
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানকে গত মে মাসে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুলে নেওয়া না হলে তাঁকে (করিম খান) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ‘ধ্বংস’ করে দেওয়া হবে।
আইসিসির আসামিপক্ষের আইনজীবী ও ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নিকোলাস কফম্যান এ হুমকি দিয়েছিলেন। আদালতে নথিভুক্ত হওয়া একটি বৈঠকের নোট থেকে মিডল ইস্ট আই এসব তথ্য জানতে পেরেছে।
বৈঠকে করিম খানকে কফম্যান একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি ছিল, করিম খান যেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো ‘গোপনীয়’ শ্রেণিতে ফেলতে আদালতে আবেদন করেন। আর তাতে ইসরায়েল সেই অভিযোগের বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবে এবং গোপনে সেগুলো চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এর ফল প্রকাশ্যে আসবে না।
কফম্যান তখন বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর আইনি পরামর্শকের সঙ্গে কথা বলে ও সেখান থেকে অনুমোদন নিয়েই প্রস্তাবটি দিয়েছেন।
প্রস্তাবের পাশাপাশি কফম্যান হুঁশিয়ারিও দেন। বলেন, পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতির পক্ষে প্রচার চালানোর কারণে বেন গভির ও স্মোট্রিচের বিরুদ্ধে যদি আরও পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়, তবে আলোচনার জন্য আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।
করিম খানকে সতর্ক করে কফম্যান বলেন, ‘তাঁরা আপনাকে শেষ করে দেবে ও আদালতকে ধ্বংস করে দেবে।’
করিম খান ও তাঁর স্ত্রী—দুজনই ওই বৈঠকে ছিলেন। তাঁরা দুজনই এ কথাগুলোকে হুমকি হিসেবে নিয়েছিলেন।
কফম্যান মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আমি যে করিম খানকে তাঁর ভুল থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে বলেছি, সে কথা অস্বীকার করব না। তবে ইসরায়েলি সরকারের পক্ষে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই এবং এমন কোনো প্রস্তাবও দিইনি।’
কফম্যানের দাবি, তিনি করিম খানকে বলেছিলেন যে আরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। আর তা আদালতকে ধ্বংসের মুখে ফেলতে পারে।
এ ব্যাপারে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল মিডল ইস্ট আই। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
বৈঠকের সময় করিম খানের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তদন্ত চলছিল। দুই সপ্তাহ পর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে আরও গুরুতর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশিত হলে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে চলে যান। এর আগে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
করিম খানের বিরুদ্ধে যখন জাতিসংঘের তদন্ত চলছে, তিনি ইসরায়েল সরকারের আরও কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে গুঞ্জন আছে।
করিম খান তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন।