পেলে: বার্থ অব আ লেজেন্ড—‘জিঙ্গা’ মাতালেও দর্শকের মন ভরল না

এ আর রাহমানের জীবন মানেই সংগীত। গানবাজনার বাইরে তাঁর পৃথিবী প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ‘পেলে: বার্থ অব আ লেজেন্ড’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব পেয়ে প্রথমেই তিনি যে কাজটা করেছিলেন, তা হলো গুগল করে পেলের জীবনটা ভালো করে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন।

সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৬ সালের ৬ মে। পাঁচ দিন পর ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে রাহমান বলেন, ‘এই প্রজেক্টের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সবার আগে গুগল করে পেলের সম্বন্ধে জেনেছি। কারণ, আমার জীবন পুরোটাই সংগীতময়। তাঁর সম্বন্ধে অসাধারণ কিছু বিষয় জানার পর চিত্রনাট্যটি পড়েছি। প্রজেক্টটির প্রতি এরপর অসম্ভব সম্মান জন্ম নেয়।’

ব্রাজিলের তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তিকে পৃথিবীর কোনো কোনায় আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবু তাঁর জীবনটা না জেনে কাজ হাতে নিতে চাননি রাহমান। জানার কাজটাও তিনি করেছিলেন মন দিয়ে। হয়তো সে কারণেই সিনেমার তাঁর বানানো ‘জিঙ্গা’ ট্র্যাক ব্রাজিলের দর্শকের মন জয় করে নেয়। অস্কারের মনোনয়ন পর্যন্ত পেয়েছিল, যদিও চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা হয়নি। ঠিক যেমনটা হয়েছিল সিনেমাটির ক্ষেত্রেও—জেফ ও মাইকেল জিমবালিস্টের তৈরি এই ছবি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু পূরণ হয়েছে সামান্যই।

পেলের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো কারভালদো

সিনেমার নামই বলে দিচ্ছে, গল্প কী নিয়ে। পেলের ফুটবলার হয়ে ওঠা থেকে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জয় পর্যন্তই এর চিত্রনাট্য। অর্থাৎ তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ জয় পর্যন্ত এগিয়েছে কাহিনি। অথচ অনেক দর্শক-সমালোচকের চোখে এখানে কোথাও যেন সেই গভীরতা নেই, যা ছিল পেলের বাস্তব জীবনে। মিনাস গেরাইসের দরিদ্র এক ঘরে জন্ম নেওয়া প্রতিভা কতটা কষ্ট, অভাব আর অপমান পেরিয়ে কিংবদন্তি হয়েছেন, সেটার রেশ ছবিতে ছিল, কিন্তু গভীরতা ছিল না। হলিউডে ‘র‍্যাগস টু রিচেস’ গল্প অনেকবারই দারুণ কাজ করেছে। কারণ, সফলতার গল্প মানুষ সব সময়ই শুনতে চায়। কিন্তু এই সিনেমায় সেটার মর্মটা পুরোটা ধরা পড়েনি বলেই মনে হয়। আইএমডিবিতে ৭.১ রেটিং থাকলেও ‘দর্শকের মন’ নামের পরীক্ষায় ছবিটা তেমন ভালো নম্বর পায়নি। ‘গার্ডিয়ান’-এর রিভিউই সেটা বলে দেয়, ‘আগে থেকেই অনুমান করা যায়—এমন একঘেয়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্র।’

পেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো কারভালদো ও কেভিন ডি পাউলা। লিওনার্দো ছিলেন ৯ বছরের পেলে আর কেভিন ১৭ বছরের। পেলে নিজেও অল্প সময়ের জন্য পর্দায় হাজির হয়েছেন। দুই তরুণ অভিনেতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন পেলে নিজে, ‘যে দুই তরুণ অভিনেতা আমার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছে, তারা সত্যিকারের তারকা হবে; কারণ, পর্দায় ও ফুটবল মাঠে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে।’

১৭ বছর বয়সী পেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কেভিন ডি পাউলা

কেভিনের তুলনায় লিওনার্দোর (ডিকো চরিত্রে) পারফরম্যান্সই আলো কুড়িয়েছে বেশি। সিনেমাটির একটা আলাদা শক্তি আছে, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের স্টাইল ‘জিঙ্গা’কে তারা দারুণভাবে তুলে ধরেছে। যেমন ধরুন, বড় হওয়ার পর বাবার সামনে আম নিয়ে তাঁর কসরতের দৃশ্যটি। এটি সিনেমার অন্যতম চোখজুড়ানো মুহূর্ত। বাবা দোনদিনিও ছেলেকে বলেন, ‘সবুজগুলো শুট করার জন্য, পাকাগুলো সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণের। বেশি চেষ্টা করতে যেয়ো না। স্রেফ উপভোগ করো।’

এই ‘উপভোগ করা’র বার্তাটাই ছবির আসল সুর। ফুটবলটা উপভোগ করতে করতে বড় হয়েছেন পেলে। সিনেমায় সে গল্প আছে। কিন্তু নেপথ্যে যে ত্যাগ আর কষ্টের অধ্যায়, সেগুলো পর্দায় তেমনভাবে ফুটে ওঠেনি। দর্শকের মনে তাই গভীর দাগ কাটতে পারেনি।

‘রটেন টমেটোজ’-এ ছবিটির বেশির ভাগ রিভিউ নেতিবাচক। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের সমালোচক অ্যালেন জিবারমান লিখেছেন, ‘সিনেমাটি অতটা মহিমান্বিত করে তোলার মতো পক্ষপাতদুষ্ট নয়। শেষ মুহূর্তগুলো আগেই অনুমান করা গেলেও দর্শককে স্পর্শ করে।’

স্পর্শ তো করেই। কিন্তু সেই স্পর্শ কতটা গভীর, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

পেলে: বার্থ অব আ লেজেন্ড (২০১৬)

পরিচালক: জেফ জিমবালিস্ট, মাইকেল জিমবালিস্ট

অভিনয়: কেভিন ডি পাউলা, লিওনার্দো কারভালদো, রদ্রিগো সান্তুরো, ডিয়েগো বোনেতা

প্রযোজক: ব্রায়ান গ্রেজার, ইভান ওরলিচ

আইএমডিবি রেটিং: ৭.১/ ১০

রানটাইম: ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট