জিম্মিদের ছবি হাতে ইসরায়েলের তেল আবিবে গতকাল শনিবার মিছিল বের করা হয়। হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর বাকি জিম্মিদের মুক্তির অপেক্ষায় আছেন ইসরায়েলিরা। ১১ অক্টোবর, ২০২৫
জিম্মিদের ছবি হাতে ইসরায়েলের তেল আবিবে গতকাল শনিবার মিছিল বের করা হয়। হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর বাকি জিম্মিদের মুক্তির অপেক্ষায় আছেন ইসরায়েলিরা। ১১ অক্টোবর, ২০২৫

গাজা থেকে জিম্মিমুক্তি শুরু কখন, কীভাবে

মিসরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি সম্মেলন শুরুর আগেই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে এএফপিকে জানিয়েছেন হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আগামীকাল সোমবার সকাল থেকে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হবে।

গাজায় যুদ্ধ অবসানে সম্প্রতি একটি শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এটির আলোকেই গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এখন মিসরে তাঁর নেতৃত্বে ওই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের হামলা চালান হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে।

পাল্টা জবাবে ওই দিনই গাজায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েল। যুদ্ধের দুই বছরে কয়েক দফা যুদ্ধবিরতিতে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির হাতে এখনো ৪৭ জনের বেশি জিম্মি রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হামাস ও ইসরায়েল। জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেবে।

গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে হামাস কর্মকর্তা ওসামা হামদান এএফপিকে বলেন, ‘সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে জিম্মি–বন্দী বিনিময় শুরু হওয়ার কথা।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার বিভিন্ন শহর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে সরে গেলে সেখানে মিসর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাহিনী নিয়ে গঠিত বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

সোমবার বিকেলে লোহিত সাগরের তীরবর্তী শার্ম আল-শেখ রিসোর্টে ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির যৌথ সভাপতিত্বে শান্তি সম্মেলন শুরু হবে। মিসরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ২০টির বেশি দেশের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেবেন।

প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে আরও বলা হয়, এ বৈঠকের লক্ষ্য হলো গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ঘটানো, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা করা।

সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার সকাল থেকে ইসরায়েলি জিম্মি–ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময় শুরু হওয়ার কথা।
—ওসামা হামদান, হামাস কর্মকর্তা

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ অংশ নেবেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্মেলনে অংশ নেবেন কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে হামাসের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে থাকবেন না। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হোসাম বাদরান বলেন, হামাস সম্মেলনে অংশ নেবে না। কারণ, যুদ্ধবিরতির আলোচনাকালে হামাস মূলত কাতার ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে কাজ করেছে।

সোমবার বিকেলে লোহিত সাগরের তীরবর্তী শার্ম আল-শেখ রিসোর্টে ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির যৌথ সভাপতিত্বে শান্তি সম্মেলন শুরু হবে।

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই ও কার্যকর হওয়া এক স্পষ্ট অগ্রগতি। তা সত্ত্বেও, মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এখনো একটি জটিল কাজ বাকি রয়েছে। তাঁদের একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং গাজার শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি করা।

বাদরান বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নে ‘অনেক জটিলতা রয়েছে এবং এটা অনেক কঠিন হবে’।

নাম প্রকাশ না করে আরেক হামাস কর্মকর্তা বলেন, হামাসের অস্ত্রত্যাগ করার প্রশ্নই আসে না।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার বিভিন্ন শহর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে সরে গেলে সেখানে মিসর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাহিনী নিয়ে গঠিত বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি কমান্ড সেন্টার থেকে এ কাজের সমন্বয় করা হবে।

ইতিমধ্যে, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার গাজা পরিদর্শন করেছেন।

শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এরপর থেকে সেখানে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের বাড়িঘরে ফেরা শুরু করেছেন। যদিও ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের অধিকাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

জিম্মি ও বন্দী মুক্তি

সোমবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে হামাস জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে বলে জানা গেছে। এই জিম্মিদের মধ্যে কয়েকজন জীবিত রয়েছেন। জীবিত ও মৃত জিম্মিরা ছাড়াও ২০১৪ সালে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির দেহাবশেষ ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

এর বিনিময়ে, ইসরায়েল ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন। পাশাপাশি গাজার ১ হাজার ৭০০ বাসিন্দাকেও মুক্তি দেওয়া হবে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের আটক করে।

গতকাল ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, মুক্তি দেওয়ার আগে ২৫০ বন্দীকে দুটি কারাগারে জড়ো করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি গাজা নগরীতে তাঁদের বাড়িঘরে ফিরেছেন।