনে বেঁকে বসেন নাকভিও। তাঁর কথা, এসিসি সভাপতি হিসেবে তিনিই পুরস্কার তুলে দেবেন, নয়তো দেওয়া হবে না। এর ফলে ক্রিকেট ইতিহাসেই সম্ভবত প্রথমবার কোনো চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি মাঠে আসার পরেও সেটি হাতে পায়নি!

অদ্ভুত এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমটিকে সূর্যকুমার বলেছেন, ‘আমরা তো ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ করে বসে ছিলাম না। কাউকে অপেক্ষায়ও রাখিনি। ওরাই ট্রফি নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমি সেটিই দেখেছি। আমি জানি না, কিছু লোক আমাদের ভিডিও করছিল। আমরা তখন দাঁড়িয়েই ছিলাম। ভেতরে যাইনি।’

এ ঘটনায় গুঞ্জন উঠেছিল, সূর্যকুমারের দল বিসিসিআই কিংবা দেশের সরকারের নির্দেশে পিসিবি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ট্রফি নেয়নি; কিন্তু সূর্যকুমার তা উড়িয়ে দেন। এই সিদ্ধান্ত মাঠেই হয়েছে জানিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক , ‘প্রথমেই পরিষ্কার করে বলি, পুরো টুর্নামেন্টে সরকার বা বিসিসিআই—কেউই আমাদের বলেনি যে যদি কেউ ট্রফি দেয়, আমরা নেব না। মাঠে আমরা নিজেরাই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা (এসিসি কর্মকর্তারা) তখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর আমরা নিচে। আমি শুধু দেখেছি, তারা মঞ্চে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। কী নিয়ে বলছিল, সেটি আমি জানি না। এরই মধ্যে গ্যালারি থেকে কিছু মানুষ দুয়ো দিতে শুরু করল। তারপর দেখি, তাদের একজন প্রতিনিধি ট্রফিটা নিয়ে চলে গেল।’

পিসিবি প্রধান মহসিন নাকভি

সূর্যকুমার বলেন, ম্যাচের পর তাঁর সতীর্থরা ফোন আনতেও ড্রেসিংরুমে যাননি। দলের সাপোর্ট স্টাফ আর ম্যাসাজম্যানই ফোনগুলো মাঠে এনে দেন, ‘সবার মনোযোগ তখন মাঠের আনন্দে। পুরস্কার জেতা অভিষেক শর্মা, কুলদীপ যাদব, শিভম দুবে, তিলক বর্মাকে পুরো দল দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে উল্লসিত হয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল। এটাই আমাদের দলের সংস্কৃতি।’

নাকভি এসিসি চেয়ারম্যানের বিধি অনুযায়ী ট্রফি দেওয়ার বিষয়ে অনড় থাকেন। তখন উপস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সাবেক নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার সাইমন ডুল ঘোষণা দেন, ‘আমাকে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল জানিয়েছে যে আজ রাতে ভারতীয় দল তাদের পুরস্কার গ্রহণ করবে না। সুতরাং এখানেই ম্যাচ–পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হচ্ছে।’

এর আগে টুর্নামেন্ট শুরুর আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সূর্যকুমারকে নাকভি ও পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা গিয়েছিল, যার ছবি ও ভিডিও তখন ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। তবে খেলা শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। গ্রুপ পর্বে ভারত–পাকিস্তান প্রথম ম্যাচের টসে সালমানের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান সূর্যকুমার। ম্যাচ শেষে তাঁর সতীর্থরাও পাকিস্তান দলের সঙ্গে হাত মেলাননি। পুরো টুর্নামেন্টেই পাকিস্তানের বিপক্ষে একই রুটিন চলেছে। প্রথম ম্যাচ জয়ের পর সূর্যকুমার সেই জয় উৎসর্গ করেছিলেন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতির উদ্দেশে।

ট্রফি ছাড়াই উদ্‌যাপন করেছে ভারত

সুপার ফোরে মুখোমুখিতে হারিস রউফ আলোচনায় আসেন বিমান ভূপাতিতের অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে। আইসিসি পরে সূর্যকুমার ও রউফ দুজনকেই ম্যাচ ফির ৩০ শতাংশ জরিমানা করে। তবে নাটক চরমে ওঠে পরশু রাতে ভারতের ট্রফি ছাড়া উদ্‌যাপনের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে।

ঘটনা অবশ্য তখনো শেষ হয়নি। ভারত–পাকিস্তান দুই দলই নিজেদের ম্যাচ ফি অনুদান হিসেবে দান করার ঘোষণা দেয়। সূর্যকুমার ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই অর্থ ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে দেওয়ার কথা জানায়। পাকিস্তান দল জানায়, তারা ম্যাচ ফি দেবে বেসামরিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের।

নিজেদের ম্যাচ ফি দিয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যায় সূর্যকুমার বলেন, ‘জেতার পর যখন ড্রেসিংরুমে গেলাম, বসে ছিলাম। মাথার ভেতর অনেক কিছু ঘুরছিল—আমি কী করতে পারি। এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি, সে পরামর্শ দেয় আমি এটা (ম্যাচ ফি দান) করতে পারি। আমি তখনই বললাম, ঠিক আছে। আমার মনে হলো, এটাই সঠিক সময়। আর দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা তো আছেই। যদি এটা ছোট কোনো অবদানও হয় আর আমি যদি করতে পারি, তবে কেন নয়? এটা আমার ভেতর থেকেই এসেছে। সুযোগ পেলেই আমি এমন কাজ করব। মানুষ কত কিছু করছে—নিঃস্বার্থভাবে করছে—যাদের নামও কেউ জানে না। তাদের তুলনায় আমাদেরটা আসলে কিছুই না।