ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

মোদি মণিপুরে যাচ্ছেন আগামীকাল, তার আগেই অভ্যর্থনার তোরণ ভাঙচুর

সব ধরনের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামীকাল শনিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে যাচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে মণিপুর রাজ্যের মুখ্য সচিব পুনিত কুমার গোয়েল এই ঘোষণা করেছেন। রাজ্যে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা দেবেন, যার মোট মূল্য সাড়ে আট হাজার কোটি রুপি। সরকারি বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতের একাধিক প্রচারমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।

নরেন্দ্র মোদির সফরের ঘোষণা করে মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে। গোয়েল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে এবং রাজ্যে উন্নয়নের প্রশ্নে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তবে নরেন্দ্র মোদি শুধু মণিপুর সফরেই যাচ্ছেন না, ১৩ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে তিনি পূর্ব ভারতে আরও একাধিক রাজ্যে যাবেন এবং প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। শনিবার তিনি মণিপুরের পাশের রাজ্য মিজোরামেও যাবেন। সেখানে তিনি কিছু প্রকল্পের ঘোষণা করবেন। এরপর মণিপুর সফরের পরে তিনি বিকেল পাঁচটা নাগাদ যাবেন গুয়াহাটিতে। সেখান থেকে রোববার যাবেন কলকাতায়, সেখান থেকে বিহারে। অর্থাৎ নির্বাচনমুখী প্রায় প্রতিটি রাজ্যই আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ঘুরবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা দেবেন।

মণিপুর সফর

অবশ্যই এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধানমন্ত্রী মণিপুর সফর। ২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর এখনো পর্যন্ত ২৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। জাতিগত দাঙ্গা শুরুর পর এই প্রথম মণিপুর রাজ্যে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মোদির এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মণিপুরকে রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় এনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদির এই সফরের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যে তিনি শুধু রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই অঞ্চলেই তাঁর সফর সীমাবদ্ধ রাখছেন না। তিনি যেমন মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল অর্থাৎ রাজধানী ইম্ফলে এক অনুষ্ঠানে পরিকাঠামোবিষয়ক প্রকল্প উদ্বোধন করবেন, তেমনি উপজাতি কুকি-অধ্যুষিত জেলা চুড়াচাঁদপুরেও যাবেন। সেখানেও তিনি উন্নয়নমূলক একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। রাজ্য প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে যে হোডিং লাগিয়েছে, সেখানে লেখা হয়েছে যে ইম্ফলের কাংলা ফোর্টের পাশাপাশি চুড়াচাঁদপুরের শান্তি ময়দান থেকেও মোদি তাঁর প্রকল্পগুলো ঘোষণা করবেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার নির্দিষ্টভাবে এই বার্তা দিল যে মণিপুর সমস্যার সমাধানে কোনো এক পক্ষকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে না মোদি সরকার।

তবে মোদির এই সফর নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রচণ্ড উদ্বেগে রয়েছে, বিশেষত গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে। গত রাতে দুষ্কৃতকারীরা একাধিক স্থানে ভাঙচুর চালায়। রাজধানী ইম্ফল থেকে দক্ষিণে চুড়াচাঁদপুরে যাওয়ার রাস্তায় যে তোরণগুলো প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য বানানো হয়েছিল, তার বেশ কিছু ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণ করবে, তার কাছাকাছিই এ তোরণগুলো ভাঙা হয়েছে। যে শান্তি ময়দানে প্রধানমন্ত্রী যাবেন, সেই স্থানের দূরত্বও এখান থেকে বেশি নয়।

বিষয়টিকে একটি নিরাপত্তার বিঘ্ন হিসেবে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে এবং প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে থাকাকালীন যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা মাথায় রেখে মণিপুরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন জাতিগত কুকি-জো সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।