ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) লাগাম টানা না হলে বিরোধীরা বিহার বিধানসভা নির্বাচন বর্জনের রাস্তায় হাঁটতে পারে। বিহারের প্রধান বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব এই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন।
বিরোধী জোটের অন্য শরিকেরা অবশ্য এখনই এ বিষয়ে মনস্থির করতে রাজি নয়। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেন, তা তাঁরা আগে দেখে নিতে চান। চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভার ভোট।
সুপ্রিম কোর্টে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ জুলাই। মামলার প্রথম দিনের শুনানিতে প্রকৃত ভোটার নির্ধারণে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ডকে নথি হিসেবে মান্যতা দেওয়ার যে পরামর্শ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছিলেন, ইসি তা নাকচ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে ইসি জানিয়েছে, ওই তিন কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, অনেক বিদেশিই অবৈধভাবে ওই সব কার্ড হাসিল করেছে।
বিহারে ইসি যে নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনপ্রক্রিয়া চালু করেছে, শুক্রবার ২৫ জুলাই তার শেষ দিন। এই দিনের মধ্যেই নির্দিষ্ট নথি জমা দিতে হবে। ইসি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ১ আগস্ট। সময়সীমা শেষ হওয়ার এক দিন আগে ইসির হিসাবে ৬১ লাখ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ২১ লাখ ৬০ হাজার জন মৃত, ৩১ লাখ ৫০ হাজার রাজ্য ছেড়ে ‘পাকাপাকিভাবে’ অন্যত্র চলে গেছেন এবং ৭ লাখের নাম দুই জায়গায় নথিবদ্ধ। ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও ১ লাখ ভোটারের ‘হদিস’ নেই। এক দিন পর এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা। রাজ্যে মোট প্রাপ্তবয়স্ক ভোটার প্রায় ৮ কোটি।
ইসি এভাবেই লাগামহীন থাকলে ও নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোটার তালিকা সংশোধন করলে বিরোধীরা ভোট বর্জনের রাস্তায় হাঁটতে পারে। গত বুধবার আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রথমবার সেই ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, যেভাবে ভোট চুরির রাস্তায় ইসি হাঁটছে, তার প্রতিকার না হলে ভোট বর্জনের কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবও তিনি দিয়ে রেখেছেন।
পরের দিন, বৃহস্পতিবার আরও একবার সেই ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোট বর্জন বিকল্প পথ হিসেবে আমরা খোলা রাখছি। সময় এলে সবার সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা চলছে, তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়।’
তেজস্বী ভোট বর্জনের ইঙ্গিত দিলেও কংগ্রেস ও বাম শরিকেরা এখনই ওই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে প্রস্তুত নয়। সিপিআই (এমএল) লিবারেশন নেতা দীপংকর ভট্টাচার্য, বিহারের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণ আল্লাবরুসহ অন্যরা সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। কংগ্রেস নেতা বলেছেন, তাঁদের সামনে সব বিকল্পই খোলা আছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিরপেক্ষ না হলে উপযুক্ত বিকল্প বেছে নেওয়া হবে। স্পষ্টতই সুপ্রিম কোর্টের রায় ও ইসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁরা দেখে নিতে চান। ন্যায়বিচারের আশা ছাড়তে এখনই তাঁরা রাজি নন।
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে বিতর্কে প্রথমবার মুখ খুললেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মৃত ও ‘বিদেশি’ ভোটারদের কোন যুক্তিতে ভোটার তালিকায় রেখে দেওয়া হবে, তা তাঁর বোধোগম্য হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, ভোটার তালিকা হলো সফল গণতন্ত্রের ভিত্তি।
বিরোধীরা ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে আপত্তি একেবারেই তোলেনি। আপত্তি দুটি ক্ষেত্রে। প্রথমত, রাজ্য বিধানসভার ভোটের মাত্র ছয় মাস আগে এই বিপুল কাজ এত দ্রুত কেন করা হচ্ছে? কেন মাত্র এক মাসের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে? আগে কেন এই কাজে হাত দেওয়া হয়নি? দ্বিতীয়ত, নাগরিকত্ব প্রমাণের কাজ কেন নির্বাচন কমিশন হাতে নিয়েছে? কমিশনের দেওয়া ভোটার কার্ডের ভিত্তিতে যাঁরা এত দিন ভোট দিলেন, সেই কার্ড কেন প্রকৃত ভোটারের নথি হিসেবে গ্রাহ্য করা হচ্ছে না? কেনই–বা সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ অগ্রাহ্য করা হচ্ছে?