প্রথম ম্যাচে কেমন খেলল আলোনসোর রিয়াল

গত জুলাইয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে ৪–০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার ৪১ দিন পর লা লিগায় নতুন মৌসুম শুরু করল রিয়াল মাদ্রিদ। গতকাল রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ওসাসুনাকে ১–০ গোলে হারিয়ে নতুন মৌসুমে শুভসূচনা করেছে জাবি আলোনসোর দল। পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। গত জুনে রিয়াল কোচের দায়িত্ব নিলেও এই ম্যাচ দিয়েই রিয়ালে শুরু হলো সত্যিকারের ‘আলোনসো–যুগ।’ তা প্রথম ম্যাচে কেমন খেলল আলোনসোর রিয়াল?

রদ্রিগোকে বেঞ্চে বসিয়ে লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ৩ পয়েন্ট তুলে নিয়েছেন আলোনসো। স্প্যানিশ লেফট ব্যাক আলভারো ক্যারেরাস ও আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোরও এই ম্যাচে অভিষেক হলো রিয়ালের জার্সিতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ আলোনসোর অধীন লা লিগায় রিয়ালের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করেছে।

পাসের খেলা

কার্লো আনচেলত্তির অধীন রিয়াল গত মৌসুমে যেমন খেলেছে, সেই ধাঁচ থেকে খেলোয়াড়দের বের করে এনেছেন আলোনসো। আনচেলত্তির রিয়ালকে গত মৌসুমে প্রতিপক্ষকে বল নিয়ে নিজেদের সীমানায় ঢুকতে দিতে দেখা গেছে। প্রতিপক্ষ দীর্ঘ সময় রিয়ালের মাঠের অর্ধে বল দখলে রেখেছে। বল কেড়ে সুযোগ বুঝে প্রতি আক্রমণে উঠেছে রিয়াল। কিন্তু আলোনসো এ পুরোনো অভ্যাস থেকে বের করে এনেছেন দলকে। কাল রাতের ম্যাচ দেখে গোটা মৌসুমে রিয়াল কীভাবে খেলবে, সে বিষয়ে ধারণা পেতে পারে প্রতিপক্ষ দলগুলো।

ওসাসুনার বিপক্ষে আনচেলত্তির ধাঁচের ঠিক উল্টোটা খেলেছে রিয়াল। কিক অফের পর থেকেই পাসের পর পাস খেলে চড়াও হয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর। ম্যাচটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। ওসাসুনা মাঝমাঠ পেরিয়ে যেতে পেরেছে খুব কমই। মাত্র ২৯ শতাংশ সময় বলের দখল রাখতে পেরেছে ওসাসুনা।

পাসের খেলায় রিয়ালের হয়ে মূল ভূমিকায় ছিলেন তুর্কি মিডফিল্ডার আরদা গুলের

বলের দখল রাখাকেন্দ্রিক এ খেলায় তুর্কি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আরদা গুলেরকে শুরু থেকে খেলিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন আলোনসো। টনি ক্রুস ও লুকা মদরিচের শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার আশা গুলেরের কাছ থেকে পেয়েছে রিয়াল। ২০ বছর বয়সী গুলের মাঠের সব মিডফিল্ডারের চেয়ে বেশি সফল পাস (৭২) খেলেছেন, ভুল পাস দিয়েছেন মাত্র ৬টি।

চোখে পড়ার মতো আরও একটি বিষয় হলো, বল হারানোর পর রিয়ালের খেলোয়াড়েরা তা আবার দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এ জন্য মাঠেই স্বাগতিক দর্শকদের করতালি পান। প্রেসিংয়েও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন ভিনি। গোটা ম্যাচে রিয়াল পাস খেলেছে ৬৬০টি, যা ওসাসুনার খেলা পাসসংখ্যার প্রায় তিন গুণ।

জুড বেলিংহামের শূন্যতা

ইংলিশ মিডফিল্ডারের সৃষ্টিশীলতার অভাবটা টের পেয়েছে আলোনসোর রিয়াল। বেলিংহাম সাধারণত প্রতিপক্ষের রক্ষণে ‘লাইন ব্রেক’ করতে পারেন খুব ভালো। সেটা হয় ডিফেন্সচেরা পাসে কিংবা দৌড়ে। কাঁধের অস্ত্রোপচার থেকে সেরে না ওঠায় ওসাসুনার বিপক্ষে খেলতে পারেননি বেলিংহাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে আক্রমণে ভিনিসিয়ুসের ওপর বেশি ভরসা রাখতে হয় রিয়ালকে। প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারকে ভিনি যখনই কাটাতে পারেননি এবং এমবাপ্পেও কড়া মার্কিংয়ে থেকেছেন, তখন রিয়ালের আক্রমণভাগকে মোটেও ত্রাসের সঞ্চারকারী মনে হয়নি।

অস্ত্রোপচার থেকে সেরে না ওঠায় বেলিংহামকে ওসাসুনার বিপক্ষে পায়নি রিয়াল

শুধু ভিনির ওপর ভরসা রাখায় রিয়ালের আক্রমণের ধাঁচটা বারবার একই রকম মনে হয়েছে এবং সেটা ওসাসুনার জন্য সমাধান করা খুব কঠিন হয়নি। মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের মাঝখানে যোগসূত্র হিসেবে বেলিংহামের অভাবটা তাই স্পষ্টই হয়ে উঠেছিল। আলোনসোর তারকাখচিত আক্রমণভাগ হয় নিজেরা সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেছে অথবা মাঝমাঠে সতীর্থরা বল দখলে রাখার সময় স্রেফ দাঁড়িয়ে থেকেছেন।

সেট পিস কিংবা দূরপাল্লার শট ছাড়া তাই পরিকল্পিত আক্রমণ দেখা যায়নি রিয়ালের, যেটা করতে মাঝমাঠে একজনকে ‘কন্ডাক্টর’–এর ভূমিকা পালন করতে হয়। বেলিংহাম না ফেরা পর্যন্ত ৬৮ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াজের বদলি হয়ে নামা ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর জন্য সেই ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে।

অনুজ্জ্বল ট্রেন্ট আলেক্সান্দার–আর্নল্ড

নতুন মৌসুম শুরুর আগে রিয়াল যত খেলোয়াড় কিনেছে, তাঁদের মধ্যে মূল আকর্ষণ ছিলেন লিভারপুল থেকে যোগ দেওয়া রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্দার–আর্নল্ড। কিন্তু লা লিগায় অভিষেক ম্যাচে প্রায় নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন এই ইংলিশ তারকা। শুরুর একাদশের হয়ে নামা ট্রেন্ট মাঠে ছিলেন ৬৮ মিনিট। এর মধ্যে তেমন কিছু করতে না পারায় বাধ্য হয়েই তাঁকে তুলে দানি কারবাহলকে মাঠে নামান কোচ আলোনসো।

লা লিগায় অভিষেকে ভালো খেলতে পারেননি ট্রেন্ট আলেক্সান্দার–আর্নল্ড

ট্রেন্ট যে সাতটি ক্রস করেছেন, তার মধ্যে শুধু একটি ক্রস লক্ষ্যে ছিল। সফল ট্যাকল করতে পারেননি এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে প্রতিবারই হেরেছেন। দূরপাল্লার যে চারটি পাস দেন, একটিও লক্ষ্যে ছিল না। তবে ট্রেন্টের অনুজ্জ্বল হয়ে থাকার কারণ শুধু তিনি নিজেই নন, রিয়াল ম্যাচে বেশির ভাগ সময়ই আক্রমণ সাজিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে। ডান প্রান্তে তাই নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো একা পড়ে যান ট্রেন্ট।

খেলায় অংশ নিতে বারবার ডান প্রান্ত থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছেন ট্রেন্ট। রিয়ালের মাঝমাঠ বলটা ছড়িয়ে খেললে হয়তো তাঁকে কার্যকর ভূমিকায় দেখা যেত। রিয়ালের আক্রমণে ট্রেন্টকে কীভাবে কাজে লাগাবেন, সে পথ এখন খুঁজে বের করতে হবে আলোনসোকে।