আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কা–আফগানিস্তান ম্যাচে চোখ বাংলাদেশের।
আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কা–আফগানিস্তান ম্যাচে চোখ বাংলাদেশের।

আফগানিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচে চোখ থাকবে বাংলাদেশেরও

‘আপনি খুশি তো?’ এক দিন আগে ম্যাচ জিতে আসার পর যেকোনো দলের কোচের উত্তরই এই প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ হওয়ার কথা। কিন্তু মুখে সহজাত হাসিটা রেখেও ফিল সিমন্স তা বলতে পারলেন না গতকাল। বলবেন কী করে, এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ জিতেও বাংলাদেশের ভাগ্যটা যে এখনো ঝুলে আছে!

আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেওয়ার স্বস্তি সঙ্গী করেও তাই তাঁর উত্তর, ‘কাল (আজ) রাতের আগে কি খুশি হওয়ার সুযোগ আছে, ওদের ম্যাচটা হলে তবেই বলতে পারব খুশি কি না!’ আজ আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে আসলেই খুশি হওয়ার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। তারা সুপার ফোরে যাবে কি না, এই ম্যাচ শেষেই তা ঠিক হবে। আফগানিস্তান হেরে গেলে সহজ, সোজা সুপার ফোরে বাংলাদেশ। জিতে গেলে কষতে হবে নানা সমীকরণ।

ঝুলে থাকা ভাগ্য নিয়েই গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ দল আবুধাবি ছেড়ে দুবাইয়ে গেছে। গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই তারা খেলেছে এই শহরে, গত দিন দশেক তাদের সব গল্পও লেখা হয়েছে এখানেই। অনুশীলন, ম্যাচ, অতৃপ্তির জয়ের পর বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে হারিয়ে টিকে থাকা—পুরো পথটাই বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে আবুধাবিতে। তবে আজ একই শহরে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেওয়া ম্যাচটা তারা দেখবে ১৫০ কিলোমিটার দূরের দুবাই শহরে বসে।

আজ আফগানিস্তান হারলে সুপার ফোরে যাবে বাংলাদেশ।

গতকাল দুপুরেই বাংলাদেশ দল আবুধাবি ছেড়ে দুবাইয়ে গেছে। সুপার ফোরে উঠলেও আবুধাবিতে আর কোনো ম্যাচ খেলতে হবে না তাদের। জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের একটিই ম্যাচ আছে, সেটি হবে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দল আর ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের মধ্যে। বাংলাদেশের যেহেতু ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হওয়ার সুযোগ নেই, দুবাইয়ে বসেই তারা চোখ রাখবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচে। এরপর আগামীকাল তারা দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথ ধরবে, নাকি আইসিসি একাডেমি মাঠে অনুশীলনে নামবে, সেটাও তারা জানবে সেখানেই।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অম্লমধুর অভিজ্ঞতাই হয়েছে বাংলাদেশের। হংকংয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু, যে জয়ে রান রেট খুব একটা বাড়িয়ে নিতে না পারার অতৃপ্তি ছিল। এরপর শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা, পরশু রাতে আফগানিস্তানকে হারিয়ে যেটি কিছুটা কমিয়েছে লিটন দাসের দল।

দল হিসেবে দারুণ ছন্দে আছে শ্রীলঙ্কা।

তার আগে বাংলাদেশ দলকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কায় জিতে আসা সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের কথা। আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর টিম মিটিংয়ে এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে ফিরে আসার সব পথই খোলা আছে। এশিয়া কাপ খেলতে আসার আগে ক্রিকেটাররা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যের কথাই বলেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা?

দল–সংশ্লিষ্ট একজন অবশ্য বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর অনেক কথা হচ্ছিল। কিন্তু ক্রিকেটাররা একদমই ভেঙে পড়েননি। যদি তাঁরা ভেঙে পড়তেন, তাহলে কী এভাবে ফিরে আসতে পারত!’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারা ওই ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা ছিল বাজে শুরু। ২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে রান ছিল শূন্য। ৬ বল খেলে সেই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া তানজিদের আফগানদের বিপক্ষে ফিফটি করাকেও উদাহরণ হিসেবে টানেন তিনি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর তানজিদও বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের কঠিন স্মৃতিটাকে দূরে সরিয়ে রেখেই মাঠে নেমেছিলেন তাঁরা, ‘অতীতে যেটা হয়েছে, সেটা তো আর ফেরানো যাবে না। নতুনভাবেই তাই শুরু করেছি ম্যাচটা।’ কথাটা যখন তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশ দল তখনও জানত না, তাদের সুপার ফোরে যাওয়ার সমীকরণটা শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে।

ম্যাচের পর টিম অ্যানালিস্টের কাছ থেকে সেই হিসাবটা জেনে নেন প্রধান কোচ সিমন্স। তাঁর কাছ থেকে খেলোয়াড়েরাও জানতে পারেন, কী অঙ্ক কষতে হবে তাঁদের। সেটা জেনে বেড়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা আরও বড় ব্যবধানে না হওয়ার আফসোস।

তানজিদও বলেন, ‘আমাদের জন্য ভালো হতো হয়তো ব্যবধান বড় হলে। হয়নি, এখন কিছু করার নেই। কারণ, আমাদের এই ম্যাচ জিততেই হতো। ম্যাচটা জিতেছি, এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।’

সুপার ফোরে যেতে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আপাতত আর কিছু করার নেই। তবে এটা ঠিক, আজ শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের সবচেয়ে মনোযোগী দর্শক হবেন তাঁরাই। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে গতকাল সংবাদমাধ্যমে কথা বলা নাসুম আহমেদ তো বলেই দিলেন, তাঁরা নাকি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের ওপর।