Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় তালেবানের হামলা ঠেকাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি (মাঝে) তাঁর পরিকল্পনা উপস্থাপন করছেন। গতকাল দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে

তালেবান ঠেকাতে পরিকল্পনা

গতকাল পার্লামেন্টে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তবে জনসমক্ষে এর বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

তালেবানের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পার্লামেন্টে গতকাল সোমবার এক নিরাপত্তা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। জনসমক্ষে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে তালেবান এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও আল-জাজিরার।

আফগান সেনাবাহিনী বলেছে, আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় তিন প্রদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। এসব প্রদেশে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে তালেবানের জোর লড়াই চলছে।

আফগানিস্তানের ২০ বছরের আগ্রাসন শেষে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশটি থেকে সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। গত মে মাসে এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অভিযান জোরদার করেছে তালেবান।

তালেবান যোদ্ধারা এরই মধ্যে আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর একটি বড় অংশ গ্রামীণ এলাকা। এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক শহরগুলোর দিকে নজর দিচ্ছেন তাঁরা। এরই ধারাবাহিকতায় কান্দাহার, হেলমান্দ ও নানগরহর প্রদেশে সরকারি সেনা এবং সরকার সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাঁদের তুমুল লড়াই চলছে। তালেবানের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে চালানো হচ্ছে বিমান হামলাও। বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার কথা জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ওই নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি বলেন, ৬ মাসের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তাঁর পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে আকস্মিকভাবে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। তবে ‘দেশবাসীকে রক্ষার’ দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি।

পরিকল্পনার বিস্তারিত জানা না গেলেও তালেবান এটি ‘পুরোপুরি অর্থহীন’ নিরাপত্তা পরিকল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে গনি নিজের খারাপ (মানসিক) অবস্থা ও ভুলত্রুটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্বাসঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ জাতি। যুদ্ধ ঘোষণা, অভিযোগ উত্থাপন ও মিথ্যা তথ্য প্রদান—এর কোনো কিছুই গনির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে পারবে না। তাঁর সময় শেষ। এদিকে গনির নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ। যৌথ বিবৃতিতে দুই কক্ষের সদস্যরা তাঁর পরিকল্পনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর পাশে থাকার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

* আশরাফ গনি বলেন, দেশটি থেকে আকস্মিকভাবে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। * তালেবান হামলায় তিন প্রদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।

লড়াইয়ের সবশেষ

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, হেলমান্দের রাজধানী লস্করগাহে তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে তাদের সাতজন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে নানগরহর প্রদেশে তালেবান অভিযান জোরদার করেছে বলে কাবুল থেকে জানিয়েছেন আল-জাজিরার সংবাদদাতা। সেখানে সেনাদের সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই চলছে। তালেবান প্রদেশের একেবারে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। তারা এখন প্রাদেশিক গভর্নরের কম্পাউন্ড ও পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান করছে।

লড়াইয়ে প্রাণহানির ব্যাপারে দুই পক্ষ থেকে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তালেবান বলছে, তাদের হামলায় ১০ সেনা ও পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে আফগান সরকার বলছে, লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। বিপরীতে তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন ১৪ জন।

লড়াই চলছে কান্দাহারেও। পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন শহর স্পিন বোলডাকেও গত রোববার রাতে নতুন করে লড়াই হয়েছে। কান্দাহার শহরে তালেবানের প্রবেশ আফগান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে আফগান বাহিনী। হামলায় ৩৫ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগ

আফগানিস্তানের শরণার্থীদের অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, এমন দুটি সূত্র এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা গত রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আফগানিস্তানে চলমান লড়াই-সংঘাতে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন অনেক আফগান। তাঁদের সাহায্য করতে বাইডেনের ওপর চাপ বাড়ছে। বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে চলা বিভিন্ন প্রকল্পে ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অভিবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।