Thank you for trying Sticky AMP!!

২০০০ কোটি ডলারের সেতুর উদ্বোধন মঙ্গলবার

ওয়াই আকৃতির ‘হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজ’ জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে আগামী বুধবার। সেতুটি চীনের ১১টি শহরকে যুক্ত করবে। ১৯ অক্টোবর ছবিটি তোলা। ছবি: এএফপি

সমুদ্রের ওপর বিশ্বের অন্যতম বড় সেতু তৈরি করে ফেলেছে চীন। হংকং থেকে ম্যাকাওয়ে যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছে এ সেতু। ‘হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজ’ আগামী মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হবে। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বুধবার। চীনের ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল (এসএআর) সরকারের বরাত দিয়ে এসব কথা জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।

চীনের পার্ল রিভারের ওপর দিয়ে ৫৫ কিলোমিটার বিস্তৃত সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ছবি: এএফপি

গত শুক্রবার ম্যাকাও সরকার ঘোষণা করে, মঙ্গলবার চীনের গুয়াংডং প্রদেশের ঝুহাইতে হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজের উদ্বোধন করা হবে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেতুটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ম্যাকাওয়ের প্রধান নির্বাহী চুই সাই অন। এ সময় হংকং, ম্যাকাওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

‘হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজ’ চালু হলে হংকং ও ম্যাকাওয়ের মধ্য দূরত্ব আড়াই ঘণ্টা কমে আসবে। আগের তিন ঘণ্টার পথ যাতায়াত করা যাবে আধা ঘণ্টায়। ছবি: এএফপি

চালু হওয়ার পরই সেতুটি যাতায়াতের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এই সেতু দিয়ে ম্যাকাও ও হংকংয়ের যাত্রী ও যানবাহনগুলো সরাসরি এক অঞ্চল থেকে আরেকটিতে যাওয়া–আসা করতে পারবে। চীনের নদী পার্ল রিভারের ওপর দিয়ে সেতুটি বিস্তৃত হয়ে সমুদ্র পার হয়ে গেছে সেতুটি। হংকং থেকে ম্যাকাওয়ে সড়কপথে যাতায়াতের জন্য তৈরি এ সেতু ৫৫ (৩৪ মাইল) কিলোমিটার দীর্ঘ। যাত্রাপথে সেতুটি আরও ১১টি বড় শহরকে যুক্ত করেছে। দক্ষিণ চীনের ৫৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এ সেতুর উপকারভোগী। এ সেতু চালু হলে হংকং ও ম্যাকাওয়ের মধ্য দূরত্ব আড়াই ঘণ্টা কমে আসবে। আগের তিন ঘণ্টার পথ এখন আধা ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে।

এই সেতুতে চলতে হলে প্রাইভেট কারকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। সেতুটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ম্যাকাও ও ঝুহাইয়ের মধ্যে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্র নিতে হবে। অর্থাৎ এই সেতু ব্যবহার করে পর্যটকদের এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যেতে চাইলে ওই ছাড়পত্র দেখাতে হবে। এই প্রক্রিয়া হতে পারে অটোমেটিক বা সেমি-অটোমেটিক বা ম্যানুয়াল। পর্যটকদের জন্য দুই ধরনের সরকারি যানবহন থাকবে। এর মধ্য একটি নিয়মিত বাস সার্ভিস। অন্যটি শাটল সার্ভিস। এক চেক পয়েন্ট থেকে আরেক চেক পয়েন্টে যেতে-আসতে এই শাটল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন পর্যটকেরা।

সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ হংকং-ঝুহাউ-ম্যাকাও ব্রিজ অথরিটির লোগো। ছবি: এএফপি

হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজ অথরিটি সাত বছর আগে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। এখন সবার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে তৈরি সেতুতে ৪ লাখ টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুটি তৈরির বিস্তর বিতর্ক হয় চীনে। কিন্তু দেশটি সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে তৈরি করে ফেলে সেতুটি।

চীনের নদী পার্ল রিভারের ওপর দিয়ে সেতুটি বিস্তৃত। ২০১৬ সালেই সেতুটি উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। সেতুটি বানাতে খরচ হয়েছে ২ হাজার কোটি ডলার। সেতুটি তৈরির সময়েই সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল। এ জন্য নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। গত শুক্রবার চীনের সরকারি গণমাধ্যম জানায়, শেষ পর্যায়ে সেতুটির পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।

পার্ল রিভারের ওপর তৈরি এ সেতুটি রাতের বেলায় এমনই দেখাবে। ছবি: রয়টার্স

ইংরেজি বর্ণমালার ‘ওয়াই’ আকৃতির মতো দেখতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রায় সাত বছর ধরে সেতুর কাজ চলার পর চলতি বছরেই তা সবার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্পরোধক এই সেতু তৈরির একটি রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে। হংকংয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনকে পাশ কাটানোও লক্ষ্য।

সেতুটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ম্যাকাও এবং ঝুহাইয়ের মধ্যে এখানে ছাড়পত্র নিতে হবে পর্যটকদের। ছবি: রয়টার্স

উন্নয়নের কথা বলে কঠোর হাতে হংকংয়ের আন্দোলন দমনের কারণে চীনের সমালোচনা আছে বিশ্বজুড়ে। এ সেতু উদ্বোধনের ফলে সেটিকে পাশ কাটানো যাবে বলে মনে করছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

হংকং থেকে ম্যাকাওয়ে সড়কপথে যাতায়াতের জন্য তৈরি এ সেতুর ফলে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হলো হংকংয়ের। ছবি: রয়টার্স

৪ লাখ টন স্টিলে তৈরি এ সেতু হওয়ার কারণে সেতুর সঙ্গে যুক্ত ১১টি শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা ও মিছিল হয়েছে। তথ্যসূত্র: সিএনএন ও এএফপি।

দক্ষিণ চীনের ৫৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এ সেতুর উপকারভোগী। ছবি: রয়টার্স