
সৃজনশীল প্রশ্ন সোনার তরী
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শুভেচ্ছা রইল। বাংলা ১ম পত্রের একটি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেওয়া হলো।
বোকা বুড়োর গল্প শোনো
....
ছেলের হাত ধরে এগিয়ে চলে
দূরের পাহাড়টাকে একাই কাস্তে হাতে
করে দিতে সাফ
উত্তরের হাওয়া আনে হিম ঝড়
ছোট্ট ছেলের মনে পড়ে যায় ঘর
....
একদিন গ্রামবাসী দেখল এসে
বিরাট পাহাড় গেছে ধুলোয় মিশে
সেখানে দিয়েছে দেখা এক সরোবর
কত পাখি গান গায় তীরে বসে
বোকা বুড়ো, সরে পড়ে আছে সেখানে
পাখিরা গাইছে তার শেখানো সেই গান
We shall over come
ক. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
খ. ‘সোনার তরী’ কবিতায় বহু জায়গায় দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহারের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. অনুচ্ছেদের হিম ঝড়ের সঙ্গে ‘সোনার তরী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরণের ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. অনুচ্ছেদটিতে ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাব ফুটে উঠেছে, মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
উত্তর: ক. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
উত্তর: খ. ‘সোনার তরী’ কবিতায় বেশ কয়েকটি দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানোর জন্য নির্ধারক বিশেষণ হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। যেমন রাশি রাশি ভারা ভারা ধান। এখানে বিশেষ্য ‘ধান’-এর নির্ধারক বিশেষ ‘রাশি রাশি’ ‘ভারা ভারা’। ‘রাশি রাশি’ বলতে অনেক এবং ‘ভারা ভারা’ বলতে বোঝা বোঝা। এগুলো দ্বিরুক্ত শব্দ।
উত্তর: গ. কবিতার ‘হিম ঝড়ের’ সঙ্গে ‘সোনার তরী’ কবিতার ক্ষুরধারা খরপরশা/কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা’র সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
উদ্ধৃত কবিতাংশে ছেলের হাত ধরে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায় বোকা বুড়োকে, তার হাতে ধরালো কাস্তে। এ কাস্তে দিয়ে দূরের পাহাড়টাকে সাফ করে দিতে চায় সে একাই। এমন সময় উত্তরে হাওয়া নিয়ে আসে হিম ঝড়—তুষার ঝড়ের প্রচণ্ড ঝাপটায় শঙ্কিত হয় মন।
‘সোনার তরী’ কবিতায়ও এ রকম একটি চিত্র আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। কৃষক একা। হাতে তার কাস্তে দ্বীপের মতো ছোট্ট খেতে ধান কাটতে আসে সে। ধান কাটতে কাটতেই ভরা নদীতে ক্ষুরের মতো ধারালো তীব্র স্রোত বইতে শুরু করেছে। শাণিত বর্ষার মতো নেমে এসেছে হিম বরষা। বরষার তীব্রতায় শঙ্কিত হচ্ছে মন।
উত্তর: ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাব সম্পূর্ণ ফুটে উঠেছে। কেননা, অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে ব্যক্তিসত্তাকে অনিবার্য মৃত্যুবরণ করে নিতে হয়, কেবল টিকে থাকে তার মহান সৃষ্টিকর্ম।
দ্বীপসদৃশ খেতে কৃষক ফলিয়েছে সোনার ধান। কাস্তে দিয়ে রাশি রাশি সোনার ধান কেটে সে স্তূপ করে রেখেছে। খেতের চারদিকে তীব্র বাঁকা স্রোত। নানা আশঙ্কা নিয়ে একলা অপেক্ষা করছে কৃষক। এমন সময় ভরা পালে তরী বেয়ে আসে মাঝি। কৃষকের কাতর অনুনয়ে সে তার তরীতে সোনার ধানগুলো নিয়ে চলে যায়। সে ফলভরা তরীতে তার ঠাঁই হয় না। শূন্য নদীর তীরে অপূর্ণতার বেদনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কৃষক। একসময় তার দেহ বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকে তার সৃষ্টি সোনার ধান।
উদ্দীপকেও ফুটে উঠেছে ‘সোনার তরী’ কবিতার মূলভাব। এখানেও বোকা বুড়ো বিরাট পাহাড় কেটে সাফ করার জন্য এসেছিল কাস্তে হাতে। হঠাৎ শুরু হলো হিম ঝড়। গ্রামবাসী এসে দেখল, বিরাট পাহাড় ধুলোয় মিশে গেছে। সেখানে দেখা দিয়েছে এক সরোবর। তার তীরে বসে গান গাচ্ছে কত পাখি। যে গান পরম যত্নে শিখিয়ে দিয়ে গেছে বোকা বুড়ো। কিন্তু বুড়ো নেই—মরে পড়ে আছে সেখানে। বোকা বুড়ো দেহ ত্যাগ করেছে, কেবল সরব রয়ে গেছে তার গান।
‘সোনার তরী’ কবিতার ও উদ্দীপকে অন্তর্লীন হয়ে আছে একটি জীবনদর্শন। পৃথিবীর চিরন্তন নিয়মে মহাকালের বুকে হারিয়ে যায় মানুষ—তার মৃত্যু হয়। কিন্তু বেঁচে থাকে তার সৃষ্টি—তার সোনার ফসল, তার গান।