ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জাবি আলোনসো
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জাবি আলোনসো

রিয়ালে আলোনসোকে নিয়ে অস্বস্তি সম্পর্কে যা জানা গেল

হঠাৎ করেই যেন খারাপ সময়ের মধ্যে পড়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠে ও মাঠের বাইরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না দলটির। আর এই খারাপ সময় ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে রিয়ালের কোচ জাবি আলোনসো। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজে ফর্ম ও ধারাবাহিক পয়েন্ট হারানোর কারণে আলোনসোকে নিয়ে ক্লাবের ভেতর অস্বস্তি ও মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।

ক্রীড়াভিত্তিক পোর্টাল ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছে, আলোনসোর খেলানোর পদ্ধতি ও কোচিং স্টাইল নিয়ে ড্রেসিংরুমে অনেক খেলোয়াড়ের মধ্যে অসন্তোষ আছে। যদিও এই অসন্তোষ এখনো বড় কোনো সংকটে পরিণত হয়নি এবং খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্পর্কও ভেঙে পড়েনি। রিয়াল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব সব সমস্যা মিটমাট করে খেলায় মনোযোগ ফেরাতে।

রিয়ালের সাম্প্রতিক ধাক্কাটি এসেছে অবনমন–সংকটে থাকা জিরোনার সঙ্গে ১–১ গোলে ড্রয়ের পর। এর ফলে লা লিগায় টানা তিন ম্যাচ ড্র করল রিয়াল। জিরোনার আগে রায়ো ভায়েকানো এবং এলচের বিরুদ্ধেও জিততে পারেনি রিয়াল। ধারাবাহিকভাবে পয়েন্ট হারানোর ফলে তারা এখন শিরোপা লড়াইয়ে শীর্ষে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে এক পয়েন্ট পিছিয়ে দুইয়ে নেমে গেছে।

রিয়াল লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে এই তিন ম্যাচে ড্র করেছে। যে কারণে দীর্ঘ ভ্রমণ–ক্লান্তিও দলটিকে বেশ ভুগিয়েছে। আর এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অভ্যন্তরীণ সংকটও। যদিও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে কিছুটা অস্বস্তি যে সবার মধ্যে আছে, তা এক রকম স্পষ্ট।

রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জাবি আলোনসো

অসন্তোষের অভিযোগ অবশ্য একেবারে নতুনও নয়। এর আগে গত অক্টোবরেই গুঞ্জন উঠেছিল যে আলোনসোর ‘ব্যক্তিগত ব্যবহারে ও ফুটবল–দর্শনে’ দলের কিছু খেলোয়াড় অসন্তুষ্ট। এরপর একটি বৈঠকও হয়েছে, যেখানে আলোনসো ও খেলোয়াড়রা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফেদেরিকো ভালভের্দে ও এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে কোনো বড় বিভাজন নেই। তবু দ্য অ্যাথলেটিকের দাবি, এখনো কিছু খেলোয়াড় আলোনসোর দর্শনে সন্তুষ্ট নন। আবার অনেকে মনে করেন সমস্যা কোচের নয়।

দলের একটি সূত্র অ্যাথলেটিককে বলেছেন, ‘এটা যে কোচের সমস্যা নয়, বিষয়টি খুবই স্পষ্ট।’ আরেকজন আরও সোজাসাপ্টা মন্তব্য করেছেন, ‘সমস্যা আলোনসোর নয়। এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও বেলিংহাম—তিনজনকে একসঙ্গে রেখে ভারসাম্যপূর্ণ দল বানানো অসম্ভব।’ তাঁদের মতে, আলোনসোর নির্দেশনা মাঠে ঠিকমতো প্রতিফলিত হচ্ছে না, ফলে খেলার ধরন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে।

কোচিং স্টাফদের ভেতর থেকেও এই স্বীকারোক্তি এসেছে যে কার্লো আনচেলোত্তির রেখে যাওয়া ধরন বা পদ্ধতি বদলানো সহজ নয়। সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও নেই। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এখনই আলোনসোর চাকরি নিয়ে ভাবছে না। তবু আগামী ম্যাচগুলো, বিশেষ করে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে পরবর্তী ‘অ্যাওয়ে ম্যাচ’কে পাখির চোখ করেছে দলটি।

বেলিংহামের এই ছবির মতোই রিয়ালের এখন দুঃসময় চলছে

এই ম্যাচ শুধু ফলাফলের দিক থেকে নয়, দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জিরোনা ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্স থেকে বেরিয়ে আসতে রিয়াল বেশ মরিয়া। আশার কথা—রিয়াল কর্তৃপক্ষ এখনো আলোনসোর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছে। এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে রিয়ালের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ১৮টিতে জিতেছেন এবং মাত্র তিনটিতে হেরেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। ফলে ইতিবাচক থাকার মতো অনেক কিছু আছে।

এর আগে ২০২৩–২৪ মৌসুমে বায়ার লেভারকুসেনকে অপরাজিত রেখে বুন্দেসলিগা জেতানোর পরই আলোনসোকে কোচ হিসেবে নিয়ে আসে রিয়াল। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে নানা চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। তবে মৌসুম এখনো অনেক বাকি। এর মধ্যে আলোনসো নতুন কৌশলে দলকে জাগিয়ে তুলতে পারেন কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।