Thank you for trying Sticky AMP!!

অতি আত্মবিশ্বাসই ডুবিয়েছে লঙ্কানদের

ফাইনাল ঘিরে যে প্রত্যাশা, সেটির ধারেকাছেও গেল না। ক্রিকেটে যে এমনও হয়, আমরা আরেকবার দেখলাম।

টসটা জেতা কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য ভালোই ছিল। এ উইকেটে শেষ পর্যন্ত বোলাররা সহায়তা পায়, ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়ে। টস তাই শ্রীলঙ্কার পক্ষেই গিয়েছিল। কিন্তু টসের পর তো আসলে কিছু জিতল না। আবার এটা স্বীকার করতেই হবে, ভারতের বোলিং লাইনআপ বেশ ভয়ংকর। বিশেষ করে জসপ্রীত বুমরা যেভাবে শুরু করল, সেটিই শ্রীলঙ্কাকে বেশি চাপে ফেলে দিয়েছিল। প্রথম ২-৩ ওভার বুমরা দারুণ ছিল।

সিরাজ যখন এল, শ্রীলঙ্কা একটু বেপরোয়া ছিল বলব। সম্প্রতি এত ভালো খেলেছে বলে হয়তো ওদের পাল্টা আক্রমণের একটা মানসিকতা ছিল। অতি আত্মবিশ্বাস এসে গেছে কোনোভাবে—কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যাবে, কোনো না কোনোভাবে একটা জুটি হয়ে যাবে, ২৩০-৪০ করে ফেলবে। কিন্তু সেটির জন্য যে পরিশ্রম করতে হবে, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন—সেটি যতক্ষণে অনুধাবন করেছে, তার আগেই উইকেট পড়ে গেছে।

ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা

বল সুইং করছে, ভালো হচ্ছে—এগুলো বিবেচনায় আনলে একটু সময় কাটানোর চেষ্টা করত ক্রিজে। পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা কম করত। অবশ্য পাল্টা আক্রমণ দিয়ে এটি বোঝাচ্ছি না যে শ্রীলঙ্কা অনেক আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে। কিন্তু এটি ওদের মাথায় ছিল বলে মনে হয়েছে। এমন মানসিকতার কারণে দু-তিনটি উইকেট গেছে, যেগুলোতে শট না খেলে ছেড়ে দিতে পারত বা নিচে খেলতে পারত। উইকেটটাও এমন কঠিন কিছু ছিল না।

Also Read: রোহিত বললেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ জেতার পর আতশবাজি ফোটাও’

এ মাঠে অনেক বড় স্কোর করতে হবে, সে লক্ষ্য নিশ্চয়ই ছিল না। দু-একটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মাথা একটু নিচু করে থাকা, মাটি কামড়ে থাকার ব্যাপারটা করা উচিত ছিল। এ টুর্নামেন্টে কিন্তু ওরা আগে এমন করেছে। এ ম্যাচে সেটি একেবারেই করতে পারেনি। ওদের মধ্যে বোধ হয় ওই ব্যাপার কাজ করেছে, ‘আমরাও কম না, আমরাও চ্যাম্পিয়ন, আমরাও বড় দল।’ সেটিই বোধ হয় হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। চাপ নিয়েছে বেশি, খেই হারিয়ে ফেলেছে তাতে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে হারের পর ভারতও চাপে ছিল, ফলে সিরিয়াস ছিল অনেক। কোনো সুযোগই দেয়নি।

এমনিতে সিরাজ অসাধারণ বোলিং করেছে। শ্রীলঙ্কার ব্যাকফুটে যাওয়ার ব্যাপারটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। শুধু যে সুইং করিয়েছে তা না, সিমও করিয়েছে। ভেতরে নিয়েছে বল, বের করে নিয়েছে। ব্যাটসম্যানকে একেবারে স্বস্তিই দেয়নি। পান্ডিয়াও পরে এসে বুঝেছে কোন লেংথে করতে হবে। আমার মনে হয়, এটি এমন একটা দিন—যতক্ষণে বোঝা যায় কী ঘটছে, ততক্ষণে সব শেষ। ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশেরও এমন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার দিনে।

এ নিয়ে অষ্টমবার এশিয়ান ক্রিকেটের সেরা হলো ভারত

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘উই আর হোয়াট উই রিপিটেডলি ডু’। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা অনেকগুলো ম্যাচ টানা জিতেছে। এ ম্যাচের পারফরম্যান্স মাথায় থাকবে না, তা নয়; তবে বিশ্বকাপে গিয়ে হয়তো ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু অন্য দলগুলো জানল, শ্রীলঙ্কার মধ্যে এই ব্যাপার আছে। গত কয়েক দিনে শ্রীলঙ্কার অবস্থান যেখানে গিয়েছিল, সেখানে আর থাকল না।

Also Read: এশিয়া কাপের ফাইনালে রেকর্ড ভাঙল যত

আগেই বলেছিলাম, এ টুর্নামেন্টে একচেটিয়াভাবে কেউ সেভাবে খেলতে পারেনি। আর ফাইনালে দারুণ অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স দেখা গেল। শ্রীলঙ্কার দর্শকদের জন্য যা ছিল খুবই পীড়াদায়ক। টুর্নামেন্টের মাঝপথেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে এসিসির একটা দুর্বলতা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত ফাইনালটা ওই দুই দলের হলো না, যে ফাইনালটা হলো সেটাও প্রত্যাশার বিপরীত। বাইরে থেকে যত কিছুই করা হোক না কেন, দিন শেষে খেলাটা মাঠেই হয়।

✍️ নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ