Thank you for trying Sticky AMP!!

আগামী মৌসুমে জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়নস লিগে না খেললে দি মারিয়া কি থেকে যাবেন?

জুভেন্টাসের অপরাধ কী ছিল, সামনে কী অপেক্ষা করছে

দলবদলের আর্থিক বিবরণীতে অনিয়মের দায়ে শুক্রবার ইতালিয়ান সিরি আ-তে জুভেন্টাসের ১৫ পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয়। ইতালিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের স্পোর্টিং ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে সিরি আ পয়েন্ট তালিকায় তিন থেকে দশ নম্বরে নেমে গিয়েছিল জুভেন্টাস। এ ছাড়া ক্লাবটির বর্তমান ও সাবেক পরিচালকদের কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবটি এমন কী কাণ্ড ঘটিয়েছে, যার জেরে এমন শাস্তি? ইএসপিএনের সৌজন্যে প্রশ্নোত্তর আকারে বিষয়টি বোঝা যাক।

জুভেন্টাসকে কোন অপরাধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে?

দলবদলবিষয়ক আর্থিক বিবরণীতে অনিয়মের দায়ে। আরও পরিষ্কার করে বললে, খেলোয়াড় অদলবদলের ক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায়। ব্যাপারটা এমন—একজন খেলোয়াড়কে অন্য ক্লাবে বিক্রি করলেন। ফি ধরা হলো ১ কোটি ইউরো। খেলোয়াড় বিক্রি বাবদ এই টাকা আপনি পেয়ে গেলেন। আবার একই দামে অন্য একজন খেলোয়াড়কে আপনি পাঁচ বছরের চুক্তি কিনে নিলেন। মানে বছরপ্রতি খরচ ২০ লাখ। এখন আপনি কাগজে-কলমে এক বছরের হিসাবে দেখালেন, বিক্রি বাবদ আয় ১ কোটি, কেনা বাবদ ব্যয় ২০ লাখ। বছর শেষে লাভ ৮০ লাখ ইউরো।

Also Read: দলবদল নিয়ে মিথ্যাচারের দায়ে জুভেন্টাসের ১৫ পয়েন্ট জরিমানা, নেমে গেল দশে

হিসাবটা কাগজে-কলমে ঠিকই আছে, কিন্তু বাস্তবে সেটা নয়। কারণ, ক্রয় করা খেলোয়াড়টির জন্য প্রতিবছরই আপনাকে ২০ লাখ ইউরো করে খরচ করতে হবে। তারপরও ইউরোপের অনেক ক্লাবই এভাবেই প্রতিবছরের হিসাব মেলায়। সমস্যা হয়ে যায়, যখন ক্লাবগুলো খেলোয়াড় অদলবদলের ক্ষেত্রে (সোয়াপ ডিল) দাম বাড়িয়ে দেখায়।

তুরিনে ক্লাবের স্কার্ফ হাতে জুভেন্টাস সমর্থকরা

কাগজে-কলমে, দুটিই ভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি। কিন্তু বাস্তবে একটি অপরটির সম্পূরক। কারণ, এ ক্ষেত্রে কোনো নগদ অর্থের হাতবদল ঘটছে না। আপনি চাইলেই খেলোয়াড়টির দাম নিজের মতো করে বসিয়ে দিতে পারছেন। অর্থাৎ, ‘এ’ ক্লাবের কাছে খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় দেখালেন ১০ কোটি ইউরো, কিন্তু একজনকে ৫ বছরের চুক্তিকে কিনে খরচ দেখালেন ২ কোটি। বাকি ৮ কোটিই লাভ দেখালেন। বেশ কিছু সোয়াপ ডিলের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটিই ঘটিয়েছে জুভেন্টাস।

এই অভিযোগ তো জুভেন্টাসের বিপক্ষে আগেও উঠেছে এবং নিষ্কৃতিও পেয়েছে?

হ্যাঁ, জুভেন্টাস এবং আরও ৮টি ক্লাবের (জেনোয়া, সাম্পদোরিয়া, এমপোলি, প্রো ভারসেলি, নোভারা, পেসকারা, পারমা ও পিসা) বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর তারা খালাস পেয়েছে। আদালতকে তারা বোঝাতে পেরেছে যে ওই খেলোয়াড়দের মূল্য বাড়িয়ে ধরার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। সবচেয়ে বড় কথা, খেলোয়াড়ের দাম ধরা হবে বাজার-চাহিদা বিবেচনা করে। এখানে কেউ কারও দলবদল ফি নির্ধারণ করে দিতে পারে না।

Also Read: ‘পৌরুষ দেখাতে’ জুভেন্টাসেই থাকবেন আলেগ্রি

তাহলে জুভেন্টাসের মামলা আবার চালু হলো কেন?

ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। জুভেন্টাসকে দায়মুক্তি দেওয়ার পর প্রসিকিউটরদের হাতে নতুন কিছু প্রমাণ এসেছে। ভিন্ন একটি অপরাধ তদন্তের (প্রিজমা হিসেবে পরিচিত) মাধ্যমে পাওয়া এসব অডিও এবং লিখিত প্রমাণপত্রে বোঝা যাচ্ছে, জুভেন্টাস শুধু সোয়াপ ডিলের ঘটনায় খেলোয়াড়দের মূল্যই বাড়ায়নি, পদ্ধিতগতভাবে আর্থিক বিবরণীও পাল্টে দিয়েছে, যা বেআইনি।

তারা ভালো করেই জানত, এ ধরনের পরিকল্পিত কাণ্ড অবৈধ। ফৌজদারি অপরাধ। জুভেন্টাস যেহেতু ইতালিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ঠিকঠাকভাবে জমা দিতে হবে। তদন্তকারীদের মতে, জুভেন্টাসের হিসাব বিবরণীতে থাকা অঙ্ক ভুয়া।

যখন তাদের খালাস দেওয়া হয়েছিল, তখন এই সাক্ষ্যপ্রমাণ স্পোর্টিং প্রসিকিউটরদের হাতে ছিল না। নতুন প্রমাণ পাওয়ায় মামলা সচল করা হয়েছে।

তাহলে তো জুভেন্টাসের সঙ্গে অন্য ক্লাবও শাস্তি পাওয়ার কথা...

হ্যাঁ, এটি সত্যি। আদালতে জুভেন্টাসের আত্মপক্ষ সমর্থনের অন্যতম যুক্তিও হবে এটিই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জুভেন্টাস যা করেছে, সেটি ছিল সচেতনতার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে। তদন্তে অন্য ক্লাবের বিষয়ে প্রমাণ এলে, তাদেরও এর আওতায় আনা হবে।

Also Read: জরিমানার পর এবার মাঠেও পয়েন্ট খোয়াল জুভেন্টাস

জুভেন্টাসের এখন কী হবে?

এখন তারা শাস্তির লিখিত রায়ের অপেক্ষা করবে। সেটা পেলে ইতালির ‘স্পোর্ত গ্যারান্টি বোর্ডে’র কাছে আপিল করতে পারবে। এ বিষয়ে ইতালিতে গ্যারান্টি বোর্ডই সর্বোচ্চ আদালত। তারা কিন্তু সাক্ষী, প্রমাণ, ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করবে না। তারা দেখবে স্পোর্তিং কোর্ট বিচারিক প্রক্রিয়ায় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেছে কি না, সঠিকভাবে নিজেদের আইন প্রয়োগ করেছে কি না।

এর অর্থ হচ্ছে, আপিলের রায়ে হয় জুভেন্টাসের শাস্তি বহাল থাকবে, নয়তো বাতিল হয়ে যাবে। শাস্তির পরিমাণ কমার মতো মাঝামাঝি কিছু ঘটবে না।

গ্যারান্টি বোর্ডের রায়ের পরও অবশ্য জুভেন্টাসের সামনে শেষ একটি সুযোগ থাকবে। সেটা হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস। তবে সেটাও সহজ হবে না। কারণ, ক্লাবটির আইনজীবীরা আরও বেশ কয়েকটি তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

Also Read: টিকিটে ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড় দিয়ে হাস্যরসের শিকার জুভেন্টাস

কী রকম ব্যস্ততা?

প্রিজমা তদন্তে শুধু পদ্ধতিগত দলবদল অনিয়মের অভিযোগই তদন্ত হচ্ছে না, করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় খেলোয়াড়দের বেতন কর্তন নিয়ে মিথ্যা হিসাব-বিবরণীর অভিযোগও আছে। বলা হয়েছে, খেলোয়াড়েরা চার মাসের বেতন ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, কিছু খেলোয়াড়ের বেতনের একটি অংশ পরে ফেরতও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এক আর্থিক বছরের খরচ আরেক আর্থিক বছরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টিও গুরুতর। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ায় সব তথ্য ঠিকঠাকভাবে জমা দেওয়ার কথা, যেটা হয়নি। এটিও ফৌজদারি তদন্তের আওতায় আছে।

আরেক দিকে উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি লঙ্ঘনের (এফএফপি) অভিযোগেও তদন্ত চলছে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে। এফএফপির হিসাব মেলানোর জন্য মিথ্যা হিসাব দিয়ে থাকলেও সেখানেও শাস্তির মুখে পড়বে তুরিনের ক্লাবটি।

এ ছাড়া প্রিজমা তদন্তে অন্য ক্লাবগুলোর সঙ্গে সোয়াপ ডিলের তদন্ত আবার শুরু হতে পারে। কারণ, আগের বার পর্যাপ্ত প্রমাণ ছিল না প্রসিকিউটরদের হাতে।

Also Read: বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে পদত্যাগ জুভেন্টাস সভাপতির

মাঠের খেলায় কী প্রভাব পড়বে?

নেতিবাচক। গত বছর ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে জুভেন্টাসের, যা আগের বছরের চেয়েও (২১ কোটি) বেশি ছিল। এই ক্ষতির হিসাবটা হয়েছে সন্দেহজনক লেনদেন আর লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে দেখানোর পরও। এখন যদি স্পোর্তিং কোর্টের দেওয়া শাস্তি বাতিল না হয়, খুব সম্ভবত আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে না জুভেন্টাস। কারণ, মাঠের ফুটবলে ১৫ পয়েন্টের ক্ষতিপূরণ করা খুবই কঠিন। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারলে আরেক দফা আর্থিক ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।

গত কয়েক বছরে তো শেয়ারহোল্ডাররা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন, ৭০ কোটির মতো ...

হ্যাঁ। এ কারণেই নতুন প্রেসিডেন্ট জিয়ানলুকা ফেরেরা বলেছেন, ক্লাব চালাতে কঠোর হবেন তিনি। যে কারণে যুব একাডেমির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে, খেলোয়াড় কেনা বাবদ খরচ কমানো হচ্ছে ...।