
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে আবার হামলা না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে নিজেদের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে রাজি তেহরান। গতকাল শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এ কথা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থার সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার সম্পর্ক ‘নতুন রূপে’ এগোবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে আরাগচি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলচনায় ইরানের আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, প্রথমেই সুস্পষ্টভাবে এ নিশ্চয়তা দিতে হবে যে হামলার ঘটনা আবার ঘটবে না। আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোকে আরও জটিল ও কঠিন করে তুলেছে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা।
ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য বলে দাবি করে আসছে তেহরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দাবি—ইরানের লক্ষ্য পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা। এমনই দাবির মুখে গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে টানা ১২ দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। এরই মধ্যে ২১ জুন ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের হামলায় আগে পরমাণু প্রকল্প নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে হামলার পর আলোচনা স্থগিত করে তেহরান। হামলার জেরে জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে অবনতি হয়। আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলতি মাসের শুরুতে একটি আইনে সই করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
তবে আইএইএর সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতার সম্পর্ক ‘শেষ হয়ে যায়নি’ বলে শনিবার মন্তব্য করেছেন আব্বাস আরাগচি। তিনি বলেন, এই সম্পর্ক এখন ‘নতুন রূপে’ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। জাতিসংঘের সংস্থাটি পরমাণু স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে ইরানের ‘নিরাপত্তা’ উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তাও আমলে নিতে হবে।
২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দেশটির সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির শর্ত ছিল—ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে। ওই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ও পরে ইরান বের হয়ে যায়।
চুক্তির একটি ধারা অনুযায়ী, ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করলে দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে। তবে শনিবার আব্বাস আরাগচি সতর্ক করে বলেছেন, দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে তেহরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের ভূমিকা শেষ হয়ে যাবে।