দুই দাবাড়ু ফাহাদ ও মনন রেজা
দুই দাবাড়ু ফাহাদ ও মনন রেজা

বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে চোখ ফাহাদ-মননের

ফাহাদ রহমানের জন্য দাবা বিশ্বকাপে খেলা নতুন কিছু নয়, তবে মনন রেজা এবারই প্রথম যাচ্ছেন বিশ্বকাপে। ১ নভেম্বর ভারতের গোয়ায় শুরু হতে যাওয়া ফিদে দাবা বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের দুই তরুণ আন্তর্জাতিক মাস্টার। ফাহাদের এটি তৃতীয় বিশ্বকাপ, মননের প্রথম। দুই দাবাড়ুরই ভালো ফলের লক্ষ্য। ফাহাদ আগের দুবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছেন আর মনন চেষ্টা করবেন নিজের সেরাটা দেখাতে।

মনন-ফাহাদের কোচ রুশ গ্র্যান্ডমাস্টার পিটার কিরিয়াকভ ভিসা জটিলতায় ভারত যেতে পারছেন না, তবে ঢাকা থেকে অনলাইনে পরামর্শ দেবেন। ফাহাদ আগামীকাল সকালে বিমানে ঢাকা ছাড়বেন। মননকে নিয়ে তাঁর মা আজ রাতে সড়কপথে ঢাকা থেকে কলকাতা রওনা হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, এরপর কলকাতা থেকে গোয়া যাবেন বিমানে। অবশ্য মননের ভিসা আগে হয়ে গেলেও আজ সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিসা হাতে পাননি মননের মা।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন দুই দাবাড়ুর বিমানভাড়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ দেড় লাখ টাকা দিয়েছে। মনন তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকেও আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন, তবে বিশ্বকাপের আগে সড়ক পথে ভ্রমণ মননের শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে মনে করছে ফেডারেশন।

বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা

প্রথম রাউন্ডে মনন মুখোমুখি হবেন নরওয়ের ২৬৩১ রেটিংধারী ২৬ বছরের গ্র্যান্ডমাস্টার আরিয়ান তারির। ফাহাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বের সাবেক ২ নম্বর দাবাড়ু ইউক্রেনের গ্র্যান্ডমাস্টার ভ্যাসলি ইভানচুক। ৫৬ বছর বয়সী ইভানচুকের রেটিং ২৭৫৩। দুজনই কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি। ২০১৯ ও ২০২৩ বিশ্বকাপে দুটি করে ম্যাচ খেলে সব কটিই হেরেছেন ফাহাদ। তবে বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে চান তিনি, ‘হার থেকে শিক্ষা নেব। গত দুবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব। চাইব ভালো কিছু করতে।’

ফাহাদের তুলনায় মননের প্রতিপক্ষ আরিয়ানকে কিছুটা সহজ ধরা হচ্ছে। মনন চেষ্টা করবেন নিজের সেরাটা দিতে, ‘চমক দেখাতে পারলে, সেটা একটা অর্জন হবে।’

বিশ্বকাপ–যাত্রায় দুই দাবাড়ুকে শুভকামনা জানিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ বলেছেন, ‘আরিয়ান ছন্দে নেই, তবে আমাদের দুই তরুণও ফর্মে নেই। ফাহাদ প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারলে সুযোগ আসতে পারে আর মননের উচিত নিজের সেরাটা খেলা।’

বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একবারই কেউ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন। ২০০৭ সালে রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব সে সময়ে বিশ্বের ১৯তম খেলোয়াড় ইউক্রেনের গ্র্যান্ডমাস্টার পাভেল এলজানভকে হারিয়ে দুই ম্যাচে দেড় পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠেন।

দাবাড়ু ফাহাদ রহমান

২০২১ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডের খুব কাছে যান নিয়াজ মোরশেদও। তবে ফুটবলের সাডেন ডেথের মতো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে ছিটকে যান তিনি। প্রথম রাউন্ডে প্যারাগুয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার দেলগার্দো রামিরেসের বিপক্ষে ১-১ করেন। এরপর দুজনের মধ্যে ১৫ মিনিটে দুটি প্লে–অফই হয় ড্র। ১০ মিনিটের প্লে–অফের প্রথমটি নিয়াজ জেতেন, দ্বিতীয়টিতে হার। সবশেষে ৫ মিনিটের প্লে–অফের দুটিতেই হেরে বিদায় নেন নিয়াজ।

বাংলাদেশের দাবাড়ুরা প্রথম রাউন্ডেই কেন আটকে যান? নিয়াজের চোখে রেটিং কম হওয়াই এর বড় কারণ, ‘আমাদের দাবাড়ুদের রেটিং কম হওয়ায় শুরুতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখে পড়তে হয়। ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা কঠিন হয়ে যায়।’

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দাবা বিশ্বকাপে নিয়াজ অংশ নেন ১৯৯৭ সালে, নেদারল্যান্ডসে। তিনি দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে খেলেছেন ২০২১ সালে। বাংলাদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচবার দাবা বিশ্বকাপে খেলেছেন প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। সর্বশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপে অংশ নেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব ও ফাহাদ।