চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি–টোয়েন্টি ম্যাচে আজ আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের এই সিরিজ আপাতত ১–১ ব্যবধানে অমীমাংসিত। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড দুই দলের জন্যই তৃতীয় ম্যাচটি তাই সিরিজ জয়ের লড়াই।
বাংলাদেশ দলের জন্য অবশ্য ম্যাচটি শুধুই সিরিজ জয়ের লড়াই নয়—বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছুরই শেষ সুযোগ আজ
ওদিকে আইপিএল থেকে খবর এসেছে, এবার নিলামে বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের ভিত্তি মূল্য ২ কোটি রুপি।
টসে মুদ্রা নিক্ষেপ করে হারলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিং।
বাংলাদেশ দলে তিনটি পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন লিটন। দলে ঢুকেছেন শরীফুল ইসলাম, শামীম পাটোয়ারি ও রিশাদ হোসেন। তাঁদের জায়গা দিতে আজ দলে নেই নাসুম আহমেদ, নুরুল হাসান ও তানজিম হাসান।
টসে হারের পর লিটন বলেন, ‘আমরা আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। পিচ একটু শুকনো, বল ভালো উঠতে পারে।’
মতিউর রহমান স্টেডিয়াম থেকে প্রথম আলোর ক্রীড়া প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, আগের দুই ম্যাচেও মাঠে দর্শক ছিল কম। আজ দুপুরের ম্যাচে তা কমেছে আরও। রোদের তাপও ততটা নেই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে। শীতের আবহ টের পাওয়া যাচ্ছে।
তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), টিম টেক্টর, হ্যারি টেক্টর, লোরকান টাকার (উইকেটকিপার), কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক আদাইর, ক্রেগ ইয়াং, মার্ক হামফ্রিস ও বেন হোয়াইট।
আয়ারল্যান্ড: ১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩।
আগের ম্যাচে নতুন বলে প্রথম ওভারে বোলিং করে তিন চারসহ মোট ১৩ রান দেন স্পিনার মেহেদী হাসান। আজও নতুন বলে আয়াল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম ওভারে বোলিং করলেন তিনি। আজও তিন চানসহ হজম করলেন ১৩ রান।
স্টার্লিং ১৩ রানে অপরাজিত। টেক্টর এখনো বল খেলেননি।
আয়ারল্যান্ড: ২ ওভারে বিনা উইকেটে ১৭।
দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৪ রান দিলেন পেসার শরীফুল। সুইং পাননি তবে লাইন–লেংথ ভালো ছিল।
আয়ারল্যান্ড: ৩ ওভারে বিনা উইকেটে ২৪।
মেহেদীকে সরিয়ে তৃতীয় ওভারে পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে বোলিংয়ে আনা হয়। এই ওভারের তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলেছিলেন স্টার্লিং। স্লোয়ারে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন। সাইফউদ্দিন একটু দ্বিধা করে ক্যাচটি নিতে নিজের উল্টো দিকে দৌড়ে যান। দেরি করে ফেলায় ঠিকমতো বলের নিচের যেতে পারেননি। বলটা তাঁর হাতের ওপরে পড়লেও রাখতে পারেননি। মিস! পাশেই মিড অফের ফিল্ডার পারভেজও ক্যাচটি নিতে পারতেন।
এই ওভারে একটি চারসহ মোট ৭ রান দেন সাইফউদ্দিন।
আয়ারল্যান্ড: ৪ ওভারে ১ উইকেটে ৩৮।
চতুর্থ ওভারে একটি ছক্কা ও দুটি চার হজম করেন শরীফুল। কিন্তু ওভারের শেষ বলটি করেছিলেন দারুণ লেংথে। আইরিশ ওপেনার টেক্টর বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন। স্টাম্প ফেলে দেন শরীফুল। তার আগে শরীফুলের এই ওভার থেকে ১৪ রান নেন টেক্টর।
১০ বলে ১৭ রানে আউট টেক্টর। তিনে নেমেছেন হ্যারি টেক্টর। স্টার্লিং ২০ রানে অপরাজিত।
আয়ারল্যান্ড: ৫ ওভারে ১ উইকেটে ৫০।
পঞ্চম ওভারে একটি ছক্কা ও চারসহ ১২ রান দেন সাইফউদ্দিন। বাজে জায়গায় বল করছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
হ্যারি টেক্টর ৫ এবং স্টার্লিং ২৭ রানে অপরাজিত।
আয়ারল্যান্ড: ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৫১।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারটি করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই ওভারের দ্বিতীয় বলটি হ্যারি টেক্টর সামনের পায়ে ডিফেন্স করলেও বল একটু ভেতরে ঢুকিয়ে খেলায় ব্যাটে লেগে তা স্টাম্পের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল। টেক্টর বিপদটা বুঝতে একটু দেরি করেন। যখন বুঝলেন, পড়িমড়ি করে পা দিয়ে বলটা সরাতে গিয়েও পারেননি। বল স্টাম্পে লেগে বেলস ফেলে দেয়। বোল্ড! বেচারা হ্যারি টেক্টরের দূর্ভাগ্য বটে!
৬ বলে ৫ রানে আউট হ্যারি টেক্টর। চারে নেমেছেন লোরকান টাকার। স্টার্লিং ২৭ রানে অপরাজিত।
আয়ারল্যান্ড: ৭ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৫।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট পেলেন স্পিনার মেহেদী। টাকার রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে পাননি বল। প্যাডে বল লাগায় বাংলাদেশের ফিল্ডারদের এলবিডব্লুর আবেদন নাকচ করে দেন মাঠের আম্পায়ার। রিভিউয়ে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলেন তৃতীয় আম্পায়ার সাথিরা জাকির। ১ রানে আউট টাকার।
পাঁচে নেমেছেন কার্টিস ক্যাম্ফার।
আয়ারল্যান্ড: ৮ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৭।
অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। এই ওভারে মাত্র ২ রান দেন তিনি।
আয়ারল্যান্ড: ৯ ওভারে ৩ উইকেটে ৬২।
নবম ওভারে মাত্র ৫ রান দেন মেহেদী। আয়ারল্যান্ড সর্বশেষ বাউন্ডারি মেরেছে পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে।
স্টার্লিং অপরাজিত ৩১, ক্যাম্ফার অন্য প্রান্তে ৭ রানে ব্যাট করছেন।
আয়ারল্যান্ড: ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৬।
১০ম ওভারে রিশাদের শেষ বলটি ছিল গুগলি। ক্যাম্ফার না বুঝেই কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন। দারুণ ডেলিভারি!
স্টার্লিং ৩৩ রানে অপরাজিত।
আয়ারল্যান্ড: ১২ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৪।
১২তম ওভারে রিশাদের তৃতীয় বলে স্ট্রেট দিয়ে চার মারেন স্টার্লিং। পরের বলেও বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সাইফকে ক্যাচ দেন ২৭ বলে ৩৮ রান করা স্টার্লিং।
ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান ডেলানি ও ডকরেল।
বাংলাদেশ: ১৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৮।
ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি রুটিন ফিল্ডিংও ঠিকমতো করতে পারছে না বাংলাদেশ দল। ফিল্ডিং মিস করায় এক–দুই রান হয়ে যাচ্ছে। সাইফ হাসানের করা ১৩তম ওভারে এভাবে মোট ৩ রান দিয়েছেন ফিল্ডাররা।
সাইফ নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রান দেন।
আয়ারল্যান্ড: ১৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৬।
১৪তম ওভারে ৮ রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ। একটি চার হজম করেছেন।
ডকরেল ৯ ও ডেলানি ৬ রানে অপরাজিত।
আয়ারল্যান্ড: ১৫ ওভারে ৫ উইকেটে ৯০।
১৫তম ওভারে মাত্র ৪ রান দেন সাইফ। দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেও পারছে না আয়ারল্যান্ড।
আয়ারল্যান্ড: ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ৯৯।
নিজের শেষ ওভারেও উইকেট পেলেন রিশাদ। ইনিংসের ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে ডেলানিকে ক্যাচ আউট করেন রিশাদ। বলে তাঁর ফ্লাইট বুঝতেই পারেননি ডেলানি।
রিশাদ ৪ ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। দুর্দান্ত!
আয়ারল্যান্ড: ১৭ ওভারে ৬ উইকেটে ১০৮।
সাইফউদ্দিনের করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে আয়ারল্যান্ডের রান ১০০ তে নিয়ে যান ডকরেল।
একটি ওয়াইড ও চারসহ এই ওভারে ৯ রান দেন সাইফউদ্দিন।
আয়ারল্যান্ড: ১৮ ওভারে ৮ উইকেটে ১১০।
১৮তম ওভারে মোস্তাফিজের তৃতীয় বলটি ছিল কাটার। পিচে বল ভালোই ধরেছিল। মার্ক আদাইর মারতে গিয়ে বল ঠিকমতো ব্যাটে পাননি। ক্যাচ তোলেন আকাশে। তানজিদ আরামেই ক্যাচটি নেন। ৯ বলে ৮ রানে আউট আদাইর।
এই ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজকে মারতে গিয়ে একইভাবে আকাশে ক্যাচ তুলে আউট হন হামফ্রিস। ২ বলে ১ রানে আউট হলেন তিনি।
আয়ারল্যান্ড: ১৯ ওভারে ৯ উইকেটে ১১৪।
মোস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারের তৃতীয় বল থেকে হিসাব করলে ছয় বলের মধ্যে ৩ উইকেট পেল বাংলাদেশ। এর মধ্যে শেষ উইকেটটি ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরীফুলের। তাঁর বলে তানজিদকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৯ রান করা ডকরেল।
সিরিজ জিততে বাংলাদেশ সহজ লক্ষ্যই পেল। টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১৭ রানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ দল।
আজ বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেন। ২ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং।
বাংলাদেশ: ৪ ওভারে ৩৮/১
ভালোই খেলছিলেন সাইফ। ক্রেইগ ইয়াংয়ের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মেরেছিলেন এক ছক্কা ও এক চার। ওভারের শেষ বলেও বড় শট খেলতে চাইলেন। এবার আর টাইমিং হলো না। উইকেট থেকে বেরিয়ে বড় শট খেলার চেষ্টায় মিড অনে মার্ক অ্যাডাইরের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন সাইফ। আউট হয়েছেন ১৯ রানে।
বাংলাদেশ: ৬ ওভারে ৫০/২
লিটনও ফিরলেন। হ্যারি টেক্টরের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫ রান করে ফিরেছেন তিনি। ক্রিজে এসেছেন পারভেজ হোসেন।
সাইফ ও লিটন ফিরলেও বাংলাদেশের রানের চাকা থামেনি। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৭৯। তানজিদ ২৭ ও পারভেজ ২১ রানে অপরাজিত আছেন। জয়ের জন্য ৬০ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩৯ রান।
৬২ বছর বয়সে মারা গেছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার রবিন স্মিথ। ইংল্যান্ডের হয়ে ৬২ টেস্ট ও ৭১টি ওয়ানডে খেলেছেন এই ব্যাটসম্যান।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হয়েছিলেন ব্যর্থ। প্রথম ম্যাচে ২ রান করা তানজিদ দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৭ রান। তবে সিরিজের শেষ টি–টোয়েন্টিতে ফিফটি পেয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার। ৩৫ বলে ফিফটি করেছেন তানজিদ। টি–টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ১১তম ফিফটি।
তাঁর ফিফটিতে সিরিজের শেষ টি–টোয়েন্টি সহজেই জিতেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১১৮ রানের লক্ষ্য ১৩.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন পারভেজ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারা বাংলাদেশ পরের দুই টি–টোয়েন্টি জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল।
ম্যাচসেরা হয়েছেন তানজিদ। ৪ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা মেহেদী হাসান।
আয়ারল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ১১৭ (স্টার্লিং ৩৮, ডকরেল ১৯; মোস্তাফিজ ৩/১১, রিশাদ ৩/২১)। বাংলাদেশ: ১৩.৪ ওভারে ১১৯/২ (তানজিদ ৫৫*, পারভেজ ৩৩; টেক্টর ১/১৭, ইয়াং ১/৩০)। ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: তানজিদ হাসান। সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। সিরিজসেরা: মেহেদী হাসান।