Thank you for trying Sticky AMP!!

জিম্বাবুয়ের জার্সিতে হিথ স্ট্রিক ও হেনরি ওলোঙ্গা

ওলোঙ্গা কোথায় পেয়েছিলেন স্ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ

ক্রিকেট-বিশ্ব ভুলতে বসেছিল হেনরি ওলোঙ্গার নাম। জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার যে কোনো খবরেই ছিলেন না অনেক দিন। গতকাল সেই ওলোঙ্গা হঠাৎ করেই আলোচনায়। ক্যানসারে আক্রান্ত সাবেক সতীর্থ হিথ স্ট্রিকের ‘মৃত্যু’তে শোক জানিয়েছেন ও পরে মৃত্যুর খবরটা যে ঠিক নয়, সেটি জানিয়ে ক্রিকেট–বিশ্বে তোলপাড় তুলেছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো স্ট্রিকের বন্ধু ওলোঙ্গার টুইটকে উদ্ধৃত করেই স্ট্রিকের মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছিল।

সারা দিনের ঘটনাপ্রবাহের পর সবারই একটা প্রশ্ন ছিল, ওলোঙ্গা কোথায় পেয়েছিলেন স্ট্রিকের মৃত্যুর ভুয়া খবর। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিও অ্যাডিলেডে সেটি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩০টি টেস্ট ও ৫০টি ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার।

৪৭ বছর বয়সী ওলোঙ্গা এখন বাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। ২০০৩ বিশ্বকাপ চলকালে জিম্বাবুয়ের মুগাবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।

১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যাঁর সঙ্গে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছেন, সেই স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর কোথায় শুনেছিলেন সেটি জানিয়েছেন ওলোঙ্গা। তিনি বলেছেন ফেসবুকে জিম্বাবুইয়ান স্পোর্টিং ফোরাম নামের একটি পেজে স্ট্রিকের মারা যাওয়ার খবর দেখেন। ওলোঙ্গার দাবি ওই খবর শোনার পর নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েকজন সাবেক সতীর্থ ও স্ট্রিকের পরিবারের সদস্যদের কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। স্ট্রিকের পরিবারের কেউ নাকি সে সময়ে উত্তর দেননি তাঁর প্রশ্নের। তবে তাঁর আরেক সাবেক সতীর্থ জানান স্ট্রিক মারা গেছেন। অনলাইনের স্ট্রিকের এক বন্ধুর শোকবার্তা দেখার দাবিও করেছেন ওলোঙ্গা।

Also Read: ‘আমি ভালো আছি’—জানালেন স্ট্রিক

ভাবলাম তিন জায়গা থেকে যখন একই খবর পেলাম, তাহলে ঘটনা সত্যি। তখন আমি শোকবার্তা লিখলাম, কিছু ছবি দিলাম আর জিম্বাবুয়ে দলে আমাদের কিছু দারুণ মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করলাম। আমি সাংবাদিক নই, তবে আমি তথ্য যাচাই করার চেষ্টা কিন্তু আমি করেছিলাম।
হেনরি ওলোঙ্গা, জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার

সেটি দেখার পর ওলোঙ্গা ধরেই নিয়েছিলেন খারাপ কিছুই হয়েছে। ক্যানসারে আক্রান্ত বন্ধু স্ট্রিকের শরীরটা যে ভালো যাচ্ছিল না। এবিসি রেডিও অ্যাডিলেডেকে ওলোঙ্গা বলেছেন কী হয়েছিল তা, ‘সোমবারও হিথের (স্ট্রিক) সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপে আমরা ভয়েস মেসেজ আদান-প্রদান করি। তাঁর অবস্থা খুব ভালো ছিল না, সে তো স্টেজ ফোর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছে।’

স্ট্রিকের বন্ধুর শোকবার্তা দেখার পর আর স্থির থাকতে পারেননি ওলোঙ্গা, নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্রিককে নিয়ে লিখে ফেলেন। সেই সময়ের মনের অবস্থা কেমন ছিল সেটি এবিসি রেডিও অ্যাডিলেডকে বলেছেন ওলোঙ্গা, ‘আমার মনে হলো পৃথিবী ভেঙে পড়েছে। গত বছর অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, রডনি মার্শ ও শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর পরের অনুভূতিগুলোই যেন আবার ফিরে এল।’

কয়েকজনের কাছ থেকে একইরকম খবর শোনার পর স্ট্রিককে নিয়ে লিখতে বসেন ওলোঙ্গা, ‘ভাবলাম তিন জায়গা থেকে যখন একই খবর পেলাম, তাহলে ঘটনা সত্যি। তখন আমি শোকবার্তা লিখলাম, কিছু ছবি দিলাম আর জিম্বাবুয়ে দলে আমাদের কিছু দারুণ মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করলাম। আমি সাংবাদিক নই, তবে আমি তথ্য যাচাই করার চেষ্টা কিন্তু আমি করেছিলাম।’

Also Read: হিথ স্ট্রিক বেঁচে আছেন

হেনরি ওলোঙ্গো এখন সংগীত শিল্পীও

 ‘স্ট্রিক মারা যাননি’—এমন খবর আসতে শুরু করার পর ওলোঙ্গা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের স্ট্যাটাস আপডেট করে মৃত্যু সংবাদটা যে নিশ্চিত নয়, তেমন আবহ দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওলোঙ্গা জানালেন এর কিছু সময় পরেই স্ট্রিক যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে, ‘(অস্ট্রেলীয় সময়) বেলা ২টায় হিথের একটি মেসেজ এল, “আমি জীবিত আছি, দয়া করে পোস্টগুলো সরিয়ে নাও”।’

হাঁপ ছেড়ে বাঁচা ওলোঙ্গা সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্রিকের বেঁচে থাকার খবর জানিয়ে দেন। ওলোঙ্গা বলছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে এতটা হইচই হবে, সেটি তিনি ভাবতে পারেননি, ‘একদম ভাইরাল, বিশেষ করে টুইটারে কী দ্রুতই না ছড়াল সব। আমি জীবনে যত পোস্ট করেছি, এমন সংখ্যা (লাইক, শেয়ার, মন্তব্য) কখনোই দেখিনি। কী একটা অবস্থা।’

তাঁর অসাবধানতা স্ট্রিকের পরিবারকে কী দুঃসহ অবস্থায় ফেলেছিল, সেটি ভেবে মন খারাপ ওলোঙ্গার, ‘পরিবারটার কথা চিন্তা করুন। ঘুম থেকে উঠেই হিথ মারা গেছেন, না জীবিত আছেন, এমন হাজার মেসেজ পেল ফোনে। ওদের জন্য আমার খারাপই লাগছে।’

নিজের কেমন লেগেছে, সেটিও জানিয়েছেন ওলোঙ্গা, ‘হঠাৎ করেই একটা ঘটনার মূল চরিত্র হয়ে উঠলাম আমি। এমন নয় যে আমিই শুরু করেছি, আমার আগেই তো কয়েকজন লিখেছে। তবে কেন জানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার বার্তাগুলো বেশি গুরুত্ব পেল। লোকজন মনে করা শুরু করল সবকিছুর ‘নাটের গুরু’ আমি।’

Also Read: তৃতীয় সন্তানের বাবা হলেন তাসকিন

হিথ স্ট্রিক যখন বাংলাদেশের বোলিং কোচ

তবে এই ঘটনায় মন্দের ভালোও খুঁজে পেয়েছেন ওলোঙ্গা, ‘এমন একটা ঘটনার একটিই ভালো দিক, তাঁকে কত লোক ভালোবাসে সেটি জানা গেল। কী অবিশ্বাস্যরকম আবেগের প্রকাশ দেখলাম। অবিশ্বাস্য।’

তবে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত বলেই মনে করেন ওলোঙ্গা, ‘আমি এটাকে একটা সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছি। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ১০০ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো তথ্য জানানো উচিত নয়।’

হিথ স্ট্রিকের জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করেই শেষ করেছেন ওলোঙ্গা, ‘হিথের অবস্থা এখনো খুব খারাপ। সবার ভালোবাসা ও প্রার্থনাই তাঁকে কঠিন সময় পার করতে সাহায্য করবে।’

Also Read: জোড়া গোল বানিয়ে মায়ামিকে ফাইনালে তুললেন মেসি