এবার ব্যালন ডি’অর তাহলে কার?
এটা বিশ্বকাপের বছর নয়, ইউরো বা কোপা আমেরিকারও নয়। যে বছর এ রকম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট থাকে, সে বছরের ব্যালন ডি’অরের জন্য ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স হয়ে ওঠে প্রধান বিবেচ্য। এই বছর যেহেতু সে রকম কিছু নেই, চ্যাম্পিয়নস লিগের পারফরম্যান্সই হতে পারে বড় বিবেচনার বিষয়, সঙ্গে লিগের পারফরম্যান্স।
তো সেই বিবেচনায় কারা এগিয়ে? পিএসজির উসমান দেম্বেলে, জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা, ভিতিনিয়া, ইন্টার মিলানের লাওতারো মার্তিনেজ, ডেঞ্জেল ডামফ্রিস, বার্সেলোনার রাফিনিয়া, পেদ্রি, লামিয়ে ইয়ামাল, রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পে, লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ—ঘুরেফিরে এই নামগুলোই আসছে আলোচনায়।
সেখান থেকে যদি আরও ছোট একটা তালিকা করা হয়, তাহলে কারা থাকবেন? প্রশ্নটা করা হয়েছিল এবার ব্যালন ডি’অরের অন্যতম দাবিদার বার্সেলোনার উইঙ্গার রাফিনিয়াকে।
তিনি কাদের রেখেছেন জানেন? নিজের দুই বার্সা–সতীর্থ—লামিনে ইয়ামাল ও পেদ্রি, রিয়াল মাদ্রিদের দুই সুপারস্টার—ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও কিলিয়ান এমবাপ্পে আর লিভারপুলের রাজপুত্র মোহাম্মদ সালাহকে! এরাই রাফিনিয়ার চোখে সেরা পাঁচ। তাঁর কথা, ‘লামিনে, সালাহ, এমবাপ্পে...পেদ্রি তো আমার কাছে বিশ্বের সেরা।
আর ভিনিসিয়ুস? ও তো সব সময়ই এই পুরস্কারের দাবিদার, ওকে এড়ানো যাবে না।’
চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, পিএসজির উসমান দেম্বেলেকে রাফিনিয়া নিজের সেরা পাঁচেই রাখেননি। যদিও ফুটবলবোদ্ধাদের মতে, এখন পর্যন্ত এবার ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় দাবিদার ফরাসি এই ফরোয়ার্ড।
২০২৪-২৫ মৌসুমে এরই মধ্যে ৩৫ গোল হয়ে গেছে দেম্বেলের। সঙ্গে ১২টি গোলে সহায়তা—পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, মৌসুমটা কত দুর্দান্ত কাটছে তাঁর। বার্সেলোনায় থাকতে সমর্থকদের হতাশ করে গেছেন। কিন্তু পিএসজির জার্সিতে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমেই যেন দেম্বেলে নিজের আসল রূপ দেখাচ্ছেন। শুধু লিগ আর কাপই নয়, পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তোলার পথেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ব্যালন ডি’অরের জন্য দেম্বেলের চেয়ে বড় দাবিদার মনে হয় না আর কেউ থাকবেন।
রাফিনিয়ার নিজের পরিসংখ্যানও দুর্দান্ত। ৩২ গোল, সঙ্গে ২২ অ্যাসিস্ট! চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তাঁর গোলেই একসময় মনে হচ্ছিল বার্সা ফাইনালে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইন্টার পাল্টে দেয় হিসাব। যে কারণে ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে রাফিনিয়ার মতো ইয়ামাল আর পেদ্রিও কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন দেম্বেলের চেয়ে।
ইন্টার ফাইনালে যাওয়াতেই সম্ভাবনা বেড়েছে লাওতারো মার্তিনেজ, ডেঞ্জেল ডামফ্রিসের। দুজনেই দারুণ খেলেছেন পুরো মৌসুমে। তারপরও ইন্টারের লিগ জয় এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। সমান ৩৫ ম্যাচ খেলে তারা শীর্ষে থাকা নাপোলির চেয়ে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে। ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালে হেরে গেছে এসি মিলানের কাছে। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে লাওতারো না ডামফ্রিস ব্যালন ডি’অর জেতেন কি না, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ভিনিসিয়ুস ও এমবাপ্পে—এই দুই রিয়াল তারকা গতবার ব্যালন ডি’অরের খুব কাছে গিয়েছিলেন। এবার তাঁদের লিগ জয়ের সম্ভাবনা খুব বেশি নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগেও রিয়াল আগেভাগে ছিটকে যাওয়ায় ভিনি-এমবাপ্পের পক্ষে ব্যালন ডি’অর জেতাও কঠিনই মনে হচ্ছে।
আলোচনায় আর আছেন সালাহ। ইংল্যান্ডে তিনি একাই আলো। ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে সম্প্রতি হয়েছেন মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়—৯০ শতাংশ ভোট নিয়ে! চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত শুরুর পরও লিভারপুল ছিটকে গেছে শেষ ষোলো থেকে। তবে চার ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। পুরো মৌসুমে ৩৩ গোল করার পাশাপাশি ২৩ গোল করিয়েছেন সালাহ।
১৯৯৫ সালে জর্জ উইয়াহর পর আবার কোনো আফ্রিকান খেলোয়াড়ের হাতে ব্যালন ডি’অর তাই দেখা যেতেই পারে।