
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সমুদ্রসৈকতে বন্দুক হামলার পর নিজেদের বিরুদ্ধে কয়েকটি শত্রুদেশের অপপ্রচার ও মিথ্যা খবর রটানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। আজ বুধবার বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ নিন্দা জানান।
সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে গত রোববারের (১৪ ডিসেম্বর) হামলাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ও তীব্র নিন্দাযোগ্য’ বলে মন্তব্য করে তারার বলেন, ‘পাকিস্তানকে কলঙ্কিত করার জন্য কয়েকটি শত্রুদেশ মিথ্যা ও ইচ্ছাকৃত অপতথ্যের প্রচার শুরু করেছিল।’
তারার বলেন, ‘পাকিস্তান বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্মুখসারির দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং এখনো সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলা করছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়া যখন নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা করছে, ঠিক তখনই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।’
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি স্পষ্ট ভাষায় সিডনির বন্ডাই সৈকতে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও জনগণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি যোগ করেন, অনেক বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়ার মানুষের কষ্ট পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে দুই বন্দুকধারী হামলা চালায়। ইহুদিদের একটি ধর্মীয় উৎসবকে নিশানা করে এ হামলা চালানো হয়। এতে এক শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হন।
দুই বন্দুকধারীর একজন নাভিদ আকরাম। অন্যজন তাঁর বাবা সাজিদ আকরাম। ৫০ বছর বয়সী সাজিদ ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। অপর দিকে ২৪ বছর বয়সী নাভিদকে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার পরপরই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নাভিদকে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বলে দাবি করে। কিন্তু শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকার হামলাকারীদের নাম ছাড়া অন্য পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। তবে সাজিদকে জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পুলিশ জানায়, বন্ডাই সৈকতে হামলাকারীদের একজন ভারতীয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই হামলাকারীর মধ্যে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তিনি ভারতের হায়দরাবাদ শহর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। তবে তাঁর ‘উগ্রবাদী চিন্তাধারা’ সম্পর্কে জানে না ভারতে থাকা পরিবার।
ভারতীয় পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাজিদের পরিবার তাঁর ‘উগ্রপন্থী চিন্তাধারার’ বিষয়ে জানত না বলেই মনে হয়েছে। ১৯৯৮ সালে তিনি ভারত ছাড়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে ‘নেতিবাচক’ কিছু পায়নি পুলিশ। সাজিদ ও তাঁর ছেলে নাভিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই বা তেলেঙ্গানার স্থানীয় কোনো প্রভাব নেই।
এ প্রসঙ্গ নিয়ে আজ মুখ খোলেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী তারার। তিনি ভারতসহ আরও কয়েক দেশের সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘অসত্য’ সংবাদ প্রচারের অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, এই প্রচার সংঘবদ্ধভাবে করা হয়েছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এক হামলাকারীকে শনাক্ত করতে কেন ব্যর্থ হয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারার। অথচ এ ঘটনায় ভারতসহ যেসব দেশের সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে, সেসব দেশের জাতীয় ডেটাবেজ ও মুখমণ্ডল শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে।