
গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ক্লাবগুলো অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ট্রান্সফারমার্কেট জানিয়েছে, মাত্রই শেষ হওয়া দলবদলে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোই শুধু খরচ করেছে ৩৫০ কোটি ইউরোর বেশি। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ক্লাবগুলোর মোট খরচ ছিল ৩১৪ কোটি ইউরো। গতকাল শেষ দিনে আলেকসান্দার ইসাকসহ (১৪ কোটি ৩৮ লাখ ইউরো) অন্য বড় চুক্তিগুলো মিলিয়ে মোট খরচের অঙ্ক দাঁড়ায় ৩৫৯ কোটি ইউরো (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা)। এই খরচ গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমের তুলনায় দেড় গুণের বেশি। ২০২৪-২৫ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর মোট খরচ ছিল ২২৫ কোটি ইউরো।
প্রিমিয়ার লিগে দলবদলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড ২০২৩ সালে। সেবার গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে ২৭২ কোটি ইউরো খরচ করে ক্লাবগুলো।
প্রিমিয়ার লিগে এবারের দলবদলে খরচ বুন্দেসলিগা, লা লিগা, লিগ আঁ ও সিরি ‘আ’র ক্লাবগুলোর মোট খরচের চেয়ে বেশি। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, ইতালিয়ান সিরি আ (১১৯ কোটি ইউরো), জার্মান বুন্দেসলিগা (৮৫ কোটি ৬০ লাখ ইউরো), স্প্যানিশ লা লিগা (৬৮ কোটি ৪০ লাখ ইউরো) ও ফ্রেঞ্চ লিগ আঁতে (৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো) মোট খরচের পরিমাণ ৩৩৯ কোটি ১০ লাখ ইউরো।
আরও বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সফারমার্কেট—এক মৌসুমে সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুম। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, ২০২৫-২৬ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে পাঁচ দিন আগেই সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে অন্তত ৮৮৬ কোটি ইউরো (৭৬৭ কোটি পাউন্ড), যা ২০২৩-২৪ মৌসুমের ৮৮৫ কোটি ইউরো (৭৫২ কোটি পাউন্ড) খরচের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে খরচে শীর্ষ ১০ ক্লাবের ৯টিই প্রিমিয়ার লিগের। ইংলিশ ক্লাবগুলোর ভিড়ে শীর্ষ দশে নবম স্থানে ‘একা’ জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেন। শীর্ষ পাঁচে সব কটিই প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাব—লিভারপুল (৪৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো), চেলসি (৩২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো), আর্সেনাল (২৯ কোটি ৩০ লাখ ইউরো), নিউক্যাসল ইউনাইটেড (২৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো) ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (২৫ কোটি ইউরো)।
গত বছর কোচ আর্নে স্লটের অধীনে দলবদলে প্রায় চুপচাপই ছিল লিভারপুল। কিন্তু এবার বদলে গেছে দৃশ্যপট। শেষ দিনে আলেকসান্দার ইসাককে কেনার পর লিভারপুলের মোট খরচ ৪৮ কোটি ১৯ লাখ ইউরো। এটি দলবদলের এক মৌসুমে কোনো ক্লাবের সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি চেলসির। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ৪৬ কোটি ২০ লাখ ইউরো খরচ করেছিল তারা।
ট্রান্সফারমার্কেট জানিয়েছে, মোট ১৫ জন খেলোয়াড় কিনেছে লিভারপুল। ১২ জন খেলোয়াড় বিক্রি থেকে আয় করেছে প্রায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ইউরো। ক্লাবটির স্থিতিপত্র ঋণাত্মক -২৬ কোটি ২০ লাখ ইউরো প্রায়।
খরচে দ্বিতীয় চেলসি ২৬ জন খেলোয়াড় কেনায় মোট খরচ করেছে ৩২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। ২৩ খেলোয়াড় বেচে ৩৩ কোটি ২০ লাখ ইউরো আয় করায় স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি এ মৌসুমে আয় ও ব্যয়ের খরচে লাভে আছে। তাদের স্থিতিপত্র ৪১ লাখ ইউরো।
তৃতীয় আর্সেনাল ১৫ খেলোয়াড় কেনায় ২৯ কোটি ৩০ লাখ ইউরো খরচ করেছে। ১৪ খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে ১ কোটি ইউরোর কিছু বেশি। ক্লাবটির স্থিতিপত্র -২৮ কোটি ২০ লাখ ইউরো প্রায়।
খরচে শীর্ষ ১০ ক্লাবের মধ্যে দুটি ক্লাব এ মৌসুমে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে লাভে আছে। চেলসির পাশাপাশি অন্য ক্লাবটি লেভারকুসেন। ২২ খেলোয়াড় কেনায় ১৯ কোটি ৮০ লাখ ইউরো খরচ করলেও ২০ খেলোয়াড় বেচে ২২ কোটি ৯০ লাখ ইউরো আয় করেছে জার্মান ক্লাবটি।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে আয় ও ব্যয়ে ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে তিনটি লিগ—প্রিমিয়ার লিগ, সিরি আ ও লা লিগা। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো খেলোয়াড় কেনায় ৩৫৯ কোটি ইউরো খরচ করার পাশাপাশি খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে ২০৭ কোটি ইউরো। ব্যয় ও আয় সমন্বয় করে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল লিগের স্থিতিপত্র (ব্যালান্স শিট) -১৫১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। ইতালিয়ান সিরি আ-র ক্লাবগুলো ১১৯ কোটি ইউরো খরচের পাশাপাশি খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে ১১০ কোটি ইউরো। লিগটির স্থিতিপত্র -৮ কোটি ৪০ লাখ ইউরো প্রায়। স্প্যানিশ লা লিগায় ক্লাবগুলো ৬৮ কোটি ৪০ লাখ ইউরো খরচের পাশাপাশি খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। লা লিগার স্থিতিপত্র -৪ কোটি ৬০ লাখ ইউরো।
লাভে আছে শুধু জার্মান বুন্দেসলিগা ও ফ্রান্সের লিগ আঁ। খেলোয়াড় কেনায় বুন্দেসলিগার ক্লাবগুলো ৮৫ কোটি ৬০ লাখ ইউরো খরচ করলেও খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে মোট ১০৩ কোটি ইউরো। বুন্দেসলিগার স্থিতিপত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। লিগ আঁতে খেলোয়াড় কেনায় ৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো খরচ করেছে ক্লাবগুলো। কিন্তু খেলোয়াড় বেচে আয় করেছে ১০০ কোটি ইউরো। লিগ আঁর স্থিতিপত্র ৩৪ কোটি ২০ লাখ ইউরো।
ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, খরচে এবার প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকার কথা আগেই বলা হয়েছে। মোট ৩৫৯ কোটি ইউরো খরচ করেছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো।
প্রত্যাশানুযায়ী, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগই খরচে সবার ওপরে। ১১৯ কোটি ইউরো খরচ করে দুইয়ে ইতালিয়ান সিরি আ, ৮৫ কোটি ৬০ লাখ ইউরো খরচ করে তিনে জার্মান বুন্দেসলিগা, ৬৮ কোটি ৪০ লাখ ইউরো খরচ করে চারে স্প্যানিশ লা লিগা ও ৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো খরচ করে পাঁচে ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ।
ইউরোপের অন্যান্য লিগকে টেক্কা দিয়ে খরচে ছয়ে উঠে এসেছে সৌদি প্রো লিগ। প্রায় ৪৭ কোটি ৩০ লাখ ইউরো খরচ করেছে সৌদি আরবের শীর্ষ লিগের ক্লাবগুলো। খেলোয়াড় কেনায় খরচ করেছে ১৩ কোটি ১০ লাখ ইউরো। লিগটির স্থিতিপত্র -৩৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো প্রায়।
খরচে সাতে লিগা পর্তুগাল (৩৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো), আটে তুর্কি সুপার লিগ (৩২ কোটি ইউরো), নয়ে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপ (৩১ কোটি ইউরো) ও দশে ডাচ এরডিভিসি (২০ কোটি ইউরো)।
ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এ তালিকায় শীর্ষে। খেলোয়াড় বেচে ২০৭ কোটি আয় করেছে প্রিমিয়ার লিগ। ১১০ কোটি ইউরো আয় করে দুইয়ে ইতালিয়ান সিরি আ এবং ১০৩ কোটি ইউরো আয় করে তিনে বুন্দেসলিগা। ১০০ কোটি ইউরো আয় করে চারে ফ্রেঞ্চ লিগ আ। এই চারটি লিগই শুধু খেলোয়াড় বেচে অন্তত ১০০ কোটি ইউরো আয় করেছে। ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ইউরো আয় করে পাঁচে স্প্যানিশ লা লিগা। শীর্ষ দশে আর্জেন্টিনার কোনো লিগ নেই। তবে খেলোয়াড় বেচে ৩৫ কোটি ১০ লাখ ইউরো আয় করে নয়ে উঠে এসেছে ব্রাজিলিয়ান সিরি আ।
সবচেয়ে আলোচিত দলবদল আলেকসান্দার ইসাকের নিউক্যাসল ছেড়ে লিভারপুলে যোগদান। তাঁকে কিনতে ব্রিটিশ দলবদলের ফির রেকর্ড ভেঙেছে লিভারপুল। তবে ইংলিশ ডিফেন্ডার মার্ক গেহিকে শেষ পর্যন্ত কিনতে না পারার আফসোস করতে পারে লিভারপুল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শেষ দিনের দলবদলে রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্প থেকে বেলজিয়ান গোলকিপার সেনে ল্যামেন্সকে নিয়ে এসেছে ২ কোটি ১০ লাখ ইউরোয়।
জেডন সানচো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে এক বছরের জন্য ধারে অ্যাস্টন ভিলায় গিয়েছেন। লিভারপুল মিডফিল্ডার হার্ভি এলিয়টকেও ধারে কিনেছে ভিলা। টটেনহাম হটস্পার ধারে কিনেছে পিএসজি স্ট্রাইকার রান্দাল কোলো মুয়ানিকে। ডিফেন্ডার হিনকাপিয়েকে বায়ার লেভারকুসেন থেকে ধারে এনেছে আর্সেনাল।
ইউনাইটেড থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় রিয়াল বেতিসে গেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা আন্তোনি। ইউনাইটেডের রাসমুস হইলুন্দও ধারে গেছেন নাপোলিতে। নাটকীয়তার পর চেলসি থেকে নিকোলাস জ্যাকসন যোগ দিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। এ ছাড়া শেষ দিনের নাটকীয়তায় ছোট-বড় আরও বেশ কিছু দলবদল সম্পন্ন হয়েছে।