Thank you for trying Sticky AMP!!

রাশিয়ার তেল কিনে বাইডেনের তত্পরতায় পানি ঢালছে ভারত

ভারতের জ্বালানি তেলের ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হয়

ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে একজোট করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্যেই রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি বন্ধসহ গুরুতর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তিনি। একই পথে হেঁটেছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ। সেখানে ব্যতিক্রম ভারত ও চীনসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ।

এশিয়ার প্রভাবশালী দুই দেশ চীন ও ভারত জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে। এখন রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের এমন পদক্ষেপ বাইডেনের প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

ভারতের জ্বালানি তেল খাত মূলত আমদানিনির্ভর। দেশটির চাহিদার ৮৫ শতাংশ তেলই আমদানি করা হয়। ২০২২ সালে দেশটির তেলের চাহিদা ৮ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছে। ফলে চলতি বছরে প্রতিদিন ৫১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেলের প্রয়োজন পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০ শতাংশ ছাড়ে নয়াদিল্লিকে তেল দিতে রাজি হয়েছে মস্কো।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার আল–জাজিরাকে বলেন, করোনার ধাক্কায় সংকটে রয়েছে ভারতের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাশিয়া থেকে ছাড়ে তেল আমদানির পরিমাণ বাড়াবে দেশটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ দেশটি থেকে ৩০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করা হয়েছে।

Also Read: কেন হামলা চালালেন পুতিন

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে সব সম্ভাবনাগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। রাশিয়াকে ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী হিসেবে আমি মনে করি না।’ আর তেলের চেয়ে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। ভারতের অস্ত্রশস্ত্রের বেশির ভাগই আমদানি করা হয় রাশিয়া থেকে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এসেছে দেশটি। হোয়াইট হাউসের ভাষ্য, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেসব বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে, তার থেকে দুই দেশের মধ্যে ঐক্য বেশি। এ ছাড়া কৌশলগত জোট ‘কোয়াডে’ রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর জোটের অপর দুই সদস্য জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে টোকিওতে বৈঠকের কথা রয়েছে।

এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গত ডিসেম্বরে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যের সংঘাতকে চলতি সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করেন। জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তাঁর দেশ গণতন্ত্রের মহৎ প্রচেষ্টায় যোগ দিতে প্রস্তুত।

Also Read: জনগণের ওপর ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে পশ্চিমারা অন্ধ: পুতিন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সবকিছুর মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ভারতীয় সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ককে চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় ভারতের প্রতি নাখোশ হয়েছিল হোয়াইট হাউস।

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার জন্য ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না, তা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বিষয়টি এখন ভিন্ন মাত্রায় দেখা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ভূরাজনৈতিক সমতা বজায় রাখা বাইডেনের জন্য যে কতটা জটিল হয়ে পড়েছে, তা ইঙ্গিত করছে ভারত-রাশিয়া তেল চুক্তি। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট মস্কোবিরোধী বলয়ে ভারতকে আনতে পারেননি, এরপরও এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে নয়াদিল্লিকে অন্যতম কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে ওয়াশিংটন।

ইউক্রেন ইস্যুতে নানা দেশের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় এর আভাসও পাওয়া গেছে। রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান না নিতে চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছে তারা।

Also Read: উল্টো রাশিয়ার সঙ্গে থাকার কথা জানাল তারা

যুদ্ধে বিধ্বস্ত কিয়েভ

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করছে জানতে চাইলে গত বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি বলেন, ‘আমরা একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলেছি।’ এর এক দিন আগেই ভারতের তেল আমদানি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে জেন সাকি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা হচ্ছে, যখন ইতিহাস লেখা হচ্ছে, তখন একটি দেশের নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভাবা উচিত।

পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংঘাতে সরাসরি কোনো পক্ষে ভারতের দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন দেশটিতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন জাস্টার। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ চলমান থাকলে নয়াদিল্লির ওপর বাড়তি চাপ আসবে বলে মনে করেন তিনি।

কেন জাস্টার বলেন, রাশিয়ার নৃশংসতা বাড়তে থাকার সঙ্গে ভারত ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। যেকোনো দেশের পক্ষেই সামনে এগিয়ে না আসা ও নিন্দা না জানানো কঠিন হবে।

Also Read: বৈঠকে বসবেন পুতিন-জেলেনস্কি?