রেজিং বুল: সত্য ঘটনা থেকে তৈরি মাস্টারপিস

মার্টিন স্করসিস ও রবার্ট ডি নিরোর সেরা সিনেমা কোনটা, এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে অনেকের মতে উত্তরটা হচ্ছে—‘রেজিং বুল’। ‘সিনেমাটা দেখতে কষ্টকর, কিন্তু সহানুভূতিহীন এক নায়কের তীব্র আর শক্তিশালী কাহিনি’—এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা রিভিউ সাইট রটেন টমেটোজ।

আসলে ‘রেজিং বুল’ হলো মানুষের ভেতরে জমে থাকা ক্রোধ আর সন্দেহের গল্প। সেই উন্মত্ততাই মানুষকে চূড়া থেকে টেনে আনে মাটিতে।

সাবেক মিডলওয়েট চ্যাম্পিয়ন জেক লামোত্তার আত্মজীবনী ‘রেজিং বুল: মাই স্টোরি’ অবলম্বনে সিনেমাটি বানিয়েছেন প্রবাদপ্রতিম পরিচালক মার্টিন স্করসিস। লামোত্তার চরিত্রে অভিনয় করে অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন রবার্ট ডি নিরো।

দুই ঘণ্টার সিনেমাটা যত এগোয়, ততই মনে হয়—এটা আসলে শুধু বক্সিংয়ের গল্প নয়। বরং এক বক্সারের ভেতরের অস্থিরতা, সন্দেহ আর রাগ কেমন করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আর খেলায় প্রভাব ফেলে, সেটাই দেখানো হয়েছে। যেমন এক দৃশ্যে জেকের স্ত্রী ভিকি তাঁর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘দেখতে সুন্দর’ বলে ফেলেন। তারপর রিংয়ে জেক সেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে এমনভাবে মারেন যে মুখের অবস্থা পাল্টে যায়। লড়াই শেষে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘এখন আর সুন্দর নেই।’ কথাটা যতটা ঠান্ডা, বার্তাটা ততটাই ভয়ের।

জো পেস্কি ও রবার্ট ডি নিরো অসাধারণ অভিনয় করেছেন

সিনেমাটি বানাতে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। রিংয়ের লড়াইগুলো রক্ত আর সহিংসতায় ভরপুর, কারও কারও কাছে একটু বিরক্তিকরও লাগতে পারে। তবে পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে এই ‘খেপা ষাঁড়’ ভাবটা ফুটিয়ে তুলেছেন। এ জন্য তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ইতালির পরিচালক লুচ্চিনো ভিসকোন্তির ‘রোকো অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স’ থেকে।

আরও একটি দিক থেকে সিনেমাটি অনন্য। এর সম্পাদনা আর সাউন্ড মিক্সিং। এগুলোর ওপর আলাদা গুরুত্ব দিয়েছিলেন স্করসিস। কারণ, তখন তাঁর ধারণা ছিল, এটাই হয়তো তাঁর শেষ সিনেমা। সেটাই শেষ কি না, তা তো আমরা এখন জানিই। অস্কারে আটটি বিভাগে মনোনয়ন পায় সিনেমাটি। এর মধ্যে ‘বেস্ট এডিটিং’ জিতে নেয়।

গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন ক্যাথি মরিয়ার্টি

কীভাবে সিনেমাটা বানানো শুরু হলো, সেটাও এক দারুণ গল্প। একবার তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন নিরো গিয়ে বইটা তাঁর হাতে ধরিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের এটা বানানো উচিত।’ এর পরই কাজ শুরু হয়। তবে শুরুতে ‘রেজিং বুল’ আদৌ মুক্তি পাবে কি না, সেটা নিয়েই সন্দেহ ছিল। স্করসিস নিজেই বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল, এটা শুধু নিজেদের জন্য বানাচ্ছি।’ সমালোচক রজার এবার্ট পরে লিখেছিলেন—এই সিনেমার মাধ্যমে স্করসিস নতুনভাবে জন্ম নেন।

প্রথম দিকে সিনেমাটা বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলেনি। আয় হয়েছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অনেকেই রক্তাক্ত দৃশ্যের জন্য সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ‘কাল্ট ক্লাসিক’ হয়ে যায়। খেলাধুলা কিংবা জীবনভিত্তিক সিনেমার তালিকায় ‘রেজিং বুল’ এখন অন্যতম সেরা।

অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন রবার্ট ডি নিরো

১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রথমবারের মতো ‘সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ও সৌন্দর্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ’ সিনেমাগুলো সংরক্ষণ করতে শুরু করে। আর সেই ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রির প্রথম নামই ছিল ‘রেজিং বুল’।

রেজিং বুল (১৯৮০):

পরিচালক: মার্টিন স্করসিস

চিত্রনাট্য: পল শ্রেরডের ও মার্দিক মার্টিন

অভিনয়: রবার্ট ডি নিরো, জো পেস্কি, ক্যাথি মরিয়ার্টি, ফ্যাঙ্ক ভিনসেন্ট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০

রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট