
ক্রিকেটে নেপালের প্রথম বড় তারকা সন্দীপ লামিচানে। মাঝে ধর্ষণের অভিযোগে জেল খেটেছেন, পরে খালাস পেয়ে এই লেগ স্পিনার আবারও ক্রিকেটে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন। এবারের বিপিএলে খেলছেন রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের হয়ে। কাল সিলেটে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন নেপালের ক্রিকেট, টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির সম্ভাবনা আর দেশে নিজের জনপ্রিয়তার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান।
বাংলাদেশে তো অনেকবারই এসেছেন। কেমন লাগে এই দেশকে?
সন্দীপ লামিচানে: এ নিয়ে সম্ভবত সাতবার এলাম। এখানকার মানুষের সঙ্গে নেপালের মানুষের অনেক মিল। সবাই খুব বন্ধুভাবাপন্ন। আমার কখনোই মনে হয় না যে নেপালের বাইরে আছি।
ক্রিকেটে আপনার শুরুটা কীভাবে?
লামিচানে: শুরুটা হয়েছিল বোনের বাড়ির পেছনে খেলতে খেলতে। আমার বোন আর দুলাভাই-ই আমাকে গড়ে তুলেছেন বলতে পারেন, আমি এ জন্য তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। পরে একাডেমিতে গিয়েছি। সেখান থেকে এত দূর পর্যন্ত আসা; সবকিছুই সম্ভব হয়েছে বোন আর বোনজামাইয়ের জন্য।
লেগ স্পিনারই হলেন কেন?
লামিচানে: শুরুর দিকে মিডিয়াম পেস করতাম। কিন্তু বোলারদের আউট করতে পারতাম না। তারপর একদিন হুট করে মনে হলো নেপালে তো লেগ স্পিনার নেই, চেষ্টা করে দেখি। শুরুতে অফ স্পিনও করেছি। পরে লেগ স্পিনারের মতো হাত ঘুরাতে শুরু করলাম, দেখি সবাইকে পরাস্ত করতে পারছি। এর পর থেকে এটাই বেছে নিয়েছি।
লেগ স্পিনে তো অনেক নাম করলেন। শুনেছি এর পেছনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের অনেক ভূমিকা…
লামিচানে: তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হংকং টি-টোয়েন্টিতে। ২০১৬ সালে আমরা একই দলের হয়ে খেলেছিলাম। ক্লার্ক তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারব কি না, তাহলে আমার খেলায়ও উন্নতি হবে। আমি তাঁকে বললাম কেন যাব না? আমি সব চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।। ওখান থেকে বিগ ব্যাশ সুযোগ পাই। ক্লার্কের সঙ্গে আমার এখনো ভালো যোগাযোগ আছে। ক্রিকেট নিয়ে প্রায়ই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
আমরা বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে চাই। বিশ্বকে দেখাতে চাই, নেপালের ক্রিকেট আগামী কয়েক বছরে কোথায় পৌঁছাতে পারে।সন্দীপ লামিচানে, ক্রিকেটার, নেপাল
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশও আপনাদের প্রতিপক্ষ। গতবার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন, এবার কি হারাতে পারবেন?
লামিচানে: হ্যাঁ, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেছি। তবে বাংলাদেশকে ১১০ রানে অলআউট করে দিতে পারাটা দল হিসেবে আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। এবারও আশা করি ভালো কিছু হবে। আমরা বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে চাই। বিশ্বকে দেখাতে চাই, নেপালের ক্রিকেট আগামী কয়েক বছরে কোথায় পৌঁছাতে পারে।
ক্রিকেটের বাইরে থাকলে কীভাবে সময় কাটে?
লামিচানে: যা কিছুই হয়, সবকিছুর পেছনেই একটা কারণ থাকে। আশা করি, কখনোই আমাকে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে না। যদি তা থাকতেই হয়, সময়টাকে কাজে লাগাতে চাইব। আমি ঘুরতে অনেক পছন্দ করি, সুন্দর এই পৃথিবীকে দেখতে চাই। নতুন জায়গায় যাওয়া, পাহাড়, সমুদ্র দেখা—এসব ভালো লাগে।
আপনি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারবেন জীবনে, কিন্তু মানুষের ভালোবাসার চেয়ে কোনো কিছুই বড় নয়।সন্দীপ লামিচানে, ক্রিকেটার নেপাল
আপনার প্রতি ভক্ত-সমর্থকদের ভালোবাসাটাও তো অন্য রকম। এটাও নিশ্চয়ই বড় প্রাপ্তি...
লামিচানে: মানুষের ভালোবাসা আর তাদের আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। অনেকে এটাকে চাপ হিসেবে নেয়, আমি নিই না। অনেকগুলো বছর পরিশ্রমের পর ক্রিকেটের মাধ্যমে পাওয়া এই ভালোবাসা আমার জন্য গর্বের। আপনি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারবেন জীবনে, কিন্তু মানুষের ভালোবাসার চেয়ে কোনো কিছুই বড় নয়।
এখন তো নেপালে ক্রিকেটেরও বেশ জনপ্রিয়তা...
লামিচানে: আমি যখন খেলা শুরু করি, তখন ওয়ানডে স্ট্যাটাসই ছিল না আমাদের। অনেক দিক থেকেই আমরা ভুগছিলাম তখন। কিন্তু যখন থেকে ক্রিকেটের মূল স্রোতে আসি, তখন থেকেই বিশ্বাস ছিল—একদিন সবকিছু বদলে যাবে। কিছুটা সময় হয়তো লেগেছে, কিন্তু ১০ বছর আগের আর পরের কথা যদি চিন্তা করেন, আর্থিক অবস্থা, অবকাঠামো আর ক্রিকেটীয় পরিবেশের দিক থেকে আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। এখন নেপালে এক নম্বর খেলা তো ক্রিকেটই! ক্রিকেটের প্রতি এই ভালোবাসা সব সময়ই ছিল। নেপালের ক্রিকেট বোর্ড অনেক কিছু নিয়ে কাজ করছে—মাঠে ফ্লাডলাইড লাগানো, পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম তৈরি। নেপালে যেভাবে ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়ছে, তা দেখাটা সত্যিই আনন্দের।
টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নেপাল কতটা প্রস্তুত?
লামিচানে: আমি ক্রিকেটের প্রতি দেশের মানুষের আবেগটা বুঝতে পারি। কিন্তু পার্থক্যটা হচ্ছে ঠান্ডা মাথায় বাস্তবতাটাও বুঝতে হবে। এটা আমরা একদিন পাবই। চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আমাদের সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দল হিসেবে ভালো করতে হবে, আমরা সে রকম দলও। যত দ্রুত সম্ভব আমরা টেস্ট মর্যাদা পেতে চাই। আমি চাই, আমার অবসরের আগেই নেপাল টেস্ট খেলবে।