মঙ্গল গ্রহ তার স্বতন্ত্র লাল রঙের জন্য সুপরিচিত। পৃথিবী থেকে খালি চোখেই অনেকটা স্পষ্ট দেখা যায় লাল মঙ্গল গ্রহ। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, মঙ্গলের এই লাল রঙের উৎস হলো হেমাটাইট নামক একটি খনিজ পদার্থ। এটি একধরনের শুষ্ক আয়রন-অক্সাইড, যা পৃথিবীতেও পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে আমাজোনিয়ান যুগে পানির অভাব থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলের শিলার ক্রমাগত জারণ ও আবহাওয়াগত পরিবর্তনের ফলে এই হেমাটাইট তৈরি হয়েছিল। সেটাই গ্রহটিকে লাল রং দিয়েছে। অনেকটা লোহার মরিচার মতো দেখায়।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা হেমাটাইট-ভিত্তিক এই ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। গবেষকেরা নাসার মার্স রিকনেসান্স অরবিটার, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মার্স এক্সপ্রেস ও এক্সোমার্স এবং নাসার মার্স রোভার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, মঙ্গলের ধূলিকণায় ও ভূপৃষ্ঠের নিচের পাথুরে স্তরে ফেরিহাইড্রাইট নামক আরেকটি খনিজ পদার্থের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এটি মূলত পানি-সমৃদ্ধ একটি ফেরিক অক্সিহাইড্রোক্সাইড। গবেষকদের মতে, এই ফেরিহাইড্রাইটই হতে পারে মঙ্গলের লাল রঙের প্রধান কারণ।
গবেষণাগারে ব্যাসাল্ট ও ফেরিহাইড্রাইটের কৃত্রিম মিশ্রণ তৈরি করে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এটি হেমাটাইটের তুলনায় মঙ্গলের বর্তমান রঙের সঙ্গে অনেক বেশি নিখুঁতভাবে মিলে যায়। ফেরিহাইড্রাইট তৈরি হওয়ার জন্য অক্সিজেন ও পানি উভয়েরই প্রয়োজন। যদিও আজকের শীতল ও শুষ্ক মঙ্গলে এগুলো দেখা যায় না। গ্রহটির প্রাচীন অতীতে এগুলোর উপস্থিতি ছিল বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীতে ফেরিহাইড্রাইট খুব দ্রুত হেমাটাইটের মতো আয়রন অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কিন্তু মঙ্গলের বিশেষ পরিবেশে একবার এটি তৈরি হলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থিতিশীল থাকতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি