রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবনে ইউক্রেনের জরুরি সেবা কর্মীদের তৎপরতা
রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবনে ইউক্রেনের জরুরি সেবা কর্মীদের তৎপরতা

যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের ‘গঠনমূলক’ আলোচনা

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তির প্রতি আন্তরিক অঙ্গীকার’ দেখাতে রাশিয়ার প্রতি যৌথ আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ মধ্যস্থতাকারীরা। সম্প্রতি মস্কোতে হওয়া আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না আসার পর তাঁরা এ আহ্বান জানালেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দুই দিনের একটি বৈঠকে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি রুস্তেম উমেরভ।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হওয়া নির্ভর করছে ‘উত্তেজনা কমানো ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধের পদক্ষেপ’ গ্রহণে রাশিয়ার আগ্রহের ওপর।

আলোচনায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও। শনিবার তৃতীয় দিনের মতো এ আলোচনা চলার কথা রয়েছে।

এদিকে ফ্লোরিডার বৈঠকে উইটকফ ও উমেরভ শান্তিচুক্তির সহায়ক হবে এমন একটি নিরাপত্তা কাঠামোর বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দুজন টেকসই শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়েও আলোচনা করেন। তবে বিবৃতিতে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

ফ্লোরিডার বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলকে গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পররাষ্ট্র দূতের মধ্যে হওয়া আলোচনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা করেন উইটকফ। এরপরও মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে ‘কোনো আপসে পৌঁছানো যায়নি’ বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

ক্রেমলিন বলেছ, মার্কিনদের সঙ্গে ‘যতবার দরকার, ততবার আলোচনা’ চালিয়ে যেতে রাজি আছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউক্রেন ও দেশটির মিত্ররা।

গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘মস্কোর বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে এবং যুদ্ধটাকে দীর্ঘায়িত করতে আর কী কী অজুহাত দিয়েছেন পুতিন, তার পূর্ণ বিবরণ’ জানতে চান তিনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার প্রথম সংস্করণ ফাঁস হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছে, সেটা রাশিয়ার পক্ষে গেছে। এরপর সেই শান্তি পরিকল্পনার খসড়া পুনর্মূল্যায়নের জন্য চাপ দেয় কিয়েভ। পরবর্তী সময়ে ওই পরিকল্পনা কয়েক দফা পরিবর্তনও করা হয়, যদিও সাম্প্রতিক সংস্করণটি এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং ভূখণ্ড ছাড়সহ বেশ কয়েকটি বড় মতপার্থক্য এখনো দুই পক্ষের মধ্যে রয়ে গেছে।

রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকার দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড।

গতকাল শুক্রবার ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে এই সপ্তাহের মধ্যেই ওই অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে। অন্যথায় রাশিয়া ‘বলপ্রয়োগ করে এই (দনবাস) এলাকাগুলো মুক্ত করবে’।

ক্রেমলিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরের আগে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সামরিক কমান্ড পোস্টে রুশ সামরিক পোশাক পরা পুতিনকে ব্রিফ করছেন কমান্ডাররা। ভিডিওতে কমান্ডাররা দাবি করছেন, তাঁরা দোনেৎস্ক অঞ্চলের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক এবং আশপাশের অন্যান্য এলাকার দখল নিয়েছেন। যদিও রাশিয়ার এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইউক্রেন।

কিয়েভ ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করছে, ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া বা সমন্বিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করা।

তবে রাশিয়া এর কঠোর বিরোধিতা করছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনকে এই সামরিক জোটে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই।