
ঘানার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা সুলেমানা আবদুল সামেদ। সম্প্রতি এক স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ২৯ বছর বয়সী এই তরুণের উচ্চতা ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি বলে জানায় স্থানীয় একটি হাসপাতাল। এতে সুলেমানা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় ওই হাসপাতালের ঘোষণা যদি সঠিক হয়, তাহলে এই উচ্চতা অনুযায়ী সুলেমানার বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ হওয়ারই কথা। তবে সমস্যা হলো, ওই হাসপাতালের উচ্চতা মাপার সঠিক সরঞ্জাম নেই। ফলে এ নিয়ে সংশয় থেকে যায়।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে বেরিয়ে পড়েন বিবিসির সাংবাদিক ফেভার নানু। তবে একটিমাত্র সমস্যায় পড়েন তিনি। সেটা হলো সুলেমানার উচ্চতা মাপা।
কয়েক বছর আগে হরমোনের কারণে অস্বাভিক শারীরিক বৃদ্ধির এই রোগটি ধরা পড়ে সুলামানার। অতিকায় শরীর নিয়ে জীবনযাপনে কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এ জন্য প্রতি মাসে তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়।
হাসপাতালে যাওয়ার পর একটি মাপদণ্ড বরাবর সুলামানাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। হতবাক এক নার্স বললেন, ‘আপনি স্কেলের (মাপদণ্ড) চেয়েও লম্বা হয়ে গেছেন।’
সবার কাছে আউচে ডাক নামেই বেশি পরিচিত সুলেমানা। হাউসা ভাষায় তাঁর অর্থ হলো ‘চলো যাই’। কোথাও গেলে তাঁকে নিয়ে যে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়, তা নিয়ে তিনি বিমোহিত।
সুলেমানা লম্বা এবং আরও লম্বা হতে থাকবেন—এটা শুনে তিনি বিস্মিত নন। তবে বিপাকে পড়েন ওই হাসপাতালের কর্মীরা। তাঁরা এমন দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।
কর্তব্যরত নার্স তাঁর সহকর্মীর শরণাপন্ন হলেন। তিনি আবার আরেকজনের সাহায্য চাইলেন। এভাবে আউচের উচ্চতা মাপার সমস্যা সমাধানে নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে যান।
একজন পরামর্শ দিলেন, একটি খুঁটি খুঁজে বের করে সেটি হাসপাতালে থাকা মাপদণ্ডের সঙ্গে যাতে অতিরিক্ত জুড়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এভাবে তাঁরা আউচের উচ্চতার আনুমানিক একটি মাপ ঠিক করেন।
প্রথমবার যখন বিবিসির সাংবাদিক ফেভর নানু ঘানার উত্তরাঞ্চলে আউচের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তাঁর সঙ্গে উচ্চতা মাপার ফিতা ছিল না। বিষয়টি সমাধানে ১৬ ফুট লম্বা ফিতা নিয়ে গত সপ্তাহে আবার গাম্বাগা গ্রামে যান তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আউচেকে একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো হয়। এরপর তাঁর মাথার তালু বরাবর দেয়ালে চিহ্ন দেওয়া হয়। পরে ফিতা দিয়ে সেটা পরিমাপ করা হয়।
আউচেকে জানানো হলো, তাঁর উচ্চতা ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। সঠিক পরিমাপ পেয়ে তিনি খুশি। মুখে লেগে থাকা অনবদ্য হাসি দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘তাহলে কী দাঁড়াল?’
আউচেকে জানানো হলো, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ এখনো জীবিত। তাঁর উচ্চতা ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চি। এখনো ওই ব্যক্তি তাঁর চেয়ে প্রায় ১ ফুট লম্বা।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মালিক তুরস্কের নাগরিক সুলতান কোসেন। তাঁর বয়স ৪০ বছর।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যের অসঙ্গতি নিয়ে একেবারেই হতাশ নন আউচে। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো লম্বা হচ্ছি। কে জানে, হয়তো কোনো এক দিন আমি এই উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলব। প্রতি তিন থেকে চার মাসে আমি আরও লম্বা হই।’
আউচের ২২ বছর বয়সে তাঁর অস্বাভাবিক এই শারীরিক বৃদ্ধি নজরে আসে। তিনি রাজধানী আক্রায় থাকেন। মাধ্যমিকে পড়াশোনা শেষ করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এই শহরে পাড়ি জমান তিনি। এখানে তাঁর ভাইয়েরাও থাকেন।
আউচের উচ্চতা তাঁর সামাজিক জীবনকে সংকুচিত করেছে। তিনি বলেন, ‘একসময় আমি অন্যসব তরুণের মতো ফুটবল খেলতাম। আমি অ্যাথলেট ছিলাম। কিন্তু আমি এখন স্বল্প দূরত্বেও হেঁটে যেতে পারি না।’
ব্যান্ডেজ করা পায়ের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়েও নিজের দুর্দশা নিয়ে হতাশ হতে রাজি নন আউচে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে এভাবেই বেছে নিয়েছেন, আমি ঠিক আছি। আল্লাহ আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।’