
অনেক বছর আগের কথা। টেস্ট দলে নতুন সুযোগ পেয়েছেন, এমন এক ব্যাটসম্যানের স্টান্স দেখে যারপরনাই বিরক্ত হলেন তখনকার বাংলাদেশ দলের বিদেশি কোচ। বিরক্তির কারণ, টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে গেলেও তখনো নাকি ওই ব্যাটসম্যানের ব্যাট ধরাটাই ঠিকঠাক হচ্ছিল না!
জাতীয় দলের কোচদের কাছ থেকে এ রকম অভিযোগ শোনা যায় এখনো। ঘরোয়া তৃণমূল পর্যায় থেকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসার পরও অনেকের নাকি ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ের মৌলিক জ্ঞানই থাকে না। অনেক কিছু শেখাতে হয় তাঁর জাতীয় দলে আসার পর।
অভিযোগের এই তির সরাসরি জেলা ও বিভাগীয় কোচদের দিকেই যায়। খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে তাঁদের কাছ থেকেই তো খেলাটার মৌলিক পাঠ নেন উঠতি ক্রিকেটাররা।
যশোর জেলার ক্রিকেট কোচ আজিমুল হক গতকাল খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘আশা করি আগামী ২-৩ বছর পর কেউ আর এমন অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না।’ তাঁর মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস ও আশার সঞ্চার হয়েছে মূলত সম্প্রতি বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কোচেস রিফ্রেশার্স কোর্সে অংশ নিয়ে।
দেশের ৬৪টি জেলা ও আটটি বিভাগে বিসিবির নিয়োগকৃত কোচদের নিয়ে গত জুলাই মাসে শুরু এই কোর্স এখন শেষের পথে। রাজশাহী অঞ্চলে হয়েছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোর্স, খুলনায় খুলনা ও বরিশালের, চট্টগ্রামে সিলেট ও চট্টগ্রামের কোর্স হওয়ার পর এখন বাকি শুধু ঢাকা ও ঢাকা মহানগরের কোচদের নিয়ে ঢাকার কোর্সটি।
এ ধরনের কোর্স বিসিবি আগেও আয়োজন করেছে। তবে সেটা হয়েছিল মিরপুরে সারা দেশের কোচদের একসঙ্গে ডেকে এনে। এবারেরটি সে তুলনায় ভিন্ন বলে মনে করেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের হেড অব অপারেশনস হাবিবুল বাশার, ‘এবার কোর্সটি হচ্ছে বিভাগ ধরে ধরে। একেকটি অঞ্চলের কোর্সে মাত্র ২০-২২ জন করে কোচ অংশ নিচ্ছেন। এতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের যেমন সুবিধা হচ্ছে, অংশগ্রহণকারী কোচরাও সব অনেক ভালোভাবে করতে পারছেন।’
দুই থেকে তিন দিনের কোর্সটি পরিচালনা করতে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে থাকছেন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিসিবির স্পিন বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম, পেস বোলিং কোচ তালহা জুবায়ের, ব্যাটিং কোচ মেহরাব হোসেন ও ট্রেনার মোর্শেদ হাসান। বিসিবির দুই অভিজ্ঞ কোচ দীপু রায় চৌধুরী আর গোলাম ফারুকও গিয়েছেন দুই-একটি অঞ্চলে। কোর্সে মূলত কোচিংয়ের আধুনিক ধ্যানধারণা এবং কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের কোচদের।
স্থানীয় পর্যায়ের কোচদের কোচিংটাকে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে নিতে প্রতি বছরই এ ধরনের কোর্স করানোর ইচ্ছা হাবিবুলের। আগামী বছরের শুরুর দিকে পরবর্তী কোর্সে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকতে পারেন জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফ সদস্যরা।
যশোরের কোচ আজিমুলেরও চাওয়া প্রতি বছর হোক এই আয়োজন, ‘আধুনিক কোচিং সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার এই প্রক্রিয়া চালু থাকা উচিত। বায়োমেকানিকস যেমন অনেক বড় একটা বিষয়। কোর্সে বিষয়টা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা পেয়েছি। একজন খেলোয়াড়ের সমস্যাকে প্রথম কীভাবে দেখতে হবে, সেটা জেনেছি। টেকনিক্যাল অনেক কিছু আমাদের জানা, আবার অনেক কিছু নিয়ে সংশয় ছিল। কোর্সে সেগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে।’
জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নাজিমউদ্দিন সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কোচ হয়েছেন। নতুন দায়িত্বের শুরুতেই রিফ্রেশার্স কোর্সে অংশ নিতে পেরে তিনি দারুণ খুশি, ‘ক্রিকেট প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে। আমরা যখন খেলেছি তখনকার ক্রিকেট আর এখনকার ক্রিকেট এক নয়। কোর্সে নতুন অনেক কিছু শিখলাম, যেটা কাজে দেবে।’ বিশেষজ্ঞ প্যানেলে একজন ট্রেনার রাখার বিশেষ সুবিধা দেখছেন তিনি, ‘তৃণমূল পর্যায়ের কোচদের কিন্তু খেলোয়াড়দের ওয়ার্মআপ করানো থেকে শুরু করে সবই করাতে হয়। এখানে ট্রেনার থাকে না, অনেক সময় সহকারী কোচও থাকে না। কোর্স ট্রেনারের মৌলিক কাজগুলো সম্পর্কেও ধারণা পেয়েছি।’
২০০৮ সালে লেভেল-২ কোর্স করার পর এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার এ রকম কোর্স করার সুযোগ পেলেন পটুয়াখালী জেলার কোচ শ্যামল সরকার। তিনি বলেছেন, ‘স্কিল ট্রেনিং নিয়ে নতুন কিছু জিনিস জানলাম, যেগুলো আধুনিক কোচিংয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তৃণমূলের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের কোচিংয়ের ব্যবধান কমাতেই মূলত রিফ্রেশার্স কোর্সের উদ্যোগ। তবে এর সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে তৃণমূলের কোচরা এটাকে কতটা কাজে লাগাতে পারেন, তার ওপর।