ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি
ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি

ফিরে দেখা

ক্রাকাতোয়া: যে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল দুই হাজার মাইল দূর থেকেও

আকাশ হঠাৎ গর্জে উঠল। সূর্য লুকিয়ে গেল। আর সমুদ্র হয়ে উঠল যেন আগুনের দেয়াল।

প্রায় দেড় শ বছর আগের কথা। ১৮৮৩ সালের ২৬–২৭ আগস্ট এমনই এক মহাবিপর্যয় দেখেছিল বিশ্ববাসী—ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া দ্বীপে (বর্তমানে ক্রাকাতাউ) ঘটে যাওয়া অগ্ন্যুৎপাত; যা মানুষের কল্পনার চেয়েও ছিল বেশি ভয়ংকর। মাত্র কয়েক মিনিটে বিশাল দ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় প্রলয়ংকরী সুনামি ও আগ্নেয়প্রবাহ।

বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি ‘২০০০ মাইল দূর থেকে শোনা গিয়েছিল’। বৈশ্বিক জলবায়ুকেও বছরের পর বছর প্রভাবিত করেছিল এ ঘটনা। আনুমানিক ৩৬ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন তাতে। তবে প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও বেশি ছিল। কারণ, বহু উপকূলীয় বসতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এ ঘটনা শুধু একটি দ্বীপের জন্যই নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য এক চরম প্রাকৃতিক সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রকৃতির বিপরীতে মানুষের সামান্য জ্ঞান ও প্রযুক্তি যে কতটা অসহায়, ক্রাকাতোয়া সেটি চমকপ্রদভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি হিসেবে স্থান করে নেওয়া ক্রাকাতোয়ার ঘটনাটির আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক:

বড় বিস্ফোরণের কয়েক মাস আগে থেকেই ক্রাকাতোয়া অগ্ন্যুৎপাতের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছিল। ১৮৮৩ সালের ২০ মে, উত্তরাঞ্চলের পার্বোয়াতান শৃঙ্গ থেকে ধোঁয়া ও ছাই বের হতে শুরু করে। এরপর অন্য দুটি শৃঙ্গ—দানান ও রাকাতাও সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ওই সময় ছাইয়ের মেঘ প্রায় ২০ হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচুতে পৌঁছায় এবং প্রায় ১০০ মাইল দূরে বাটাভিয়া (বর্তমান জাকার্তা) থেকে অগ্ন্যুৎপাতের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের কাছে প্রাথমিক ধাপের এ অগ্ন্যুৎপাত ভয়ের বলে মনে হয়নি; বরং অনেকেই একে একধরনের প্রাকৃতিক প্রদর্শনী হিসেবে দেখেছিলেন।

এদিন সকাল ১০টা ২ মিনিটে ক্রাকাতোয়ায় এমন এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে; যার সাক্ষী পৃথিবী আগে কখনো হয়নি। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। সকাল ১০টা ২ মিনিটের বিস্ফোরণটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক—শক্তির দিক থেকে প্রায় ২০০ মেগাটন টিএনটির সমান। তুলনার জন্য বলা যায়, এ শক্তি ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির চেয়ে প্রায় ১৩ হাজার গুণ বেশি।

ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু

১৮৮৩ সালের ২৬ আগস্ট শুরু হয় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। প্রায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। আশপাশে সাগরে থাকা জাহাজগুলোতে ছাই ও আগ্নেয়শিলা পড়তে থাকে। সেদিন বিকেলের মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত তীব্র হয়ে ওঠে, আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়, ছাইয়ের বৃষ্টি হতে থাকে। লাভা ও ছাইয়ের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া মেঘে বিদ্যুৎ চমকায়, শোনা যায় বজ্রপাতের মতো শব্দ।

তবে আসল বিপর্যয় ঘটে পরদিন, ২৭ আগস্ট। সকাল ১০টা ২ মিনিটে ক্রাকাতোয়ায় এমন একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে; যার সাক্ষী পৃথিবী আগে কখনো হয়নি। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ। এর মধ্যে সকাল ১০টা ২ মিনিটের বিস্ফোরণই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক—শক্তির দিক থেকে প্রায় ২০০ মেগাটন টিএনটির সমান। তুলনা করলে এটি ছিল ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে প্রায় ১৩ হাজার গুণ শক্তিশালী।

২৭ আগস্ট সকালেই ঘটে একের পর এক চারটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ—সকাল ৫টা ৩০, ৬টা ৪৪, ১০টা ২ ও ১০টা ৪১ মিনিটে।

অনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

বিস্ফোরণের শব্দ ও পৃথিবীর কম্পন

বিস্ফোরণগুলোর কয়েকটির শব্দ এত জোরালো ছিল যে তা মানব ইতিহাসে সবচেয়ে জোরে শোনা শব্দ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর মধ্যে ১০টা ২ মিনিটের বিস্ফোরণের শব্দ স্পষ্ট শোনা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে (১ হাজার ৯৩০ মাইল দূরে) এবং ভারত মহাসাগরে মরিশাসের রদ্রিগেস দ্বীপে (৩ হাজার মাইল দূরে)। ব্রিটিশ জাহাজ নরহ্যাম ক্যাসলের নাবিকেরা লিখেছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমাদের কানের পর্দা ফেটে গেছে।’

কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী এ আওয়াজকে বর্ণনা করেছিলেন ‘অগণিত কামানের গর্জন’ বা ‘দূর থেকে শোনা ভয়াবহ তোপের শব্দ’ হিসেবে। রদ্রিগেস দ্বীপের মানুষও এটিকে কামানের গোলার শব্দ বলে ভেবেছিলেন।

বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীজুড়ে বাতাসের চাপ হঠাৎ বেড়ে যায়; যা সারা বিশ্বের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণযন্ত্রে ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই শকওয়েভ (বিস্ফোরণে সৃষ্ট কম্পন তরঙ্গ) পৃথিবীকে অন্তত সাতবার প্রদক্ষিণ করেছিল।

অগ্ন্যুৎপাতের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিক ছিল সুনামি। দফায় দফায় বিস্ফোরণে ক্রাকাতোয়া দ্বীপের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ সাগরে ধসে পড়ে। এতে ১২০ ফুট (৩৭ মিটার) পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ তৈরি হয় সাগরে।

ক্রাকাতোয়ার বিস্ফোরণে বিশ্বের আবহাওয়ায় গভীর প্রভাব পড়ে। বিশাল পরিমাণ ছাই ও সালফার ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে কয়েক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সূর্যাস্ত রক্তলাল রূপ ধারণ করে; যা কয়েক মাস পর্যন্ত দেখা যায়। এ অস্বাভাবিক দৃশ্য শিল্পী এডভার্ড মুঞ্চকে তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য স্ক্রিম’ (১৮৯৩) আঁকার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল বলে ধারণা করা হয়।

এসব ঢেউ পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে আঘাত হানে এবং উপকূলীয় জনপদগুলো গিলে ফেলে। শুধু জাভা ও সুমাত্রাতেই হাজার হাজার মানুষ মারা যান। জাহাজ সমুদ্রে ডুবে যায়, গ্রামের পর গ্রাম মুছে যায়। অনুমান করা হয়, এ ঘটনায় যে ৩৬ হাজার মানুষ মারা যান, তাঁদের বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ ছিল উত্তপ্ত ছাই বা লাভা নয়; বরং সুনামি।

ডাচ নৌবাহিনীর প্রকৌশলী ক্যাপ্টেন এইচ জে জি ফেরজেনার ক্রাকাতোয়া দ্বীপ পরিদর্শন করেছিলেন ওই বছরেরই আগস্টে—অগ্ন্যুৎপাতের ঠিক আগে। দেখেন তিনটি বড় ছাইয়ের স্তম্ভ, চারদিকে ছোট ছোট ধোঁয়ার ভেন্ট (আগ্নেয়গিরির ধোঁয়া বেরোনোর ছিদ্র) আর দ্বীপের মাটি প্রায় দুই ফুট পুরু আগ্নেয় ছাইয়ে ঢাকা। সব গাছপালা পুড়ে কালো; শুধু পোড়া গুঁড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। বিপদের আশঙ্কায় তাৎক্ষণিকভাবে দ্বীপে যাতায়াত সীমিত করার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তা গুরুত্ব দেয়নি। এর কয়েক সপ্তাহ পরই ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

মানবিক বিপর্যয় ও বিশ্বজুড়ে প্রভাব

সুনামির পাশাপাশি ক্রাকাতোয়া ভয়াবহ পাইরোক্লাস্টিক ফ্লো (ছাই, আগ্নেয় শিলা ও বিষাক্ত গ্যাসের প্রবাহ) সৃষ্টি করে। এগুলো সাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ মাইল গতিতে ছুটে যায়; যার তাপমাত্রা ছিল ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি (১ হাজার ১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।

সুমাত্রার উপকূলীয় গ্রামগুলো মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে যায়। প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান।

১৮৮৩ সালের অগ্ন্যুৎপাতের ভয়াবহতা নাবিক, স্থানীয় মানুষ এবং ঔপনিবেশিক আমলের কর্মকর্তাদের লিখে যাওয়া ডায়েরি ও প্রতিবেদনে ধরা পড়ে। যেমন একজন ডাচ নাবিক লিখেছেন, ‘আকাশ অন্ধকারে ঢেকে গেছে, সূর্য অদৃশ্য হয়েছে। বাতাসে ছাইয়ের গন্ধ, শ্বাস নেওয়া দুষ্কর।’ স্থানীয় জেলেরা দেখেছিলেন কীভাবে কয়েক মিনিটে গ্রামের পর গ্রাম সমুদ্রে ভেসে গেছে।

ইংল্যান্ডের তখনকার সংবাদপত্রগুলো ছাপায়, বিস্ফোরণের পর আকাশের অস্বাভাবিক লাল রং ইউরোপীয় সমাজে একধরনের ভৌতিক আতঙ্ক তৈরি করে।

অনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্রাকাতোয়ার বিস্ফোরণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ায় গভীর প্রভাব পড়ে। বিশাল পরিমাণ ছাই ও সালফার ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে কয়েক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সূর্যাস্ত রক্তলাল রূপ ধারণ করে; যা কয়েক মাস পর্যন্ত দেখা যায়। এ অস্বাভাবিক দৃশ্য শিল্পী এডভার্ড মুঞ্চকে তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য স্ক্রিম’ (১৮৯৩) আঁকার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল বলে ধারণা করা হয়।

এ ছাড়া গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা কয়েক বছরের জন্য ১ থেকে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। ফলে কৃষি ও আবহাওয়া ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। আকাশে বিরল সব প্রাকৃতিক দৃশ্য লক্ষ করা যায়, যেমন সূর্যের চারপাশে হালকা নীল-বাদামি আভাযুক্ত বলয় বা বিশপস রিং, নীল ও সবুজাভ রঙের চাঁদ এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নথিভুক্ত হওয়া অন্ধকার রাতের আলোকোজ্জ্বল মেঘ বা নকটিলুসেন্ট ক্লাউডস।

বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীজুড়ে বাতাসের চাপ হঠাৎ বেড়ে যায়; যা সারা বিশ্বের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই শকওয়েভ (বিস্ফোরণে সৃষ্ট কম্পন তরঙ্গ) পৃথিবীকে অন্তত সাতবার প্রদক্ষিণ করেছিল।

পরে বিজ্ঞানীরা এসব অস্বাভাবিক ঘটনাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে শক্তিশালী বাতাসের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে শনাক্ত করেন; আজ যেটিকে আমরা জেট স্ট্রিম নামে চিনে থাকি।

ক্রাকাতোয়া সুন্দা প্রণালির মধ্যে অবস্থিত। এটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চল। ইন্দোনেশিয়া ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চল ‘প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার’–এর অংশ। এখানে ৭৬টি ঐতিহাসিকভাবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যা প্রায়ই ভূমিকম্প ও সুনামি ঘটায়। ক্রাকাতোয়া ১৮৮৩ সালের আগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে এ অঞ্চলের প্রাণঘাতী ভৌগোলিক ঝুঁকি প্রমাণ করেছে।

ক্রাকাতোয়ার অগ্ন্যুৎপাত শুধু প্রাকৃতিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রভাবও ফেলেছে। পশ্চিমা সাহিত্য ও ভ্রমণকাহিনিতে এটি প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে আছে। ইউরোপে সূর্যাস্তের লাল আভা শিল্পকর্মে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এ বিপর্যয়ের গল্প সিনেমা, প্রামাণ্যচিত্র ও সাহিত্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন জন্ম, ‘অনাক ক্রাকাতাউ’

১৮৮৩ সালের আগে ক্রাকাতোয়া তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত দ্বীপ ছিল। কিন্তু ওই ঘটনার পর ইতিহাসের পাতায় এটি স্থায়ী ঠাঁই করে নিয়েছে।

বিস্ফোরণের পর ক্রাকাতোয়ার দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে ডুবে যায়। কিন্তু বহু বছর ধরে সুন্দা প্রণালির মাঝখানে পানির নিচে একটি ক্যালডেরা (আগ্নেয়গিরির ধসে পড়া গহ্বর) রয়ে যায়। সেখান থেকে ১৯২৭ সালে সমুদ্রের মধ্যে নতুন আগ্নেয়গিরি মাথা তুলে অনাক ক্রাকাতাউ (অর্থাৎ ‘ক্রাকাতোয়ার সন্তান’) হয়। এরপর এটি বারবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে ও নতুন দ্বীপ তৈরি করেছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনাক ক্রাকাতাউয়ের আংশিক ধসে সৃষ্ট সুনামিতে জাভা ও সুমাত্রা উপকূলে মারা যান ৪২৭ জন।

ক্রাকাতোয়ার ঘটনা মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছে যে সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রকৃতির শক্তি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওই ঘটনা আগ্নেয়গিরি ও আবহাওয়া বৈজ্ঞানিকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকের দিনে সুনামি সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণের পেছনে এ অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ক্রাকাতোয়া অগ্ন্যুৎপাত শুধু ইন্দোনেশিয়াকেই নয়, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বিস্ফোরণ, সুনামি ও বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব এটিকে মানব ইতিহাসের একটি ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে স্থাপন করেছে। ক্রাকাতোয়া ‘অনাক ক্রাকাতাউ’ হয়ে আজও সক্রিয়। আর তা প্রকৃতির অদম্য শক্তির সতর্কবার্তা হিসেবে।

[তথ্যসূত্র: বিবিসি, হিস্ট্রি ডটকম, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, ইউএসজিএস]