Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রাজিলজুড়ে আমেরিকান ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে

পেলে-রোনালদো-নেইমারের ব্রাজিলে যেভাবে এল ‘নতুন ফুটবল’

‘তিন সুপারবোল আগে খেলা দেখার সময় আমার সঙ্গে ছিল শুধু ভাই। দুই সুপারবোল আগে ছিল ভাই, আমার বাগ্‌দত্তা আর কিছু বন্ধুবান্ধব। আর এখন খেলা দেখি এখানকার সব মানুষের সঙ্গে’—রিও ডি জেনিরোর একটি বারে বসে কথাগুলো বলছিলেন কার্লোস ম্যারিনস।

পেশায় তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, পরনে সান ফ্রান্সিসকো ফোর্টিনাইনার্সের জার্সি। কিছুক্ষণ আগে টিভিতে সান ফ্রান্সিসকো-গ্রিন বে পেকার্সের ম্যাচ দেখতে দেখতে চিৎকার করছিলেন ম্যারিনস। তাঁর সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন আরও অনেকে।

যে খেলা দেখতে গিয়ে ম্যারিনস ও অন্যরা বারটিকে গ্যালারি বানিয়ে ফেলেছেন, সেটি এনএফএলের ম্যাচ। আমেরিকান ফুটবল নামেই যা বেশি পরিচিত। ‘ফুটবলের রাজা’খ্যাত কিংবদন্তি পেলে কিংবা ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদোর সময়ে তো বটেই, নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের এই সময়েও ফুটবলই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। শুধু খেলাই নয়, যাপিত জীবনেরই অন্যতম অংশ। সৌন্দর্যময় ফুটবলের জন্য খ্যাত ব্রাজিলে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমেরিকান ফুটবল, যা পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই ‘জটিলতর খেলা’ হিসেবে বিবেচিত।

আমেরিকান ফুটবল বা এনএফএলের ফাইনালকে বলা হয় ‘সুপারবোল’। আগামী রোববার এ বছরের সুপারবোলে মুখোমুখি হবে সান ফ্রান্সিসকো ফোর্টিনাইনার্স ও কানসাস সিটি চিফস। ম্যারিনস জানান, ব্রাজিলের কয়েক লাখ মানুষ সুপারবোলটি দেখবেন, ‘এই খেলাটি নিয়ে যারা পাগলামো করে, সম্ভবত আমি তাদের একজন। আমি হইচই করি, উল্লাস করি। যারা আমেরিকান ফুটবল পছন্দ করে, তাদের আমার ভালো লাগে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বাজার মেক্সিকো। এরপরই আছে ব্রাজিল। লিগ কর্তৃপক্ষের এক হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলে এনএফএলের সমর্থক আছে ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ ‘উৎসাহী দর্শক’। ২০১৫ সালেও ব্রাজিলে এনএফএলের দর্শক-সমর্থকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ লাখ।

Also Read: সোমবার ‘জ্বরে ভুগে’ অফিসে যাবেন না যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি ৬১ লাখ মানুষ, কারণ সুপারবোল ভাইরাস

এখন সমর্থক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলে আমেরিকান ফুটবলের উপস্থিতিও বাড়ছে। এনএফএলের পরবর্তী আন্তর্জাতিক সূচিতে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও জার্মানির মিউনিখের সঙ্গে ব্রাজিলের সাও পাওলোও যুক্ত হয়েছে। গত সোমবার এনএফএল কমিশনার রজার গুডেল ঘোষণা দেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর করিন্থিয়ানস অ্যারেনায় একটি ম্যাচ খেলবে ফিলাডেলফিয়া ইগলস। ম্যারিনসের যমজ ভাই কাইয়ো এরই মধ্যে ম্যাচটি দেখার জন্য সময় বরাদ্দ করে ফেলেছেন বলে জানান এএফপিকে, ‘আমি ম্যাচটা কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।’

রিও ফুটবল একাডেমিতে আমেরিকান ফুটবলের প্রশিক্ষণ চলছে

জিসেল বুনচেনের প্রভাব

নান্দনিক ফুটবলের দেশে আমেরিকান ফুটবল ঠিক কী কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল ব্রাজিলে এনএফএলের বিপণন প্রতিনিধি ইফেক্ট স্পোর্টসের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পেদ্রো মন্তেইরো কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আছে ব্রাজিলিয়ানদের মার্কিন সংস্কৃতির প্রতি ভালো লাগা, ব্রাজিলে ফুটবল লিগের বিরতির সময় এনএফএল প্লে-অফ আয়োজিত হওয়া এবং বিপণনে জোর তৎপরতা।

Also Read: আমেরিকান ফুটবল, রাগবি বা ক্রিকেট থেকে শিখতে বলছেন অঁরি

এর বাইরে আছে ব্রাজিলে ‘মিস্টার জিসেল বুনচেন’ নামে পরিচিত টম ব্র্যাডির প্রভাব। ব্র্যাডি ২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টসের হয়ে রেকর্ড সাতটি সুপারবোল জেতেন। এনএফএলের এ কিংবদন্তির সাবেক স্ত্রী ছিলেন ব্রাজিলের সুপারমডেল বুনচেন। স্বদেশি সুপারমডেল ও তাঁর স্বামীর সূত্রে এনএফএল ব্রাজিলে বিশেষ মনোযোগ পায় বলে জানান মন্তেইরো।

ব্রাজিলের তরুণদের মধ্যে আমেরিকান ফুটবল শেখার প্রবণতা বাড়ছে

ফুটবলারদের দেশ ছেড়ে যাওয়া

ব্রাজিলিয়ান আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফএ) প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান কিইওয়ারার চোখে ধরা পড়েছে আরেকটি কারণ। তাঁর মতে, ব্রাজিলের শীর্ষ ফুটবলাররা বিপুল অর্থের টানে দেশ ছেড়ে বাইরের লিগগুলোতে চলে যান। ফলে ‘এর মাধ্যমে অন্য খেলাগুলো নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে।’ পেশাদার আমেরিকান ফুটবলার হওয়ার আগ্রহও বাড়ছে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে। রিও ফুটবল একাডেমিতে হেলমেট ও প্যাড পরে আমেরিকান ফুটবল অনুশীলন করা গ্যাব্রিয়েল স্টাজ তাঁদেরই একজন, ‘আমি ব্রাজিলের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করতে চাই। এটা এখন সব বাচ্চারও স্বপ্ন।’

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল মাঠে অন্যরকম স্বীকৃতি পেলেন অ্যাশেজের জুনায়েদ ইভান

ব্রাজিলে আমেরিকান ফুটবল কর্তৃপক্ষ সিবিএফএ যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে। সংস্থাটি এখন আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে। সব মিলিয়ে ব্রাজিলজুড়ে এখন ৩০০টির মতো আমেরিকান ফুটবল দল আছে। আমেরিকান ফুটবলের দুটি সংস্করণ আছে—ট্র্যাডিশনাল ও ফ্ল্যাগ ফুটবল। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ফ্ল্যাগ ফুটবল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা খেলাটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে আরও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে সিবিএফএ। বর্তমানে ব্রাজিলের নারী ফ্ল্যাগ ফুটবল দল বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ।

আমেরিকান ফুটবল কি প্রথাগত ফুটবলের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠতে পারবে?

তবে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়লেও আমেরিকান ফুটবল প্রথাগত ফুটবলকে ব্রাজিলে টপকে যেতে পারবে না বলে মনে করেন ইফেক্ট স্পোর্টসের মন্তেইরো, ‘আমরা কি কোনো এক সময় ফুটবলের চেয়ে আমেরিকান ফুটবলের বেশি দর্শক দেখব এই দেশে? সম্ভবত না।’

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল কেন জাতীয় সংগীত গায় না