
মোস্তাফিজ-তাসকিনদের দারুণ হিসাবি বোলিংয়ে পাকিস্তান গুটিয়ে গেছে ১১০ রানে। বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটে।
তাসকিন আহমেদ নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ঘটনাটা। তাই বলে এভাবে বল ফসকে যাবে! ফখর জামানের সহজ ক্যাচটা ছেড়ে দেওয়ার পর সতীর্থদের কাছ থেকে যদিও সান্ত্বনাই পেয়েছেন। তাঁকে পিঠ চাপড়ে দিতে এগিয়ে গেছেন রিশাদ হোসেন আর জাকের আলী। তখনো তো তাঁরা জানেন না, পরের সময়টায় আরও অনেকবারই তাসকিনকে বাহবা জানাতে হবে তাঁদের। শুধু তাসিকনই নন, পাকিস্তানের ইনিংসজুড়ে বাহবা পাওয়ার মতো বোলিং করেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলররাও।
শ্রীলঙ্কায় ‘পাস’ করে আসা বোলিংয়ের ছকেই আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বোলিংয়ের শুরুটা করেছিলেন অধিনায়ক লিটন দাস। দিন কয়েক আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসানকেই নিয়ে এসেছিলেন বোলিং উদ্বোধন করতে। তাসকিন ক্যাচটা ছাড়েন তাঁর প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে। তখনো দর্শক গুছিয়ে বসে উঠতে পারেননি। যাঁরা পেরেছিলেন, তাঁদের চোখেও ছিল অবিশ্বাস আর দুশ্চিন্তা—না জানি কী দিয়ে মূল্য চোকাতে হয় শুরুতেই এমন সুযোগ হাতছাড়া করার। রানআউট হওয়ার আগে ফখর ৩৪ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে তাসকিনের দায় কিছুটা বাড়িয়েছেন বটে। কিন্তু তাসকিনও তো কম যাননি; ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে ১১০ রানে আটকে দেওয়ার কৃতিত্বে তিনি যদি ভাগ চান, সিংহভাগ তাঁকে না দিয়ে উপায় কী!
ক্যাচ ছাড়ার দায় শোধ করতে খুব বেশি সময় নেননি। মেহেদীর বলে ক্যাচ ছাড়ার ৭ বল পর তাঁরই ওভারে সাইম আইয়ুব মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ায় বাংলাদেশ প্রথম উইকেটটা পায়। সেই যে শুরু, বাংলাদেশের বোলারদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শেষ ওভারে আব্বাস আফ্রিদির ক্যাচ উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে পৌঁছে দিয়ে পাকিস্তানের ইনিংসে ইতিও টেনেছেন তাসকিন।
প্রথম ওভারে ‘অভাগা’ মেহেদী নিজের পরের ওভারে এসে উইকেট পেয়েছেন, বিদায় করেছেন মোহাম্মদ হারিসকে। কিন্তু দিনটা তাঁর সব মিলিয়ে ভালো যায়নি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বেশি রান দিয়েছেন মেহেদীই—৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৭ রান। তবে তা বাংলাদেশের জন্য আর শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে ওঠেনি বাকিদের কিপটেমিতে! তাসকিন ৩ উইকেট পেয়েছেন ৩.৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে।
কিপটেমিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাঁর স্লোয়ার, কাটার আর গতির হেরফেরে দিশাহারা হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ৪ ওভারে করতে পেরেছেন মাত্র ৬ রান। ২ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ এতে নিজের রেকর্ডই নতুন করে লিখেছেন। গত বছর বিশ্বকাপে নেপালের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, ওই ম্যাচে ৩ উইকেট পাওয়া তানজিমও ৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজের সঙ্গে ছিলেন। এবার মোস্তাফিজ আরও ১ রান কম দিয়ে রেকর্ডটি শুধু নিজের করে নিয়েছেন।
তাসকিন-মোস্তাফিজের সঙ্গী হয়ে আসা আরেক পেসার তানজিম হাসান ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। তিন পেসারের তোপে অসহায় হয়ে পড়া পাকিস্তান আরও একবার আটকে গেছে মিরপুরের গোলকধাঁধায়। কয়েক দিন ধরে এখানকার ‘রহস্য’ নিয়ে যে আলোচনা, তা ভেদ করা হয়নি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। শুরু থেকেই নিজেদের চেনা ছন্দের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বড় রানের পথে ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে বারবার।
মিরপুরে কীভাবে আটকে দিতে হয়, তা তো বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ১২৯ রানেই আটকে দিয়েছিল, সেটিই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁদের সর্বনিম্ন। এবার তাঁর চেয়েও পাকিস্তান ১৪ রান কম করেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কায় পাওয়া ছন্দ মেনে বাংলাদেশ কালও হেঁটেছে ঠিক পথে—বোলাররা তাঁদের কাজটা ঠিকঠাক করেছেন। তারই পথ ধরে তাওহিদ হৃদয় ৩৭ বলে ৩৬ আর পারভেজ হোসেন ৩৯ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন সহজে। ২৭ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশের জয়টা এসেছে ৭ উইকেটে।
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১১০ (ফখর ৪৪, আব্বাস ২২, খুশদিল ১৭; তাসকিন ৩/২২, মোস্তাফিজ ২/৬, তানজিম ১/২০, মেহেদী ১/৩৭)। বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ (পারভেজ ৫৬*, হৃদয় ৩৬, জাকের ১৫*; মির্জা ২/২৩, আব্বাস ১/১৬)। ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন। সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০-তে এগিয়ে।