একটু কি উল্টো হয়ে যাচ্ছে? একটা সময় বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে আলোচনা মানেই ছিল স্পিনশক্তির চর্চা। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছেন পেসাররা। ওদিকে পেস আক্রমণে শাণিত ভারতীয় বোলিং আক্রমণে এবার দেখা যাচ্ছে, স্পিনারই আছেন পাঁচজন! দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ এমন প্রশ্নও উঠল—কাল যদি ভারত তিন স্পিনার খেলিয়ে দেয়, কী থাকবে বাংলাদেশের চিন্তা?
নাজমুল অবশ্য সম্ভাবনাটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। আসলে প্রতিপক্ষের একাদশ নির্বাচনে যেহেতু তাঁর ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই, এ নিয়ে অন্যভাবে ভেবেও তো লাভ নেই। তার চেয়ে নিজেদের খেলা নিয়ে পরিকল্পনা করা ভালো। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সম্ভাব্য স্পিনশক্তিতে বলীয়ান বোলিং আক্রমণ নিয়ে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নাজমুল সে রকমই বললেন, ‘আমি অবাক হব না, তারা যদি দু-তিনজন স্পিনার খেলায়। তবে আমাদের সব রকম প্রস্তুতিই আছে। এখানে গত দু-তিন দিনে ভালো প্রস্তুতি হয়েছে।’
ভারতের স্কোয়াডে থাকা পাঁচ স্পিনার অক্ষর প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা আর বরুণ চক্রবর্তী। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কাভার করতে আসা ভারতীয় সাংবাদিকদের অনেকের ধারণা, দুবাইয়ের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটে শৃঙ্খল পরাতে স্পিননির্ভর বোলিং আক্রমণও গড়তে পারে ভারত। জাদেজাকে অলরাউন্ডার কোটায় ফেলে সঙ্গে দুজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একাদশে স্পিনারের সংখ্যাটা হতে পারে তিন। এমনকি রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে খেলিয়ে দেওয়ারও নাকি ভালো সম্ভাবনা আছে এই ম্যাচে।
কিন্তু যিনিই খেলুন, বাংলাদেশের একমাত্র চিন্তা নিজেদের নিয়ে। সব মনোযোগও নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে। ভারতীয় দলে যশপ্রীত বুমরার মতো পেসার না থাকাতে বাংলাদেশের সুবিধা হলো কি না, এমন প্রশ্নেও নাজমুলের প্রায় একই উত্তর, ‘আমরা নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে ভাবছি না। তাদের দলে আরও ভালো ভালো বোলার আছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিয়েই চিন্তা করছি। পরিকল্পনা কীভাবে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটাই শুধু ভাবছি।’
বাংলাদেশ দল সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। মাত্রই দুই মাস আগের কথা হলেও মাঝখানে ৪০ দিনব্যাপী বিপিএল হওয়ায় মনে হয় ওয়ানডেটা বুঝি অনেক দিন ধরেই খেলছেন না ক্রিকেটাররা। নাজমুল অবশ্য বিপিএলেরও একটা উপযোগিতা দেখেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের জন্য, ‘এই ফরম্যাটটা (ওয়ানডে) অনেক দিন ধরে খেলেছি। সম্প্রতি বিপিএল হলেও সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানরা অনেক রান করেছে। সেটা তাদের এই টুর্নামেন্টেও আত্মবিশ্বাস দেবে।’
দুই দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া ৪১টি ওয়ানডের ৩২টিই জিতেছে ভারত, বাংলাদেশ মাত্র ৮টিতে, ১টি ফলহীন।
দুবাইয়ের উইকেটে ব্যাটিং করাটা পাকিস্তানের উইকেটের মতো সহজ হওয়ার কথা নয়। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না কারও জন্যই। এখানে মানিয়ে নিতে পারাটাই কৃতিত্ব এবং ভারত ম্যাচে আজ দলের কাছে নাজমুলের প্রত্যাশাও সেটাই।
নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ গ্রুপে নিজেদের পরের দুই ম্যাচ খেলবে রাওয়ালপিন্ডিতে, যেখানে বাংলাদেশের সর্বশেষ স্মৃতিটা দারুণ সুখের। গত বছর আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে ২-০–তে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগবে বলেই বিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়কের, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে সম্প্রতি আমরা রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট খেলেছি। আমরা জানি সেখানে উইকেট কেমন হতে পারে।’
সঙ্গে দুবাইয়ের আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে নাজমুল আবার বলেছেন, ‘ক্রিকেটার হিসেবে আমরা জানি, কোথায় কীভাবে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে। মনে হয় না কঠিন হবে খুব একটা।’ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কাল ভারতীয় দর্শকদের ভিড় থাকবে স্বাভাবিক।
তবে এখানে বাংলাদেশের সমর্থনও কম নেই। দুবাইয়ের প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ টিকিট কিনেছেন কালকের ম্যাচ দেখতে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে নাজমুলের আশা, ‘যেখানেই খেলতে যাই, আমাদের অনেক সমর্থক থাকে। এটা বড় ব্যাপার হবে এই ম্যাচেও। আশা করি, কালও তারা আসবে এবং আমাদের সমর্থন দেবে।’
দুই দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া ৪১টি ওয়ানডের ৩২টিই জিতেছে ভারত, বাংলাদেশ মাত্র ৮টিতে, ১টি ফলহীন। তবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আলোচনায় এখন এসব অতীত হিসাব-নিকাশ কমই আসে। কয়েক বছর ধরে এই দুই দলের ম্যাচ বাড়তি উত্তেজনার রসদ জুগিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
মানুষের প্রত্যাশা আর প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নাজমুল-মুশফিকদের গায়ে সে উত্তেজনার আঁচ লাগে ভালোভাবেই। যদিও নাজমুল আজ বলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে সব সময়ই এক্সাইটমেন্ট থাকে। তবে খেলোয়াড়েরা এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছে না। সবার মনোযোগ খেলার মধ্যেই আছে।’