কাশ্মীরের পেহেলগাম এমন ছবির মতো সুন্দর। ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় সেখানকার প্রধান বাজার এলাকা এমন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল
কাশ্মীরের পেহেলগাম এমন ছবির মতো সুন্দর। ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় সেখানকার প্রধান বাজার এলাকা এমন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল

বিদায়–২০২৫

চার দিনের সংঘাতের পর ভারত–পাকিস্তান কি শান্ত হয়ে এল

কয়েক সপ্তাহ ধরে বলিউডের একটি সিনেমা নিয়ে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। সিনেমার নাম ‘ধুরন্ধর’, গল্পের পটভূমি ভারত–পাকিস্তান।

৫ ডিসেম্বর ‘ধুরন্ধর’ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও মুখোমুখি ভারত–পাকিস্তান। সিনেমার পর্দা হোক বা আঞ্চলিক ভূরাজনীতি—চিরবৈরী এই দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক সব সময়ই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় থেকেছে, ২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।

বছরজুড়েই ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক ও দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে নিয়মিত নানা খবর প্রকাশ পেয়েছে। সীমান্তসংক্রান্ত খবরগুলোর অধিকাংশই ছিল সীমান্তে গোলাগুলি ও সংঘাত নিয়ে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে।

এ সময়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, যা দুই দেশকে আরও একবার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। চার দিন ধরে চলা ওই সংঘাতে দুই পক্ষের বহু মানুষ হতাহত হন। আন্তর্জাতিক মহলেও ভারত–পাকিস্তান সংঘাত এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল।

ওই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা এখনো রয়ে গেছে। দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর, হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তাই ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানোর অর্থ পারমাণবিক যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি হওয়া, যা কারওই কাম্য নয়।

২২ এপ্রিল কী ঘটেছিল

পাহাড়ের চূড়ায় কাশ্মীরের বৈসারান উপত্যকা, ঘন পাইনবনে ঘেরা সবুজ পাহাড়ি এ তৃণভূমি ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত। প্রতিবছর বহু পর্যটক সেখানে বেড়াতে যান। এ বছরের ২২ এপ্রিল, ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা প্রায় পৌনে ১১টা। বৈসারানে পর্যটকদের ভিড় জমে উঠেছে।

হঠাৎই প্রকৃতির নীরবতা ভেঙে গর্জে ওঠে একাধিক বন্দুক। সে সময় ঘটনাস্থলে প্রায় এক হাজার পর্যটক উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নানা ধরনের সেবা দিতে আরও প্রায় ৩০০ স্থানীয় ব্যক্তিও ছিলেন।

সেদিন তিন বন্দুকধারীর গুলিতে একে একে ২৬ জন প্রাণ হারান। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ছিলেন পর্যটক এবং একজন ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা।

হামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন

কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে এই সশস্ত্র হামলা ছিল দুই দশকের মধ্যে সংঘাতময় ওই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি স্বল্প পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রথমে ওই হামলার দায় স্বীকার করে। তবে পরে আবার তারা দায় অস্বীকার করেছে।

ভারতের অভিযোগ ছিল, এই গোষ্ঠী পাকিস্তান–সমর্থিত ও মদদপুষ্ট, তাই এ হামলার দায় পাকিস্তানের। পাকিস্তান এ অভিযোগ ও দায় অস্বীকার করে। কিন্তু নয়াদিল্লির তাতে মন গলেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের ওপর তীব্র প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন।

পেহেলগামে হামলার পর জম্মু–কাশ্মীর প্রশাসন উপত্যকাজুড়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান শুরু করে। এ সময় তারা অনেক সন্দেহভাজন মুসলিমের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়। পরে ভেঙে দেওয়া বাড়িঘরের ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার ও সামরিক বাহিনী ছাপিয়ে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’

দুই দেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলে কথার লড়াই, আর পাল্টাপাল্টি হুমকি। আন্তর্জাতিক নেতারা উভয় পক্ষকে শান্ত হওয়ার ও আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করার আহ্বান জানান। কিন্তু এ পরামর্শে কোনো পক্ষই তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঠিক ১৫ দিন পর ৭ মে বুধবার প্রথম প্রহরে (ভারতীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে) পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরসহ দেশটির ছয়টি শহরে আকাশ থেকে তীব্র হামলা শুরু করে ভারত। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাশাপাশি হামলায় ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। মধ্যরাতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে এসব শহরের বাসিন্দাদের।

পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’

টানা ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের ৯টি স্থাপনায় হামলা করে ভারত। দেশটির বিজেপি–দলীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধর্মীয় বাতাবরণে এ অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সিঁদুর’।

ভারতের সেনা কর্মকর্তারা দাবি করেন, ‘ভারতীয় বাহিনী জইশ–ই–মুহাম্মদের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণশিবির ভাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহানাল্লাহ ও লস্কর–ই–তাইয়েবার প্রশিক্ষণকেন্দ্র বিলাল মসজিদে হামলা করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ছয় কিলোমিটার ভেতরে পাকিস্তানের শিয়ালকোটেও হামলা চালানো হয়েছে। হামলা করা হয়েছে মেহমুনা জোয়ায় হিজবুলের শিবিরে। লাহোরের কাছে মুরিদকের মারকাজ তৈয়্যেবায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দাবি করে, ভারত মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের জিও নিউজের প্রতিবেদনে আক্রান্ত ছয়টি এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো পূর্ব আহমেদপুরে সুবহানাল্লাহ মসজিদ, মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদ, কোটলিতে আব্বাস মসজিদ ও মুরিদকে উম্মুল কোরা মসজিদ।

আধুনিক যুদ্ধ–সংঘাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সমরাস্ত্রে নতুন সংযোজন এই ড্রোন। এ অঞ্চলে ভারত–পাকিস্তানই প্রথম ড্রোন–যুদ্ধে জড়ায়। ৮ ও ৯ মে উভয় দেশ প্রতিপক্ষের কয়েক শ ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করে। দিন যত গড়াতে থাকে, দুই পক্ষে হতাহতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

শিয়ালকোট ও শাকারগড়েও হামলা হয়। এ ছাড়া হামলায় নীলম–ঝিলাম জলবিদ্যুৎ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অভিযানের শুরু থেকেই ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বড় ধরনের প্রচার–প্রচারণা শুরু করে। চিরশত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক এ অভিযানকে তারা নিজেদের বড় বিজয় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে।

পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ

পেহেলগাম হামলা নিয়ে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ভারত যেকোনো মুহূর্তে হামলা করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ফলে ভারতের হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কড়া প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী।

প্রতিরোধের মুখে প্রতিপক্ষের কোনো যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকতে পারেনি বলে দাবি করে দেশটির সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধবিমানও ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি বলে তারা জানায়। বরং নিজেদের আকাশসীমায় থেকেই দুই দেশের যুদ্ধবিমানগুলো পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়।

মে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের কাছে বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধবিমান দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

এ সময় তিনটি রাফালসহ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তান। ভারতের ৮০টি যুদ্ধবিমান এ হামলায় অংশ নিয়েছিল বলেও দাবি তাদের। ভারত প্রথমে মুখ বন্ধ করে রাখলেও পরে নিজেদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে কয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল, সে সংখ্যা তারা বলেনি।

ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করলে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান। সীমান্তে গোলাগুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় ড্রোন–যুদ্ধ।

আকাশে এমকিউ–৯ রিপার। নেভাদার মার্কিন বিমানঘাঁটিতে, মার্চ ২০২৩

আধুনিক যুদ্ধ–সংঘাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সমরাস্ত্রে নতুন সংযোজন এই ড্রোন। এ অঞ্চলে ভারত–পাকিস্তানই প্রথম ড্রোন–যুদ্ধে জড়ায়। ৮ ও ৯ মে উভয় দেশ প্রতিপক্ষের কয়েক শ ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করে। দিন যত গড়াতে থাকে, দুই পক্ষে হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে।

পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’

১০ মে ভোরে ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’ শুরু করার কথা জানায় পাকিস্তান। সেদিন ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা ভারতের উত্তরাঞ্চলের একটি ক্ষেপণাস্ত্র মজুত কেন্দ্র ও কয়েকটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

সংঘাত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে মনে হচ্ছিল, দুই দেশ আরও একবার একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার যুদ্ধে না জড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার খবরও আসছিল।

একদিকে আরও একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, অন্যদিকে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আশা—পুরো বিশ্বের নজর তখন পাকিস্তান ও ভারতের দিকে।

সে সময় হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ (সাবেক টুইটার) দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক’ যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়েছে। এ যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়েছে।

পাকিস্তান এ উদ্যোগের প্রশংসা করলেও ভারত বলেছিল, বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই দুই দেশের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ভারত অস্বীকার করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভারত–পাকিস্তান সংঘাত বন্ধের কৃতিত্ব নিজেকেই দিয়েছেন।

সিদ্ধান্ত যেভাবেই আসুক, এ যুদ্ধবিরতি পুরো বিশ্বের জন্য স্বস্তির খবর হয়ে আসে। তবে ভঙ্গুর এই যুদ্ধবিরতি টিকে থাকা নিয়ে সংশয়ও ছিল অনেক।

ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা কমেছে কি

৭ মে ভারতের হামলার পাল্টা জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছেন জানিয়ে সেদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছিলেন, প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে।

বদলা মানে প্রতিপক্ষের রক্ত ঝরা। মে মাসে চার দিনের ওই সংঘাতে ভারতে অন্তত ১৬ জন এবং পাকিস্তানে অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। দুই পক্ষে আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। তবে সরাসরি গোলাবর্ষণের কারণে প্রাণহানির সংখ্যা কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুদ্ধবিরতির কারণে এই রক্তপাত থামানো গেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মোট ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখার দৈর্ঘ্য ৭৪০ কিলোমিটার

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ও সৌদি আরবের সমর্থনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কতক্ষণ টিকে থাকবে, তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি মে মাসেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল।

তখন দুই দেশের কর্মকর্তারা সামনে এসে বলেছিলেন, এ যুদ্ধবিরতির কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ারও কিছু নেই।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মোট ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসির দৈর্ঘ্য ৭৪০ কিলোমিটার। দুই দেশের মধ্যে বাকি ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে।

নিয়ন্ত্রণরেখার নাম শুরুতে ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে এটি এ নামে পরিচিত হয়। ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তির আওতায় এটিকে ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ নামে পুনঃ নামকরণ হয়।

মে মাসে ভারত–পাকিস্তান সর্বশেষ সংঘাতের পর কানাডায় বসবাসরত পাকিস্তানি লেখক আনাম জাকারিয়া বিবিসিকে বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় বসবাসরত পরিবারগুলোকে সব সময় ভারত ও পাকিস্তানের খেয়ালখুশি ও দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার শিকার হতে হয়।

পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর নিয়ে একটা বই লিখেছেন আনাম জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার গুলি চলা শুরু হলে অনেকে বাংকারে ঢুকে পড়েন, গবাদিপশু ও জীবিকা নষ্ট হয়। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের দৈনন্দিন জীবনে এই নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতার গভীর ছাপ পড়ে।’

ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। দুই দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। উভয়ের হাতে কাশ্মীরের কিছু কিছু অংশে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তান দুবার বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে।

আনাম জাকারিয়া বলেন, ভারত–পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা বিশ্বের অন্যতম সামরিকীকৃত সীমান্ত। সেখানে সব সময়ই সংঘাতের আশঙ্কা থাকে। তাই সেখানে যুদ্ধবিরতি ততক্ষণই স্থায়ী হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না পরবর্তী উসকানি আসে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল–জাজিরা, এএফপি