উৎপল শুভ্রর লেখা

ওয়ানডের যে ১০টি রেকর্ড (হয়তো) ভাঙবে না কোনো দিন

রেকর্ড নাকি হয়ই ভেঙে যাওয়ার জন্য। তারপরও কিছু রেকর্ড থাকে, যা কোনো দিন ভাঙবে বলে বিশ্বাস হতে চায় না। ওয়ানডে ক্রিকেটের এমন সব রেকর্ড থেকে ১০টি বেছে নিয়েছেন উৎপল শুভ্র।

১. শচীন টেন্ডুলকারের ১৮,৪২৬ রান

ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকার

রেকর্ডটির বয়স প্রায় ২৫ বছর। ক্রমে তা বাড়বে, হয়তো বাড়তেই থাকবে। একসময় আর এই রেকর্ড ভাঙা নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না। আশির দশকে রেকর্ডটা প্রায় সাত বছর ভিভ রিচার্ডসের অধিকারে ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ডেসমন্ড হেইন্স তা কেড়ে নিয়ে প্রায় আট বছর এর মালিক হয়ে থেকেছেন। ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে হেইন্সের রেকর্ড ভাঙলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। দুই বছরও স্থায়ী হলো না সেই গৌরব। শচীন টেন্ডুলকার সেই যে মুকুটটা মাথায় পরলেন, এখনো সেটি তাঁর মাথায়ই। চিরদিনই তা থাকতে পারে—এমন ভাবার কারণ, নিকট ভবিষ্যতে এই রেকর্ডের জন্য হুমকি হতে পারেন, এমন কেউই দৃশ্যপটে নেই। বিরাট কোহলি একটা সময় প্রবল সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। সেই সম্ভাবনার মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করার সময় এসে গেছে। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে বিরাট কোহলি এখন তিন নম্বরে। টেন্ডুলকার আর তাঁর মাঝখানে কুমার সাঙ্গাকারা (১৪২৩৪)। টেন্ডুলকারের সঙ্গে কোহলির রানের ব্যবধান ৪২৪৫ রান। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়া কোহলি এখনো ওয়ানডে ছাড়েননি। তবে তিনি নিজেও মনে হয় না এখন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখেন। এখনো খেলছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোহলির পর সবচেয়ে বেশি রান রোহিত শর্মার। ১১১৬৮ রান নিয়ে তিনি ১০ নম্বরে। টি-টোয়েন্টির দাপটে মাঝেমধ্যেই ওয়ানডের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেভাবে প্রশ্ন ওঠে, তাতে টেন্ডুলকারের ৪৬৩ ম্যাচ খেলার মতো প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার রানের রেকর্ডও নিশ্চিত অমরত্ব পেয়ে গেছে।

২. মুত্তিয়া মুরালিধরনের সবচেয়ে বেশি উইকেট (৫৩৪)

ওয়ানডেতে উইকেট নেওয়ার এমন উদ্‌যাপন ৫৩৪ বার করেছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন

শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে মুত্তিয়া মুরালিধরনের একটা মিল আছে। টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই যেমন সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড টেন্ডুলকারের, বোলিংয়ে এই যুগল মুকুট মুরালিধরনের মাথায়। ২০১১ সালে মুরালি ওয়ানডে ছেড়েছেন ৫৩৪ উইকেট নিয়ে। ওয়ানডেতে পাঁচ শতাধিক উইকেট আছে আর একজনেরই। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ওয়াসিম আকরামের রেকর্ডই ভেঙেছিলেন মুরালি। এর আগে কপিল দেবের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে প্রায় ১৫ বছর এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন পাকিস্তানের বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। ওয়ানডেতে প্রথম ৪০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও তাঁর। পরে মুরালির আগে ও পরে ৪০০ উইকেট নিয়েছেন ওয়াকার ইউনিস (৪১৬) ও চামিন্ডা ভাস (৪০০)। দুজনই যে অনেক আগে খেলা ছেড়েছেন, তা তো আপনি জানেনই। এখন খেলছেন, এমন বোলারদের মধ্যে কেউই মুরালির রেকর্ডের জন্য হুমকি নন। সবচেয়ে বেশি ৩১৭ উইকেট রাজনৈতিক কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নির্বাসিত সাকিব আল হাসানের। সাকিবকে বাইরে রাখলে আসবেন মিচেল স্টার্ক, যাঁর উইকেটসংখ্যা মাত্র ২৪৪। ‘মাত্র’ বলা হচ্ছে মুরালির রেকর্ড উইকেটের সঙ্গে পার্থক্যের কারণে। মুরালির রেকর্ড হয়তো কোনো দিনই ভাঙবে না বলার কারণও এ থেকে পরিষ্কার।

৩. রোহিত শর্মার ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি

তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পর রোহিত শর্মা

প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখতে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৩৯ বছর। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একসময় অকল্পনীয় যে কীর্তির প্রথম রূপকার শচীন টেন্ডুলকার। অভাবনীয় কোনো কিছু একবার হয়ে গেলে তখন তা হতেই থাকে। ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এরপর একে একে আরও ১১টি ডাবল সেঞ্চুরি দেখে ফেলেছে ওয়ানডে ক্রিকেট, যা করেছেন নয়জন ব্যাটসম্যান। ডাবল সেঞ্চুরি আর ব্যাটসম্যানের সংখ্যা মিলছে না রোহিত শর্মা একাই তা তিনটি করে ফেলায়। ২০১৩ সালে টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর শেবাগের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। পরের বছরই তা করে ফেলেন আবার। ২০১৭ সালে করেন তৃতীয়টি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য সেই ২৬৪ রানের ইনিংস। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের এই রেকর্ডও কোনো দিন ভাঙবে কি না, আলোচনা হতে পারে এ নিয়েও। তবে তিন ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডকে মোটামুটি অমরই বলে ফেলা যায়। আর কারও যে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরিও নেই।

৪. চামিন্ডা ভাসের ম্যাচসেরা বোলিং (৮/১৯)

৮ উইকেট নেওয়ার ম্যাচে চামিন্ডা ভাস

রেকর্ডটির দুই যুগ পূর্তি হবে আগামী ডিসেম্বরে। ২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর চামিন্ডা ভাস এই রেকর্ড করার আগে চারজন বোলার ৭ উইকেট নিয়েছিলেন, এরপর নিয়েছেন আরও ১১ জন। আগের চারজনের মধ্যে দুজন অষ্টম উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, পরে তিনজন। আগের দুজনের কথা আগে বলে নিই। ১৯৯১ সালে ভারতের বিপক্ষে শারজার ফাইনালে প্রথম ৮ উইকেটের ৭টিই নিয়েছিলেন আকিব জাভেদ, অন্য উইকেটটি পড়েছিল রানআউটে। পরের ২টি উইকেটের ১টিও অবশ্য পাননি। আকিবের মতোই আরেক পাকিস্তানি ওয়াকার ইউনিসও ৮ উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। ভাসের ওই রেকর্ডের মাস ছয়েক আগে লিডসে ইংল্যান্ডের প্রথম ৭টি উইকেটই নিয়েছিলেন এই ফাস্ট বোলার। সপ্তম উইকেটটি নিয়েছিলেন নিজের দশম ওভারের চতুর্থ বলে। অষ্টম উইকেটটি নিতে তাঁর হাতে ছিল মাত্রই ২টি বল। ২০০৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা ও অ্যান্ডি বিকেল এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিরও সুযোগ ছিল ৮ উইকেট নেওয়ার। কিন্তু ভাসকে ছোঁয়া হয়নি কারোরই। চামিন্ডা ভাস কিন্তু ইনিংসের ১০ উইকেটই নিয়ে ফেলার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কলম্বোতে জিম্বাবুয়ের প্রথম ৮ উইকেটই তাঁর, অন্য প্রান্ত থেকে বোলিং করা আরেক বাঁহাতি পেসার নুয়ান জয়সা ৭ ওভার বোলিং করেও উইকেটের দেখা পাননি। নিজের অষ্টম ওভারে ভাস অষ্টম উইকেট নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া বল তুলে দেন মুত্তিয়া মুরালিধরনের হাতে। মাত্র ৪ বলেই বাকি ২ উইকেট তুলে নেন মুরালি। জিম্বাবুয়ে ৩৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় ভাস আর বোলিং করারই সুযোগ পেলেন না। এত বছর ধরে রেকর্ডটি ভোগ করতে করতে সেই দুঃখ হয়তো তিনি ভুলেই গেছেন!

৫. বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার টানা ২৫ জয়

১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত টানা তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া

ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ রাজত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই রেকর্ড। ১৯৯৯ থেকে টানা তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে পরের দুটি, অর্থাৎ ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অপরাজিত থেকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ‘টাই’–এ শেষ হওয়া এজবাস্টনের সেই মহাকাব্যিক সেমিফাইনালের পর লর্ডসের ফাইনাল থেকে ছুটতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার জয়রথ। শেষ পর্যন্ত যা থামে ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে। টানা জয়ের ধারা অবশ্য থেমে যায় এর আগেই। সেটি কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায়। বৃষ্টি বাগড়া না দিলে হয়তো রেকর্ডটি আরও অবিশ্বাস্য রূপ নিত। কারণ, পরের দুই ম্যাচই জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তারপরও যা হয়েছে, সেই রেকর্ড ভাঙা অন্য কোনো দলের জন্য প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। বিশ্বকাপে টানা ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও হয়তো তা–ই!

৬. বাংলাদেশের টানা ৪৭ ম্যাচ জয়হীন থাকা

১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডেতে টানা ৪৭ ম্যাচে জয়হীন বাংলাদেশ হেরেছিল কানাডার কাছেও

১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট-বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। যে জয়ের বড় ভূমিকা ছিল পরে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়াতেও। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পরের জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় পাঁচ বছর। ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের আগে টানা ৪৭টি ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো জয় পায়নি। হেরেছে এর ৪৫টিই। বাকি দুটি ম্যাচে যে হারতে হয়নি, সেই কৃতিত্ব বৃষ্টির। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০২ সালে চট্টগ্রাম ও ২০০৩ বিশ্বকাপে বেনোনিতে ওই দুই ম্যাচেও বাংলাদেশ পরাজয় একরকম নিশ্চিতই ছিল। টানা ৪৭টি ম্যাচ জয়হীন থাকার এই রেকর্ড গড়তে নিজেদের রেকর্ডই ভেঙেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম জয় পাওয়ার আগে বাংলাদেশ হেরেছিল নিজেদের খেলা প্রথম ২২টি ম্যাচেই।

৭. জোয়েল গার্নারের সেরা ইকোনমি রেট (৩.০৯)

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার জোয়েল গার্নার

নাম ছিল তাঁর ‘বিগ বার্ড’। আসলেই ‘বিগ’। উচ্চতা ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। তাহলে বুঝুন, কত উঁচু থেকে নেমে আসত বল। মাঝেমধ্যেই তা বিধ্বংসী ইয়র্কার হয়ে, কখনোবা ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়ায় ভয়ের স্রোত ছড়ানো বাউন্সারের রূপ নিয়ে। ৯৮ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৪৬টি। তবে এতে জোয়েল গার্নারের মাহাত্ম্য পুরোপুরি বোঝা যাবে না। তাঁর বলে রান নেওয়ার চেয়ে কঠিন কাজ আর ছিল না। যে কারণে কমপক্ষে ১০০০ বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড এখনো তাঁর। উইকেটপ্রতি রান খরচ মানে বোলিং গড়ও তাঁরই সবচেয়ে কম (১৮.৮৪)। ওয়ানডে অনেক দিনই বদলে গেছে, টি-টোয়েন্টির প্রভাবে আরও বেশি। রানের জোয়ারের এই সময়ে গার্নারের এই দুই রেকর্ড তাই কোনো দিন ভাঙবে বলে মনে হয় না। অন্তত ইকোনমি রেটের রেকর্ডটা তো নয়ই।

৮. সেঞ্চুরি ছাড়া মিসবাহ-উল–হকের সবচেয়ে বেশি রান (৫১২২)

২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ছেন পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ–উল–হক (বাঁয়ে)

ওয়ানডেতে ৫ হাজারের বেশি রান অথচ একটিও সেঞ্চুরি নেই—অবিশ্বাস্য এই রেকর্ড পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান মিসবাহ-উল–হকের। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৪২টি। দুবার গেছেন ৯০-এর ঘরেও কিন্তু সেঞ্চুরি আর পাওয়া হয়নি। ৯০-এর ঘরের দুটি ইনিংসেই আবার অপরাজিত ছিলেন। এর প্রথমবার সেঞ্চুরি পাওয়ার ভালোই সম্ভাবনা জেগেছিল। ২০১১ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেটে ২৬২ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানের যখন জয়ের জন্য আর ১৩ রান লাগে, সেঞ্চুরি করতে মিসবাহর লাগে ৭ রান। কে ভেবেছিল, মাত্রই ব্যাটিংয়ে নামা সোহেল তানভীর সাউদির পরের ওভার থেকে একাই ১৪ রান তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেবেন! এর দুই বছর পর সেঞ্চুরির আরও কাছে গিয়েছিলেন। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিসবাহকে ৯৬ রানে রেখে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। মিসবাহ ফিফটি করার আগেই তো পড়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের ৬ উইকেট। সেঞ্চুরি ছাড়া সবচেয়ে বেশি রান করার এই রেকর্ডে মিসবাহর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই। ৩৭১৭ রান নিয়ে তাঁর পরে আছেন আরেক পাকিস্তানি ওয়াসিম আকরাম। ভবিষ্যতেও মিসবাহর এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবেন বলে মনে হয় না।

৯. অধিনায়ক হিসেবে রিকি পন্টিংয়ের ২৩০ ম্যাচ

২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে টসের আগে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক রিকি পন্টিং (ডানে)

ওয়ানডেতে খেলেছেন ৩৭৫টি, এর ২৩০টিতেই তিনি অধিনায়ক। কার সাধ্য রিকি পন্টিংয়ের এই রেকর্ড ভেঙে দেয়! যাঁরা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, তাঁদের কেউই আর খেলায় নেই। পন্টিং যাঁর রেকর্ড ভেঙেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের সেই স্টিভেন ফ্লেমিং অধিনায়কত্ব করেছেন ২১৮ ম্যাচে। ওয়ানডে অধিনায়কদের ‘টু হানড্রেড ক্লাবে’ সদস্য আর একজনই—ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি। যিনি ওয়ানডেতে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিক ২০০ ম্যাচে। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে পন্টিংয়ের আরও অনেক কীর্তি আছে। ক্লাইভ লয়েডের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি জয় পাওয়ার রেকর্ডও তাঁর। তিনটি বিশ্বকাপে (২০০৩, ২০০৭, ২০১১) ২৯টি ম্যাচে টস করতে নেমে জিতেছেন এর ২৬টিতেই। এই রেকর্ড ভাঙাও সহজ নয়। তবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ডটি ভাঙা আরও কঠিন, হয়তো অসম্ভবই।

১০. ফিল সিমন্সের ০.৩০ ইকোনমি রেট

ফিল সিমন্স যখন বোলার

দলে প্যাট্রিক প্যাটারসন ও কেনি বেঞ্জামিনের মতো জেনুইন ফাস্ট বোলার আছেন। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন কেন কার্টলি অ্যামব্রোসের সঙ্গে মিডিয়াম পেসার ফিল সিমন্সকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছিলেন, তা একটা রহস্য বটে। পরে যা মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে প্রমাণিত। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে ১০ ওভারের ৮টিই মেডেন, মাত্র ৩ রান দিয়ে সিমন্সের ৪ উইকেট। সেই ৪ উইকেটও প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনকে আউট করে। ওভারপ্রতি রান দশমিক ৩০। ওয়ানডেতে পুরো ১০ ওভার বোলিং করে এর চেয়ে কম রান দেওয়ার এই রেকর্ড অক্ষত আছে প্রায় সাড়ে তিন দশক। যা ক্রমে বাড়তেই থাকবে বলে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া যায়। এত বছরে কাছাকাছি এসেছিলেন শুধু একজনই। ১৯৯৯ সালে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কার্টলি অ্যামব্রোস ১০ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৫ রান। ওভারপ্রতি রান দশমিক ৫০। এখানে অ্যামব্রোসের সঙ্গে বিষেণ সিং বেদির নামটাও যোগ করে দেওয়া যায়। ভারতীয় বাঁহাতি স্পিনারও পুরো কোটা শেষ করেছিলেন ওভারপ্রতি দশমিক ৫০ রান দিয়ে, সেটিও আবার ১২ ওভার। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ যখন ছিল ৬০ ওভারের ম্যাচ, পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে বেদির বোলিং বিশ্লেষণ ছিল: ১২-৮-৬-১। বাংলাদেশের বর্তমান কোচের সবচেয়ে কিপটে বোলিং ওয়ানডেতে অমরত্ব পেয়ে যাওয়া আরেকটি রেকর্ড।