পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে গোপাল ভাঁড়ের আবক্ষ মূর্তি
পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে গোপাল ভাঁড়ের আবক্ষ মূর্তি

পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে গোপাল ভাঁড়ের ‘হত্যা রহস্য’

এবার পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেস মাঠে নামাল ঐতিহাসিক হাসির রাজা গোপাল ভাঁড়কে। যদিও নদীয়ার কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ্যসভায় গোপাল ভাঁড় ছিলেন বলে অনেকে মনে করলেও তার ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। বিতর্কেরও শেষ নেই।

সেই বিতর্কের মধ্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন কৃষ্ণনগর আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকেরা। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র আর বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণনগরের রাজার বর্তমান বংশধর ‘রানি মা’। কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের বর্তমান রানি।

সেই রানি মার বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, কৃষ্ণনগরের গৌরব গোপাল ভাঁড়কে হত্যা করেছিলেন তৎকালীন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। আর এই অভিযোগ নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েন তৃণমূলের নেতা–মন্ত্রীরা।

গতকাল শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস নতুন করে অভিযোগ করেন, গোপাল ভাঁড়কে হত্যা করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র রাজা। আর এই কথা নির্বাচনী ময়দানে নিয়ে আসেন তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

এদিকে বসে নেই রানি মা অমৃতা রায়। তিনি বলেন, ‘সব মিথ্যে। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, উনি প্রমাণ দিক ওই হত্যার।’

রানি মা প্রশ্ন তোলেন, ‘উজ্জ্বল বিশ্বাস কী করে জানলেন এই হত্যাকাণ্ডের কথা। প্রমাণ দিক। নইলে আমরা আইনের পথে যাব। কারণ, আমাদের পরিবারের থেকে উনি তো বেশি জানেন না। প্রমাণ দেখান। নোংরামি করবেন না। পরিবার নিয়ে এসব কথা বলা মানহানি সমতুল্য।’

যদিও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেছেন, ‘আমি মনে করি গোপাল ভাঁড়কে হত্যার পেছনে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জড়িত ছিলেন।’

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিতর্ক ছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর রাজসভায় গোপাল ভাঁড় নামে কোনো সভাসদ ছিল কি না? ঐতিহাসিকেরাও তা প্রমাণ করতে পারেননি।

ঐতিহাসিক রজত রায় বলেছেন, ‘আমি অন্তত কোথাও গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্বের কথা জানতে পারিনি। আমার মনে হয়, এটা উদ্ভাবিত এবং সেটা খুব বেশিদিন আগের নয়।’

আবার আরেক ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্র বলেছেন, ‘গোপাল ভাঁড়কে ষড়যন্ত্র করে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হত্যা করেছিলেন—এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় গোপাল ভাঁড় নামে কোনো চরিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এই গোপাল ভাঁড়ের সাহিত্যে আগমন উনিশ শতক থেকে। এখন রাজনীতির গরুকে গাছে তোলার কর্মকাণ্ড চলছে। তাই আজ অনেক কিছুই বলা হচ্ছে।’

কৃষ্ণনগর আসন থেকে গতবার জিতেছিলেন এবারের দলীয় প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। তবে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অর্থের বিনিময়ে বিরোধীদের ঘায়েল করার জন্য সংসদে প্রশ্ন করতেন।