জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পরমাণু বোমার কার্টুন দেখাচ্ছেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি দাবি করেন, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্ত। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২, নিউইয়র্ক
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পরমাণু বোমার কার্টুন দেখাচ্ছেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি দাবি করেন, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্ত। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২, নিউইয়র্ক

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ৩০ বছর ধরে একই কথা বলে আসছেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তিন দশকের বেশি সময় ধরে বারবার একটি কথা বলে আসছেন, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে।

নেতানিয়াহু কখনো বলেছেন কয়েক বছর, কখনো বলেছেন কয়েক মাসের মধ্যে ইরান পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে। কিন্তু কখনোই তাঁর সেই কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের সদস্য হিসেবে ১৯৯২ সালে নেতানিয়াহু এক অধিবেশনে বক্তব্য দেন। ওই অধিবেশন থেকেই তিনি দাবি করে আসছেন, তেহরান মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম হবে।

১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্যে নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেছিলেন। ওয়াশিংট, ১৯৯৬ সালের জুলাই

ওই বছর নেসেটের অধিবেশনে নেতানিয়াহু বলেন, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ইরান নিজেরাই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

নেতানিয়াহু ১৯৯৫ সালে তাঁর লেখা বই ‘ফাইটিং টেরোরিজম’ বইয়েও উল্লেখ করেছিলেন।

নেতানিয়াহুর এই ‘আসন্ন হুমকির বোধ’ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরিতে বেশ প্রভাব ফেলেছে। ২০০২ সালে তিনি মার্কিন একটি কংগ্রেশনাল কমিটির সামনে বক্তব্য দেন। তখনও তিনি দাবি করেন, ইরাক ও ইরান—দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তখন তিনি ইরাকে হামলা চালাতেও যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দেন।

এর কিছুদিন পরই গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত রয়েছে—এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। কিন্তু পরে সেখানে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি।

২০০৯ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক গোপন তারবার্তায় দেখা যায়, নেতানিয়াহু কংগ্রেস সদস্যদের বলেন, ইরান এক-দুই বছরের মধ্যেই পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে।

ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর প্রতি ইরানে বোমা না মারার দাবি জানানো হয়। ২০১২ সালের ২৪ মার্চ, তেল আবিব

এর তিন বছর পর ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নেতানিয়াহু একটি কার্টুন বোমার ছবি দেখিয়ে বলেন, পরের বসন্তে, সর্বোচ্চ আগামী গ্রীষ্মেই ইরান মাঝারি মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শেষ করে পরমাণু বোমা তৈরির চূড়ান্ত ধাপে চলে যাবে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উগ্রবাদী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রথম সতর্কবার্তা দেওয়ার পর ৩০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিদের সংগঠন আইপ্যাকে বক্তৃতাকালেও তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ, ওয়াশিংটন

গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানে সরাসরি হামলা চালিয়েছে। আর নেতানিয়াহু এখনো বলছেন, যদি ইরানকে থামানো না যায়, তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি ‘কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে’।

তবে এসব দাবির বিপরীতে এই বছরের গোড়ার দিকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।

তবুও নেতানিয়াহু ৩০ বছর আগে যেমন বলেছিলেন, এখনো তাঁর বার্তা তেমনই থাকছে। এ যেন গোয়েন্দা তথ্য বা কূটনৈতিক ঘটনাবলির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক দীর্ঘস্থায়ী সতর্কবার্তা।