
সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে উঠে যাওয়ার সময় লিটন দাসের পিঠ চাপড়ে দিলেন সালমান আগা। ‘ওকে কঠিন প্রশ্ন করুন…’—যাওয়ার সময় পাকিস্তান অধিনায়ক রসিকতার সুরে সাংবাদিকদের করে গেলেন ওই অনুরোধও। লিটনের সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিও হলো সে রকম—পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার হাতছানি সামনে রেখে কেন একাদশে ৫ পরিবর্তন?
উত্তরে তিনি জানালেন, তাঁরা মূলত বেঞ্চের শক্তিই পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন স্কোয়াডের সবাইকে। এশিয়া কাপের আগে এটিই শেষ সিরিজ বাংলাদেশের। সে কারণেই সবাইকে দেখে নেওয়ার সুযোগটা নেওয়া।
এই পরীক্ষায় দল হিসেবে বাংলাদেশ ‘ফেল’ই করেছে বলতে হয়। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলা লিটনরা কাল শেষ ম্যাচে হেরে গেছেন ৭৪ রানে। তবু পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দ ছিল অধিনায়কের কণ্ঠে।
এমন আনন্দের উপলক্ষ এনে দেওয়ার কৃতিত্বটা সিরিজ শেষে বোলারদেরই দিয়েছেন লিটন, ‘এই সিরিজ জয়ে বোলারদের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল। প্রথম ম্যাচে তাদের ১১০ রানে অলআউট করা, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ রান ডিফেন্ড করা। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’ শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ১৭৮ রান করে ফেললেও বোলারদের কোনো দায় দিতে চাননি লিটন।
তাঁর তুরুপের তাস আসলে বোলাররাই। এ জন্যই বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হচ্ছে তাসকিন–শরিফুলদের। সামনে এশিয়া কাপ–বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট—শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই সিরিজ জিতে স্বপ্নের ফানুসও বাংলাদেশ ওড়াতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে।
এ নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তার জায়গাটা পরিষ্কার হবে লিটনের কথাটা শুনলেও, ‘তাঁদেরকে কোনো কারণে হারিয়ে ফেললে যে স্বপ্ন বা আশা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি, সেখানে পৌঁছাতে পারব না।’
কিন্তু যে উইকেটে বোলাররা দাপট দেখান, এমন উইকেটে খেলে কি এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ঠিকঠাক হবে? পৃথিবীর বেশির ভাগ মাঠে টি–টোয়েন্টি মানেই ব্যাটসম্যানদের দাপট। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশিয়া কাপেও তেমনই হওয়ার কথা।
এ কারণেই উইকেটকে দায় না দিয়েও পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা বলেছেন, ‘এটা এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ পিচ নয়।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে মানিয়ে নিয়ে উইকেট অনুযায়ী খেলেই ভালো করতে হবে, মিরপুরে প্রথম দুই ম্যাচে সেটি পারেননি বলে মনে করেন সালমান। তাহলে এশিয়া কাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ কেন নয়? ওই উত্তরও দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক, ‘এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য এমন প্রস্তুতি আমরা চাই না। কারণ, সামনে এমন উইকেট পাব না।’
বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এশিয়া কাপ প্রস্তুতি নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি দিয়েছেন গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় কম রানের উদাহরণ। তবে যখন জানতে চাওয়া হলো, এশিয়া কাপের আগে চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটে খেললে বাংলাদেশের জন্য ভালো হতো কি না, লিটন বলেছেন, ‘আপনি যখন, প্রতিদিন নিয়মিত ১৮০–১৯০ রানের উইকেটে খেলবেন। একদিন ব্যর্থ হবেন, পরের দুইটাতে ব্যর্থ হবেন। এই তিনটা ম্যাচেই কারও পরিকল্পনা ছিল না, ১৮০ হতে পারে।’
পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করা না গেলেও টানা ছয় হারের পর টি–টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ দলকে ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছেন লিটন। এশিয়া কাপেও যে খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তা স্পষ্ট হয়েছে তাঁর কথায়। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংটাও তাঁর গুছিয়ে নেওয়াই আছে। এ নিয়ে নিজের একটি বিশ্বাসের কথাও বলেছেন লিটন, ‘হৃদয়–জাকের, শামীম এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, এটা আমার বিশ্বাস।’ পরের দুজন যত পরে ব্যাট করতে আসবেন, তত দলের জন্য ভালো, বলেছেন অধিনায়ক।