সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রান্সজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০ ডিসেম্বর ২০২০, অ্যাডেন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রান্সজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০ ডিসেম্বর ২০২০, অ্যাডেন

ইয়েমেনে আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ওপর সৌদি আরবের বোমা হামলা

ইয়েমেনের বন্দরনগরী মুকাল্লায় আজ মঙ্গলবার বোমা হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর জন্য অস্ত্রের একটি চালান পাঠানো হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এই হামলা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’–এর (এসটিসি) সৌদি আরবের উত্তেজনা নতুন করে বাড়িয়ে দিল। একই সঙ্গে এটি রিয়াদ ও আবুধাবির সম্পর্কের ওপরও চাপ সৃষ্টি করল।

ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এক দশক ধরে চলা যুদ্ধে এই দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় (এসপিএ) প্রকাশিত এক সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দর থেকে আসা জাহাজগুলো মুকাল্লায় পৌঁছানোর পর এই বিমান হামলা চালানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাহাজগুলোতে ট্র্যাকিং ডিভাইস (অবস্থান শনাক্তকারী যন্ত্র) বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারা এসটিসির বাহিনীর জন্য প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও সামরিক যান খালাস করছিল। এসব অস্ত্র স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেওয়ায় সৌদি জোটের বিমান বাহিনী আজ মঙ্গলবার সকালে অস্ত্র ও যানবাহনগুলো লক্ষ্য করে একটি সীমিত বিমান হামলা চালিয়েছে।’

হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না বা সৌদি আরব ছাড়া অন্য কোনো দেশ এতে অংশ নিয়েছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে সৌদি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কোনো বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা রাতের আঁধারে এই হামলা চালিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এই হামলার বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের টেলিভিশন চ্যানেল (এআইসি) হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ‘গ্রিনল্যান্ড’ নামের একটি জাহাজ লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি ২২ ডিসেম্বর আমিরাতের ফুজাইরাহতে ছিল এবং গত রোববার মুকাল্লায় পৌঁছায়। দ্বিতীয় আরেকটি জাহাজের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইয়েমেনের বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আল-বাশা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও উদ্ধৃত করে জানান, জাহাজ আসার পর মুকাল্লায় নতুন সাঁজোয়া যান চলাচলের দৃশ্য দেখা গেছে। এ ঘটনার পর দুপক্ষই সতর্কভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে। আরব আমিরাত থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ এখন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, সৌদি আরব ইয়েমেনের আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করে।

সৌদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, মুকাল্লা শহরে বেশ কিছু সাঁজোয়া যান একটি নির্দিষ্ট এলাকার দিকে যাচ্ছে।

মুকাল্লা শহরটি ইয়েমেনের হাদরামাউত প্রদেশে অবস্থিত, যা সম্প্রতি বিচ্ছিন্নতাবাদী কাউন্সিল দখলে নিয়েছে। ২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করার পর থেকে এডেন শহরটি হুতিবিরোধী শক্তির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

এর আগে গত শুক্রবারও সৌদি আরব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সতর্ক করতে বিমান হামলা চালিয়েছিল। সৌদি আরব চায়, তারা যেন হাদরামাউত ও মাহরা প্রদেশ থেকে পিছু হটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বর্তমানে দক্ষিণ ইয়েমেনের পতাকা ব্যবহার করছে এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইয়েমেন যেমন আলাদা দুটি দেশ ছিল, তারা আবারও তেমন আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি তুলছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই কর্মকাণ্ডের ফলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। দুই দেশ ওপেকের সদস্য এবং ব্যবসায়িক ও আঞ্চলিক আধিপত্যের ক্ষেত্রে তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।