একেবারে শূন্য থেকে একটা স্মার্টফোন মোড়কজাত করে বিক্রির উপযোগী করতে কত দিন লাগে? চীনের শেনজেনে স্মার্টফোন নির্মাতা ‘অনার’–এর কারখানা দেখে তা জানা গেল। আজ শুক্রবার কারখানা ঘুরে দেখার সময় অনারের সিনিয়র কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার রায়ান ইয়াং জানালেন, একদম শুরু থেকে মোড়কজাত করা পর্যন্ত তিন দিন সময় লাগে। এই শুরুটা হলো একেবারে মেইনবোর্ড বানানো থেকে শুরু করে ক্যামেরা লাগানো, ডিসপ্লের আঠা লাগানো পর্যন্ত। আঠা লাগানোর পর আবার তিন ঘণ্টা সময় দিতে হয় সেটা শুকানোর জন্য।
অনারের কারখানায় দেখা গেল, ১৫০ মিটার দীর্ঘ একেকটা লাইনআপে স্মার্টফোন তৈরি হয়। এটা শুরু হয় মেইনবোর্ড বা মাদারবোর্ড তৈরির মাধ্যমে। মাদারবোর্ডে প্রসেসরসহ নানা উপকরণ বসানো হয় নির্দিষ্ট যন্ত্রে। লাইনে পাশাপাশি সব রোবোটিক যন্ত্র সাজানো আছে। একেকটা লাইনে চার–পাঁচজন মানুষ আছেন। মজার ব্যাপার হলো, স্মার্টফোন তৈরির এই যন্ত্রপাতি সেসবও অনারের তৈরি। এইচআইইপি (অনার ইন্টেলিজেন্ট ইকুইপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম) যন্ত্র দিয়েই সব কাজ হয়।
আমরা দেখলাম, অনার ৫০ স্মার্টফোন তৈরি হতে। একেকটা লাইনে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার স্মার্টফোন তৈরি করে অনার। এই কারখানা দালানে ২০টি লাইন আছে। তার মানে, এই এক দালান থেকেই দিনে ৪০ হাজার ফোন তৈরি হয়। শেনজেনে এ রকম কারখানার দালান আছে চারটি। আরও দুটি দালান আছে, যার একটি ক্যানটিন। কারখানা বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে গাজীপুরে হাইটেক পার্কে অনারের কারখানার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই সেটা চালু হবে।
কারখানার আগে শেনজেনে আমরা দেখি, অনারের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। এখানে প্রতিনিয়ত চলছে পণ্য নিয়ে গবেষণা। প্রতি তিন মিনিটে দুটি পেটেন্ট পায় অনার। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ পেটেন্ট পেয়েছে অনার। এখানে ড্রপ টেস্ট হয় স্মার্টফোনের। যন্ত্রের মাধ্যমে বেশ জোরে ছুড়ে ফেলা হয় স্মার্টফোন। ২৫ হাজারবার ড্রপ টেস্ট করা হয়। ভাঁজযোগ্য ফোনগুলো ৫০ হাজারবার ভাঁজ খোলা–লাগানো হয়। চার হাজারবার ফোন বাঁকানোর চেষ্টা করা হয়। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তা জানানো হয়, এরপর কারখানায় চূড়ান্ত উৎপাদন শুরু হয়।
এনভায়রনমেন্ট রিয়ালিবিটি ল্যাবরেটরিতে হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি থেকে হিমাঙ্কের ওপরে ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় স্মার্টফোন পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এখানে তেজস্ক্রিয়তা, সিগন্যাল পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ আছে। সুপারকম্পিউটার দিয়ে স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
অনারের এই গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকেই উদ্ভাবিত হয়েছে স্মার্টফোনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা ব্যাটারি। ২০২১ সালে শুরু হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র ও কারখানার কাজ।