যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো (ওপরে বাঁ থেকে)
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো (ওপরে বাঁ থেকে)

ট্রাম্পের প্রস্তাব ও হামাসের আংশিক সম্মতি নিয়ে বিশ্বনেতারা কে কী বললেন

গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পরিকল্পনা এবং তাতে হামাসের আংশিক রাজি হয়ে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনার প্রশংসা করেছেন বিশ্বনেতারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বরাতে সংস্থাটি বলেছে, হামাসের বিবৃতি তাঁকে ‘উৎসাহিত করেছে’।  তিনি সবপক্ষকে গাজা যুদ্ধ অবসানে ‘এ সুযোগ কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, হামাসের মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি আমাদের নিয়ে এসেছে।’

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের আংশিক রাজি হয়ে বিবৃতি দেওয়া এবং সব জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসরায়েলকে গাজায় অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার যে আহ্বান ট্রাম্প জানিয়েছেন, কাতার সেটিরও প্রশংসা করেছে।

মিসরও হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি ও স্থিরতা’ প্রতিষ্ঠায় মার্কিন নেতার ‘বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির’ প্রশংসা করেছে। এ ইতিবাচক অগ্রগতি গাজায় আক্রমণ বন্ধ করতে সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব গ্রহণে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে দেশটি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘এখন সবার কাছে মূল অগ্রাধিকার হতে হবে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো, যা সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির পথ তৈরি করবে।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় আগেই সম্মতি জানান। হামাসকে সম্মতি জানানোর জন্য আগামীকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

গাজা যুদ্ধ বন্ধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস থেকে একটি ২০ দফার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাবে উপত্যকাটিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, হামাসের কাছে থাকা সব জিম্মির মুক্তি, বিনিময়ে ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে সরে যাওয়া ও হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পরিকল্পনায় বলা হয়, গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না, আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হবে।

পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দরজাও খোলা রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় আগেই সম্মতি জানান। হামাসকে সম্মতি জানানোর জন্য আগামীকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এখন সবার কাছে মূল অগ্রাধিকার হতে হবে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো, যা সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির পথ তৈরি করবে।
জর্জিয়া মেলোনি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী

গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প হামাসকে তাঁর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য ওই সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, প্রস্তাব মেনে না নিলে হামাসকে ‘নরকযন্ত্রণা’ ভোগ করতে হবে। ট্রাম্পের এ হুমকির কয়েক ঘণ্টা পর হামাস আংশিকভাবে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, ক্যানবেরা গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনার অগ্রগতিকে স্বাগত জানায়। তিনি হামাসকে ট্রাম্পের পরিকল্পনা গ্রহণ, অস্ত্রসমর্পণ ও বাকি জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, তিনি এবার ট্রাম্পের সঙ্গে একমত। কারণ, তিনি হত্যাকাণ্ডের সমাপ্তি চেয়েছেন।

পেত্রো আরও বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফিলিস্তিনের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে তাঁর সেনা মোতায়েন করেন, তবে সেই সেনাদলের সঙ্গে কলম্বিয়ার সেনাও যোগ দেবে।
গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে প্রচেষ্টা চলছে তার প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মোদি লেখেন, ‘জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাব্য ইঙ্গিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ভারত স্থায়ী ও ন্যায়সংগত শান্তি অর্জনের সব প্রচেষ্টার প্রতি জোরালো সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’

বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে জীবিত আছেন ২০ জন।

তবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তাঁর সরকার এখনো ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় পোষণ করে। আজ শনিবার তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শান্তি পরিকল্পনা নিখুঁত নয় এবং আমরা এর অনেক দিকের সঙ্গে একমত নই। কিন্তু আমাদের বর্তমান অগ্রাধিকার, ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা করা।’

এদিকে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত নিয়ে আরও আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবে উল্লিখিত বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া মেনে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি আছে হামাস। তবে বন্দিবিনিময়ের জন্য মাঠপর্যায়ের শর্ত মানতে হবে।

হামাসের মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা আমাদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
কিয়ার স্টারমার, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী

বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে জীবিত আছেন ২০ জন।

গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার-সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে হামাস আরও আলোচনা করতে চায়। সংগঠনটি বলেছে, বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।