
আগামী দিনের এমিলি-বিপ্লবদের খুঁজতে ‘তারুণ্যের উৎসবের’ আওতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে হবে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট।
শেরেবাংলা কাপ ও সোহরাওয়ার্দী কাপ ফুটবল একসময় তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে আনত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অনেক তারকাও পেয়েছে বাংলাদেশ সেই প্রতিভাবানদের মধ্য থেকে। ২০২১–২২ মৌসুমের পর এবার আবার বৃহৎ পরিসরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাফুফে।
দেশের ৬৪টি জেলার অংশগ্রহণে এবারও মূল লক্ষ্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করা। এবার খেলা হবে সিনিয়র এবং বয়সভিত্তিক পর্যায়েও ৩০ আগস্ট থেকে শুরু প্রতিযোগিতার তিনটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে অংশ নেবে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুটবলার। শুধু বড়দের টুর্নামেন্টেই ম্যাচ হবে ১১২টির মতো।
গতকাল বাফুফে ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার ফিকশ্চার প্রকাশ ও লোগো উন্মোচন হয়েছে। পরে সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সহসভাপতি ও চ্যাম্পিয়নশিপ কমিটির প্রধান ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শুধু ঢাকায় বসে টুর্নামেন্ট করলাম, গ্রাম পর্যায় থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করলাম না, তাহলে তো আমাদের নিজস্ব কোনো খেলোয়াড় তৈরি হলো না! আমরা চাই এই টুর্নামেন্ট দিয়ে তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে।’
জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম, ২০০৩ সাফজয়ী দলের বিপ্লব ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের জার্সিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ গোল করা জাহিদ হাসানদের (এমিলি) মতো ফুটবলাররা উঠে এসেছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়েই।
শুধু ঢাকায় বসে টুর্নামেন্ট করলাম, গ্রাম পর্যায় থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করলাম না, তাহলে তো আমাদের নিজস্ব কোনো খেলোয়াড় তৈরি হলো না! আমরা চাই তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে।ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী বাফুফে সহসভাপতি ও চ্যাম্পিয়নশিপ কমিটির প্রধান
আশি–নব্বইয়ের দশকে জেলা পর্যায় থেকে ঢাকার ক্লাবগুলোয় ফুটবলার উঠে আসার বড় মাধ্যমও ছিল এই টুর্নামেন্ট। দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামের চোখে এখনো ভাসছে সেই প্রতিযোগিতার স্মৃতি। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্ট চলাকালে গোটা বাংলাদেশে একটা উৎসবের আবহ থাকত। আমাদের রুমি (রিজভী করিম রুমি), আশীষ ভদ্রসহ অনেকেই এই টুর্নামেন্ট দিয়ে এসেছেন।’
বাফুফের বর্তমান কমিটিও সেই পথে হাঁটতে চায়। আগামী দিনের এমিলি–বিপ্লবদের খুঁজতে ‘তারুণ্যের উৎসবের’ আওতায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে হবে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট—আন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট ও মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল আয়োজন করবে তারা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের কোনো খেলোয়াড় এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না।
৬৪ জেলায় দল গঠনে কাজ করছে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তারাই নিজ নিজ জেলার খেলা আয়োজন করবে। ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘যেখানে আমাদের জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কার্যকর আছে সেখানে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই খেলাগুলো আয়োজন করবে। ডিসি মহোদয় সেটার দেখাশোনা করবেন। যেখানে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সক্রিয় নয়, সেখানে আমরা ডিসির সঙ্গে আলোচনা করে অর্গানাইজিং কমিটি করে কাজগুলো করব।’
টুর্নামেন্ট চলাকালে গোটা বাংলাদেশে একটা উৎসবের আবহ থাকত। আমাদের রুমি (রিজভী করিম), আশীষ ভদ্রসহ অনেকেই এই টুর্নামেন্ট দিয়ে এসেছেন।শেখ মোহাম্মদ আসলাম জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার
টুর্নামেন্ট তদারকির জন্য আটটি বিভাগে বাফুফের নির্বাহী কমিটির চার সদস্যের মনিটরিং সেল থাকবে। প্রতিভা অন্বেষণে থাকবে জাতীয় পর্যায়ের ১০ থেকে ১২ জন কোচের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কোচিং প্যানেল।
তিন টুর্নামেন্টে মিলিয়ে বাজেট প্রায় ১৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০ কোটি টাকা দেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ৫ কোটি টাকা এরই মধ্যে তারা দিয়েছে। বাকি ৮ কোটি টাকা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ও এএফসি থেকে সংগ্রহ করবে বাফুফে। জেলা পর্যায়ে সিনিয়র দলের খেলার মাঝামাঝি পর্যায়ে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে। বাফুফের প্রাথমিক লক্ষ্য, অন্তত ৫০ থেকে ১০০ ফুটবলারকে বাছাই করা। পরে তাদের এলিট একাডেমি বা বয়সভিত্তিক পর্যায় কিংবা জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাকা হবে।
টুর্নামেন্ট শুরু হবে মুন্সিগঞ্জ থেকে। প্রথম দিন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়াম মুন্সিগঞ্জের প্রতিপক্ষ মাদারীপুর জেলা। প্রথম রাউন্ডে দলগুলোকে আটটি ‘পটে’ বা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের আট শহীদের নামে।