এল ক্লাসিকোয় এবার রিয়ালের উৎসব
এল ক্লাসিকোয় এবার রিয়ালের উৎসব

বার্সেলোনার এল ক্লাসিকো হারের ৪ কারণ

গত মৌসুমে টানা চার হারের পর অবশেষে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল মাদ্রিদ। গতকাল লা লিগার খেলায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহামের গোলে রিয়াল জিতেছে জয় ২–১ ব্যবধানে। এই জয় রিয়ালের লা লিগা শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাও বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে।

১০ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ২৭, বার্সেলোনার ২২। প্রশ্ন হচ্ছে, গত মৌসুমে রিয়ালের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা বার্সা গতকাল রাতে কোথায় ভুল করল। আর রিয়ালই–বা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল। এল ক্লাসিকোতে রিয়ালের জয় ও বার্সার হারের তেমনই চারটি কারণ জেনে নেওয়া যাক।

এমবাপ্পে–বেলিংহাম–ভিনির জাদু

বার্সার বিপক্ষে জিততে হলে রিয়ালের আক্রমণভাগের তিন তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে গতকাল জ্বলে উঠতে হতো। দলের ও সমর্থকদের সেই প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি সফল হয়েছেন এই তিনজন। অ্যাটাকিং থার্ডে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো তটস্থ রেখেছিলেন তাঁরা। বিশেষ করে এমবাপ্পে ও বেলিংহাম ছিলেন দুর্দান্ত। এমবাপ্পে যখনই বল পেয়েছেন, প্রতিপক্ষের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন।

গোল করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কাজও ঠিকঠাক করেছেন এই ফরাসি তারকা। তবে এই ম্যাচে রিয়ালের আসল নায়ক বেলিংহাম। মিডফিল্ড একরকম একাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন এই ইংলিশ তারকা। এমবাপ্পের প্রথম গোলে সহায়তার পাশাপাশি দ্বিতীয় গোলটি করেছেন দারুণ ফিনিশিংয়ে।

এমবাপ্পে ও বেলিংহামের মতো প্রভাব রাখতে না পারলেও ভিনিসিয়ুসও ছিলেন উজ্জ্বল। একাধিকবার উইং ধরে বার্সার বক্সে হানা দিয়েছেন। এ ছাড়া বেলিংহামের জয়সূচক গোলের উৎসও ছিল তাঁর দেওয়া দুর্দান্ত এক ক্রস। বলা যায়, রিয়ালের এই তিন তারকাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন।  

রিয়ালের বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি বার্সা

নিষ্প্রভ ইয়ামাল

রাফিনিয়া ও রবার্ট লেভানডফস্কির অনুপস্থিতিতে গতকাল রাতে বাড়তি দায়িত্ব ছিল লামিনে ইয়ামালের ওপর। কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও হয়তো তাকিয়ে ছিলেন ইয়ামালের একক নৈপুণ্যের দিকে। কিন্তু ইয়ামাল গতকাল ভুলে যাওয়ার মতোই একটি ম্যাচ খেলেছেন।

এই ম্যাচে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দর্শকদের দুয়োতে অতিষ্ঠ ছিলেন ইয়ামাল, এর মধ্যেই তাঁকে একরকম পকেটেই ঢুকিয়ে রেখেছিলেন রিয়াল লেফটব্যাক আলভারো কারেরাস। ইয়ামালকে শট নেওয়ার জন্য কোনো ফাঁকা জায়গা দেননি তিনি। এমনকি ড্রিবল করেও সুবিধা করতে পারেননি এই উইঙ্গার। এদিন পুরো ম্যাচে দুটি শট এবং দুটি সুযোগ তৈরি করেছেন ইয়ামাল। আর আটবার ড্রিবলের চেষ্টা করে সফল হয়েছেন মাত্র চারবার। সব মিলিয়ে এই ম্যাচ হয়তো দ্রুতই ভুলতে চাইবেন এই স্প্যানিশ তরুণ।

এল ক্লাসিকোতে হতাশ করেছেন ইয়ামাল

বার্সার অকার্যকর রক্ষণ

গত মৌসুমে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সেলোনার সাফল্যের মূল কারণ ছিল দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক কৌশল। প্রথম লেগের সেই ম্যাচে হাই–লাইন ডিফেন্সের ফাঁদে রিয়ালকে আটকে দিয়েছিলেন ফ্লিকের শিষ্যরা। সব মিলিয়ে সেদিন ১২ বার অফসাইডের ফাঁদে পড়ে রিয়াল, যার মধ্যে এমবাপ্পে একাই পড়েন আটবার।

গতকালও সেই কৌশলে রিয়ালকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল বার্সা। কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছিল তারা। এমবাপ্পের প্রথম জালে পাঠানোসহ একাধিক গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অফসাইড–ফাঁদ ভেঙে দিতে পেরেছেন এমবাপ্পে–বেলিংহামরা। এমবাপ্পের প্রথম গোলটি ছিল সেই ট্র্যাপ ভাঙার ফল।

তবে গোল বাদ দিলেও এই ম্যাচে বার্সার রক্ষণ ছিল একেবারেই নড়বড়ে। রিয়ালের আক্রমণের সামনে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে ছিল বার্সার রক্ষণ। গতিময় ফুটবলে বারবার বার্সার রক্ষণের পরীক্ষা নিয়েছেন এমবাপ্পে–ভিনিরা। ভয়চেক সেজনি একটি পেনাল্টিসহ ১০টি গোল না বাঁচালে এই ম্যাচে আরও বড় ব্যবধানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো বার্সাকে।

উদ্‌যাপনে রিয়ালের জয়ের তিন নায়ক ভিনিসিয়ুস, বেলিংহাম ও এমবাপ্পে

নিস্তেজ বার্সা ও আগ্রাসী রিয়াল

গত মৌসুমের শতভাগ সাফল্যের কারণেই হয়তো বার্সা খানিকটা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। ম্যাচের আগে ইয়ামালের ‘রিয়াল সব সময় চুরি করে আর অভিযোগ করে’ কথাটাও হয়তো তাঁরই ফল। এসব বিষয় বার্সার সামগ্রিক পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। পিছিয়ে পড়ার পর যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল, বার্সা তা দেখাতে পারেনি।

এমনকি প্রথমবার সমতা ফিরিয়েও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। রিয়ালের ওপর আক্রমণ–ঝড় বয়ে দেওয়ার পরিবর্তে নিজেরাই বরং বেশি চাপে ছিল। এই ম্যাচে রিয়ালের ২১ শটের বিপরীতে বার্সার শট ছিল ১৩টি—আক্রমণে কাতালানরা কতটা পিছিয়ে ছিল তা এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। এ ছাড়া চাপের মুহূর্তে কৌশলেও খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি তারা।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ফ্লিকের ডাগআউটে থাকতে না পারাও বড় ভূমিকা রেখেছে। বিপরীতে রিয়ালের জন্য ম্যাচটি ছিল মর্যাদা ফেরানোর। ফলে শুরু থেকেই নিজেদের লক্ষ্যে স্থির ছিল তারা। যা শেষ পর্যন্ত সাফল্যও এনে দিয়েছে আলোনসোর দলকে।