শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড—টানা চার ম্যাচে জিতে খো খো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ছেলেদের দল। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। একই সমান্তরালে চলা মেয়েদের আসরে টানা তিন ম্যাচে শ্রীলঙ্কা, জার্মানি ও ভুটানকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করেছে বাংলাদেশ নারী দল।
বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী দুই দলেরই সমানতালে ভালো করা বিরল ঘটনাগুলোর একটি। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে সেই বিরল ঘটনাই ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। খো খো নিয়ে আয়োজকদের যে প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা, তাতে এই খেলাটি হতে পারে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের ছাপ রাখার মঞ্চও। ২ হাজার বছরের পুরোনো খেলা খো খোর দৃষ্টি এখন অলিম্পিক গেমসে।
খো খো মূলত দক্ষিণ এশিয়ান খেলা। দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এ খেলার প্রচলন থাকলেও সুনির্দিষ্টি নিয়ম কাঠামো তৈরি হয়েছে বিশ শতকে। এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকেই প্রদর্শনী ক্রীড়া হিসেবে খো খোর অংশগ্রহণ ছিল। তবে এরপর আর কোনো অলিম্পিক গেমসে খেলাটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ক্রিকেট।
আমার বড় বোনও খো খো খেলত। কিন্তু নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারতে পারেনি। এখন বিশ্বকাপ খেলার মাধ্যমে আমরা প্রথম প্রতিবন্ধকতা টপকে গেছি।ভারত নারী দলের খেলোয়াড় নাসরিন শেখ
প্রদর্শনী আকারে অলিম্পিকে উপস্থিতির প্রায় শত বছর পর খো খো আবারও আলোচনায়। খো খো ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল খো খো ফেডারেশনের যৌথ আয়োজনে দিল্লিতে চলছে প্রথম খো খো বিশ্বকাপ। একসঙ্গে চলছে ছেলে ও মেয়েদের টুর্নামেন্ট। অংশ নিচ্ছে ছয় মহাদেশের ২৩টি দেশ।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোর অংশগ্রহণে খো খো বিশ্বকাপ আয়োজন করায় যারপরনাই খুশি খেলোয়াড়েরা। ভারত নারী দলের খেলোয়াড় নাসরিন শেখ এএফপিকে বলেন, ‘আমার বড় বোনও খো খো খেলত। কিন্তু নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারতে পারেনি। এখন বিশ্বকাপ খেলার মাধ্যমে আমরা প্রথম প্রতিবন্ধকতা টপকে গেছি। পরবর্তী লক্ষ্য অলিম্পিকে জায়গা করে নেওয়া।’
খো খোর বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিক স্বপ্নের ভিত্তিটা তৈরি হয়েছে আলটিমেট খো খো লিগ থেকে। ভারতের অন্যান্য খেলার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আদলে ২০২২ সালে শুরু করা হয়েছিল খো খোর আলটিমেট লিগ। ইনডোরে ম্যাট, টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার মিলিয়ে এটি দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে এটি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ দর্শকের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ (শীর্ষ তিনে ক্রিকেটের আইপিএল, ফুটবলের আইএসএল ও প্রো কাবাডি লিগ)।
এ বিষয়ে খো খো ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট সুধাংশু মিত্তাল এএফপিকে বলেন, ‘কাদা থেকে ম্যাটে রূপান্তরই খো খোর জনপ্রিয়তায় মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটা এখন বৈশ্বিক খেলা হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ৫৫টা দেশ খো খো খেলে। জার্মানি, ব্রাজিল, কেনিয়ার স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে এটির ব্যপ্তি বেড়ে চলেছে। কারণ, এই খেলায় গতি আছে, তীব্রতা আছে, খেলতে উপকরণও কম লাগে।’
মিত্তালের আশা, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও অনেক দেশে খো খো ছড়িয়ে পড়বে। যা অলিম্পিক গেমসে এটিকে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা জোরালো করে তুলবে। কাকতালীয় বিষয় হচ্ছে, ২০৩৬ সালে আহমেদাবাদে অলিম্পিক আয়োজন করতে চায় ভারত। কয়েক স্তরের বিশদ মূল্যায়নের পর ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) যদি প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, তবে ভারতের অলিম্পিকেই খো খো দেখা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।
আপাতত খো খো–সংশ্লিষ্টরা খেলাটিকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। ভারতের ছেলেদের দলের অধিনায়ক প্যাট্রিক ওয়াইকার এএফপিকে বলেন, ‘খো খোতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ক্রিকেটের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, যেটা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে গেছে। এখন খো খোও টিভিতে সম্প্রচার হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটা অন্য উচ্চতায় উঠে যাবে।’