পল অ্যালেন (বাঁয়ে) ও বিল গেটস
পল অ্যালেন (বাঁয়ে) ও বিল গেটস

বিল গেটসকে প্রথম মদ্যপান করান কে?

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছিলেন এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন বিল গেটস। চলতি বছর প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘সোর্স কোড: মাই বিগিনিংস’–এ গেটস লিখেছেন, কম্পিউটারের প্রতি তার আগ্রহ তৈরির পাশাপাশি কিশোর বয়সের নানা সীমা অতিক্রমের অভিজ্ঞতায়ও তাকে প্রভাবিত করেছিলেন পল অ্যালেন।

বইটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম গিকওয়্যারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস রসিকতার সুরে বলেন, পল অ্যালেন ছিল ‘একটা সমস্যা’। তিনি বলেন, অ্যালেনই তাকে প্রথম মদ্যপান করান, মারিজুয়ানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং এলএসডি ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় নিয়ে যান। একই সঙ্গে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জিমি হেনড্রিক্সের গান শোনার অভ্যাসও তাঁর মাধ্যমে গড়ে ওঠে। গেটস বলেন, তার বাবা-মা তাকে সুশৃঙ্খল ও নিয়মের মধ্যে বড় করেছেন। অন্যদিকে পল অ্যালেন ছিলেন ভিন্নধর্মী মানুষ। তার প্রভাবও তেমন। পল অ্যালেন তাকে বারবার নতুন কিছু চেষ্টা করতে এবং প্রচলিত সীমার বাইরে ভাবতে উৎসাহ দিয়েছেন। স্মৃতিচারণায় গেটস বলেন, ‘ও আমাকে মাতাল করেছে, মারিজুয়ানা দিয়েছে। লোকটা ছিল একেবারেই সমস্যা…। আর আমাকে জিমি হেনড্রিক্সের গান শোনাত।’

আত্মজীবনীতে গেটস জানিয়েছেন, কিশোর বয়সে তিনি চার থেকে পাঁচবার এলএসডি সেবন করেছিলেন। পাশাপাশি মদ্যপান করে অচেতন হয়ে পড়া এবং মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণের আশায় মারিজুয়ানার ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে পরে উপলব্ধি করেন, এসব প্রচেষ্টা তার প্রত্যাশিত ফল আনেনি। মার্কিন সাময়িকী পিপলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, কৌতূহল ও ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতাই তাকে এসব অভিজ্ঞতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তবে সেই বয়সের অনিশ্চয়তা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবও এতে ভূমিকা রেখেছিল। সময়ের সঙ্গে তিনি বুঝতে পারেন, মানসিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে এসব থেকে সরে আসাই যুক্তিযুক্ত ছিল। এই প্রসঙ্গে গেটস আরও জানান, একবার অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস তাকে বলেছিলেন, মাইক্রোসফটের পণ্য আরও আকর্ষণীয় করতে হলে তারও হ্যালুসিনোজেন ব্যবহার করা উচিত ছিল। তবে গেটস সেই পরামর্শ গ্রহণ করেননি।

কিশোর বয়সের এসব অভিজ্ঞতার পরও প্রযুক্তি জগতে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি বিল গেটস। ১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট। ১৯৮৬ সালে শেয়ারবাজারে আসার সময় কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২১ ডলার। সে সময় গেটসের হাতে ছিল মাইক্রোসফটের ৪৫ শতাংশ শেয়ার, যা তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই কোটিপতিতে পরিণত করে। গেটসের নেতৃত্বে দ্রুত বিস্তার লাভ করে মাইক্রোসফট। ১৯৯৩ সালে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ওঠেন। ২০০০ সালে তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ছাড়েন। এরপর সেই দায়িত্ব নেন স্টিভ বালমার। প্রধান নির্বাহী পদ ছাড়ার পর গেটস জনকল্যাণমূলক কাজে মনোযোগ দেন। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার সূচকে তিনি ১৮তম অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য এখন প্রায় ৩ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া