
দেশের ১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে যেখানে ‘সবচেয়ে ভালো চুক্তি’ পাওয়া যাবে, ভারত সেখান থেকেই তেল কেনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার।
বিনয় কুমার এমন এক সময়ে এ বক্তব্য দিলেন, যখন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য শাস্তিস্বরূপ আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্কও (২৫ শতাংশ) রয়েছে।
আগামীকাল বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য প্রবেশে এ ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেন, ট্রাম্প ভারতের ওপর দ্বিতীয় ধাপে যে শুল্ক আরোপ করেছেন, সেটার লক্ষ্য ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার ওপর বাধ্যতামূলকভাবে ‘আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক চাপ’ তৈরি করা।
২০২৪ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই ছিল রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল। ২০২১ সালে এ হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত সস্তায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়ে দেয়। এর জেরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং একটি সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে এ দুই দেশের মধ্যে আলোচনাতেও এটি প্রভাব ফেলে।
২০২৪ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই ছিল রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল। ২০২১ সালে এ হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে আদতে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে দেশটিকে সহায়তা করছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে দিল্লি।
বিনয় কুমার রোববার রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেন, বাজার প্রভাবকের ওপর ভিত্তি করে ভারত বাণিজ্য করে এবং দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখনো সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়।
বাজার প্রভাবকের ওপর ভিত্তি করে ভারত বাণিজ্য করে এবং দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখনো সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়।বিনয় কুমার, রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত
এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত আবারও বলেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ‘অন্যায্য, অবিবেচনাপূর্ণ ও অযৌক্তিক’।
রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর দেশের রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন।
গত শনিবার এস জয়শঙ্কর বলেন, ওই সব মানুষ, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যবসাবান্ধব প্রশাসনের হয়ে কাজ করেন, তাঁরাই আবার ব্যবসার কথা বলে অন্যদের দিকে অভিযোগের (রাশিয়া–ভারত তেলবাণিজ্য) আঙুল তুলছেন, এটা হাস্যকর।
জয়শঙ্কর বিশেষভাবে উল্লেখ করে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো চীনের ওপর দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক আরোপ করেনি। অথচ চীন রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক আরোপ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তারা এখনো রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজস্ব কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি যে কমাবে না, এটা তারই ইঙ্গিত।
ইউক্রেনের সঙ্গে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। অন্যদিকে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একটি রাশিয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত সস্তায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়ে দেয়। এর জেরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং একটি সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাতেও প্রভাব ফেলেছে।
দিল্লি বারবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছে। তবে দেশটি পশ্চিমের চাপের মধ্যেও রাশিয়াকে প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো থেকে বিরত রেখেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালে ইউক্রেন সফর করেছিলেন। সে সময়ে ভারত ‘দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সব রকম অবদান রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করে’।
এদিকে ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্দর পোলিশচুক রোববার স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শিগগিরই ভারতে সফর আসতে পারেন। তবে তারিখ এখনো নিশ্চিত হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও এ বছর কোনো একসময় ভারত সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই সব মানুষ, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যবসাবান্ধব প্রশাসনের হয়ে কাজ করেন, তাঁরাই আবার ব্যবসার কথা বলে অন্যদের দিকে অভিযোগের (রাশিয়া–ভারত তেলবাণিজ্য) আঙুল তুলছেন, এটা হাস্যকর।এস জয়শঙ্কর, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার ট্রাম্পের প্রচেষ্টা নিয়ে রোববারও দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন ভ্যান্স। তিনি বলেন, তিনি (ট্রাম্প) রাশিয়াকে স্পষ্ট করে বোঝাতে চাইছেন যে যদি তারা হত্যা বন্ধ করে, তবে আবারও বিশ্ববাজারে ফেরার সুযোগ পাবে। কিন্তু হত্যা বন্ধ না করলে তাদের বিচ্ছিন্নই থাকতে হবে।