ড্রেসিংরুমের সামনে এমন দৃশ্য আগেও দেখা গেছে। তবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে এই প্রথম। ট্রফি নিয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হলো, তারপর অনেকে তুললেন একক ছবি। সবশেষে ম্যাচের দুই সেরা পারফরমার তানজিদ হাসান আর মেহেদী হাসানকে পাশে রেখে ট্রফি নিয়ে ছবি তুলছেন স্টাফ সদস্যদের কেউ কেউ।
যেকোনো সংস্করণেই এই প্রথম শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। পাল্লেকেলের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা ও ডাম্বুলার দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পর কাল রাতে কলম্বোয় শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ৮ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ। পরপর দুই ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টির ট্রফি নিয়ে আজ সকালে দেশে ফিরবে লিটন দাসের দল।
কাল ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন জানালেন, শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম সিরিজ জিততে পেরে দলের সবাই খুশি, অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অনুভূতিও দারুণ। কলম্বোতে বসেই যেন তিনি উপলব্ধি করলেন দেশের মানুষের আনন্দটাও, ‘আমার মনে হয় আপনারাও (সাংবাদিকেরা) সবাই খুশি, দেশের মানুষও এই অর্জনে আনন্দিত।’
মেহেদী হাসান মিরাজকে বসিয়ে শেষ ম্যাচে মেহেদী হাসানকে খেলানোটা ছিল বড় সিদ্ধান্ত। ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং করেছেন এই অফ স্পিনার, হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ম্যাচ শেষে জানা গেল, অধিনায়কের অনেক বেশি আস্থাও ছিল তাঁর ওপর, ‘আমার বিশ্বাস ছিল, কলম্বোর উইকেটের জন্য ওর বোলিংটা উপযুক্ত হবে। তার মানে এই নয় যে সে অন্য জায়গায় ভালো বোলিং করবে না। এই ম্যাচে আমার পরিকল্পনাই ছিল, আর কেউ খেলুক না খেলুক, মেহেদী খেলবে। যদি উইকেট বোলিং সহায়ক হয় আমাদের সব ম্যাচে মেহেদী খেলবে, ব্যাটিং সহায়ক হলে মিরাজ খেলবে।’
ডাম্বুলার আগের ম্যাচে ৫০ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে দলকে ৮৩ রানের বড় জয় এনে দিয়ে লিটনই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। কালও ওপেনার তানজিদ হাসানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে তাঁর ৭৪ রানের জুটি কম লক্ষ্যের ম্যাচে আরও সহজ করেছে বাংলাদেশের জয়। তানজিদের ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের সঙ্গে লিটনের ২৬ বলে ৩২ ধারাবাহিকতা রাখল তাঁর ব্যাটে। মাঝে খারাপ সময় পার করা লিটন যেন তাতে কিছুটা স্বস্তিতে এখন, ‘১০ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, সব সময় শতভাগই দিতে চেষ্টা করি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট ছিল। ম্যাচ জিতলে এমনিতেই উজ্জীবিত হওয়া যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৩ রানের জয় অনেক বড় অর্জন ছিল।’
গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটনের নেতৃত্বে ৩-০ তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপরই হতাশার দুই সিরিজ—সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে গিয়ে টানা ছয় ম্যাচে হার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে আবারও সাফল্যের ধারায় দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা—এই দুই সিরিজের সাফল্যের তুলনা করতে গিয়ে লিটন বলেছেন, দুটোই তাঁর কাছে সমান। আমিরাত ও পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাখ্যা, ‘গত দুটি সিরিজে আমরা দল গোছানোর চেষ্টা করেছি। অনেকের চোট-আঘাতও ছিল।’
সেই হতাশা কাটিয়ে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জয় দুবাইয়ের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের অনুপ্রেরণা হবে বলে অধিনায়কের বিশ্বাস। তার আগে অবশ্য আজ দেশে ফিরে ২০ জুলাইয়েই ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সতর্ক লিটন মনে করিয়ে দিলেন, সিরিজটা হবে মিরপুরে, ‘এখানে (কলম্বো) উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা ছিল। মিরপুরে উইকেট কেমন হবে জানি না। তবে শুনেছি ঢাকায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। মিরপুরের উইকেট যতটুকু চিনি, ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হতে পারে।’
সমাধানটাও লিটনই দিয়েছেন। ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, খেলতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট, ‘ভালো ক্রিকেট খেললেই হবে না, স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে। স্মার্ট ক্রিকেট খেললে অনেক কিছুই সম্ভব।’